ঢাকা, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রপ্তানি আয়ে ‘স্বস্তির’ বার্তা

প্রকাশনার সময়: ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২৬

গত ডিসেম্বর থেকে টানা তিন মাস ধরে পণ্য রপ্তানি ৫০০ কোটি ডলারের বেশি হয়েছে। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মার্চ। গত মাসে ৫১০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ রপ্তানি গত বছরের মার্চের তুলনায় ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে ৪ হাজার ৩৫৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেশি। রপ্তানি আয়ের এ হালনাগাদ পরিসংখ্যান গতকাল রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশ করেছে।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত তৈরি পোশাক, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য ও প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। অন্যদিকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল ও প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি কমেছে। এর ফলে সামগ্রিক পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা কম।

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ সময়ে ৩ হাজার ৭২০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া ৭৯ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ কম।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। চলতি অর্থবছরে সরকার ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। তবে মার্চ শেষে পণ্য রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ পিছিয়ে রয়েছে।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ৫ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। সে মাসে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দশমিক ৯৮ শতাংশ কম আসে।

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাস শেষে (জুলাই-অক্টোবর) পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ। তবে টানা তিন মাস (অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর) প্রবৃদ্ধি কমায় ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) হিসাবে সামগ্রিক পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির গতি কমে দশমিক ৮৪ শতাংশে নেমে আসে।

জানুয়ারিতে রপ্তানি বাড়ায় প্রবৃদ্ধি বেড়ে ২ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠে। ফেব্রুয়ারি শেষে তা আরও বেড়ে ৩ দশমিক ৭১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প থেকে এসেছে ৩২ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ৫ দশমিক ২২ শতাংশ।

এর মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ১৮ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ। তবে লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমেছে ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ১৪ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার; গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে আয় কমেছে দশমিক ২৬ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমেছে ৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এই আট মাসে পোশাক খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ৩১ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার।

ইপিবির হিসাব বলছে, জুলাই-ফেব্রুয়ারি— এ আট মাসে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৫ দশমিক ৪৫ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে।

পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ চেম্বারের বর্তমান সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, এটা ভালো যে, জানুয়ারির পর ফেব্রুয়ারি মাসেও সার্বিক রপ্তানি ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি হয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, নানা বাধা-বিপত্তির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা এখনো লেগে আছে। মূল্যস্ফীতি বাড়ায় আমাদের প্রধান বাজার ইউরোপ-আমেরিকার মানুষ পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছে। তাদের এখন খাবারের পেছনে বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে আমাদের এখন খারাপ সময় যাচ্ছে।

অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, এ সংকটের সময় রপ্তানি আয় বাড়া স্বস্তির খবর। এ আয় রিজার্ভের পতন ঠেকাতে সহায়তা করবে। তবে আত্মতুষ্টিতে না ভুগে এই ইতিবাচক ধারা যাতে আগামী দিনগুলোতে অব্যাহত থাকে সেটার দিকে রপ্তানিকারক ও সরকারকে মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে— এ মুহূর্তে রপ্তানি আয় যদি কমে যেত, তাহলে আমাদের রিজার্ভ কিন্তু আরও কমে যেত। তাতে অর্থনীতিতে সংকট আরও বাড়ত। তাই আমি মনে করি, রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স যেন বাড়ে, সেদিকেই সবার সজাগ দৃষ্টি রাখা উচিত।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ