দেশের শীর্ষস্থানীয় নিত্য-ব্যবহার্য ও ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড (ইউবিএল), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) -কে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্লাস্টিক সার্কুলারিটির বিষয়টি বোঝার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য গবেষণা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন উন্নয়নে ব্র্যান্ড স্পন্সরশিপ প্রদান বিষয়ক দুটি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রকল্প দুটি ইউনিলিভারের ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া পার্টনারশিপের অধীনে বাস্তবায়ন করা হবে।
অধ্যাপক শেখ মোর্শেদ জাহান, অধ্যাপক ড. মেলিতা মেহজাবীন, অধ্যাপক ড. খালেদ মাহমুদ, অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল কবির, কানিজ ফাতিমা ও অর্পিতা ঐশ্বর্য সহ আইবিএ- এর স্বনামধন্য শিক্ষকদের একটি টিম প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহার ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক গবেষণাটি পরিচালনা করবেন।
প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারকারীদের চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধান খুঁজে বের করাই এই গবেষণার লক্ষ্য। এর মাধ্যমে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উৎপাদনকারী ও ভোক্তাদের দায়িত্বের ওপর গুরুত্ব প্রদান করা হবে। বাংলাদেশের বাজারে প্লাস্টিকের সার্কুলারিটির মূল্যায়নের বিষয়টি পর্যালোচনার পাশাপাশি স্থানীয় প্রেক্ষাপটের সঙ্গে মানানসই সম্ভাব্য মডেলগুলোকেও চিহ্নিত করবে। এ ছাড়াও, গবেষণাটি বর্তমান অবকাঠামোর চ্যালেঞ্জগুলো খুঁজে বের করে প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারের জন্য একটি টেকসই মডেল তৈরিতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর করণীয় সম্পর্কে সম্ভাব্য সমাধান প্রদান করবে।
সম্মিলিত দক্ষতা ও উদ্ভাবনী পদ্ধতি ব্যবহার করে, টেকসই চর্চা বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশে প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারযোগ্য ভবিষ্যত গঠনে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন করতে একসঙ্গে কাজ করবে আইবিএ’র শিক্ষকরা।
যৌথ উদ্যোগের বিষয়ে ইউনিলিভার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ আখতার বলেন, ইউনিলিভারে, আমাদের ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সাসটেইনেবিলিটি। বিশ্বের মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য আমাদের বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে, আমরা ২০২০ সাল থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নানা ধরনের উদ্ভাবনী পদ্ধতি পরিচালনা করে আসছি। এরমধ্যে রয়েছে প্যাকেজিংয়ে উদ্ভাবন, প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার জন্য একটি টেকসই মডেল তৈরি করা এবং মাল্টি-স্টেকহোল্ডার সংলাপ এবং নলেজ শেয়ারিং এর মতো প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। যেহেতু আমরা একটি টেকসই প্লাস্টিক ম্যানেজমেন্ট ইকোসিস্টেম তৈরির কাজ করছি, তাই একাডেমিয়ার সঙ্গে আমাদের সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আইবিএ-এর সঙ্গে একযোগে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আপ্লুত। তাদের সঙ্গে নিয়ে ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো বুঝতে এবং টেকসই প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমাদের সম্মিলিত লক্ষ্যের দিকে দিক-নির্দেশনা দিয়ে সহায়তা করতে পেরে আমরা আনন্দিত। যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা আমাদের অর্থনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে সক্ষম হব। এ ছাড়া, আমরা ভিশন ২০৪১ অর্জন করে এমন একটি বাংলাদেশ তৈরি করতে পারি, যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের কাছে একটি অনুকরণীয় মডেল হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ অনুষদের অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন ইউনিলিভারের সঙ্গে এই সহযোগিতামূলক উদ্যোগের সম্ভাবনা নিয়ে বলেন, উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা এবং ব্যবহারিক প্রয়োগের সঙ্গে তাত্ত্বিক জ্ঞানকে একীভূত করার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে ইন্ডাস্ট্রি ও প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা। কর্পোরেটদের সক্রিয় সম্পৃক্ততা আইবিএ-কে মূল্যবান দৃষ্টিভঙ্গি এবং বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ধারণা দিবে, যা শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের জন্য একইভাবে শেখার এবং উন্নয়নের সুযোগ বৃদ্ধি করবে। আমি আশা করছি, ইউনিলিভার ও আইবিএ-এর মধ্যকার এই সহযোগিতার মাধ্যমে পারস্পরিক ধারণার সমৃদ্ধ আদান-প্রদান হবে, পারস্পরিক শিক্ষাকে উৎসাহিত করবে এবং উদ্ভাবনী সমাধানের পথ প্রশস্ত করবে, যা দ্রুত পরিবর্তনশীল ব্যবসায়িক জগতের সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে। আমার বিশ্বাস, আইবিএ-ইউবিএল দীর্ঘদিন একসঙ্গে কাজ করবে এবং সম্মিলিত এই প্রচেষ্টা পরিবেশ ও সমাজে দীর্ঘমেয়াদী অবদান রাখবে।
একটি শক্তিশালী, সুপ্রতিষ্ঠিত ও উদ্দেশ্যপূর্ণ ব্র্যান্ড হিসেবে, লাইফবয় (জীবাণু-মুক্ত হ্যান্ডওয়াশ), পিওরইট, ডোমেক্স (জীবাণু-মুক্ত টয়লেট) ও হরলিক্স (পুষ্টি বৃদ্ধিকারক) এর মতো উল্লেখযোগ্য ব্র্যান্ডগুলোর মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পৌঁছে দিতে এই অংশীদারিত্ব প্রসারিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ।
এই ধরনের আনুষ্ঠানিক সহযোগিতামূলক উদ্যোগের সুযোগ প্রদান করা ছাড়াও, নিয়মিতভাবে দক্ষতা উন্নয়ন এবং কর্মজীবনে সুযোগ তৈরির ক্ষেত্রে আইবিএ- এর শিক্ষার্থী ও স্নাতকদের নিয়ে কাজ করে ইউনিলিভার বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ভবিষ্যত নেতৃত্ব তৈরি ও উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ফ্ল্যাগশিপ উদ্যোগও নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে রয়েছে- ইউনিলিভার লিডারশিপ ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম, ইউনিলিভার ফিউচার লিডার্স প্রোগ্রাম ও বিজমায়েস্ট্রোস- যা একটি ক্যাম্পাসভিত্তিক ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা। গত ১৪ বছর ধরে বিজমায়েস্ট্রোস প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে ইউবিএল। এটি প্রকৃত ব্যবসার অনুভূতি প্রদানের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী দেশের তরুণদের যোগ্যতা প্রদর্শনের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ