বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধের ব্যয় দ্রুত বাড়ছে। এজন্য বাংলাদেশকে এখন তুলনামূলকভাবে বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। গত জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ প্রায় ৮০ কোটি ৬০ লাখ ডলার খরচ করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা দ্বিগুণ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ করা হয় প্রায় ৪০ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
বিদেশি ঋণ ও অনুদান সম্পর্কিত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় সুদ ও আসল বাবদ সরকারের ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৪৬ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের আট মাসে বিদেশি ঋণদাতাদের সুদ-আসল মিলিয়ে ২০৩ কোটি ডলার পরিশোধ করেছে সরকার। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ১৪২ কোটি ৪১ লাখ ডলার। গত জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে বৈদেশিক ঋণের আসল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ১২২ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ১০২ কোটি ১১ লাখ ডলার।
বিশ্লেষকদের মতে, বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় অনেক বেড়ে যাওয়ার কারণে সার্বিকভাবে ঋণ পরিশোধের ব্যয় এভাবে বেড়েছে। বিষয়টি উদ্বেগের। আর এ অবস্থার অন্যতম কারণ হলো গত এক দশকে বাংলাদেশ স্বল্পমেয়াদি বেশ কিছু ঋণ নিয়েছে। অন্যদিকে এসব ঋণের সুদহারও বাজার-ভিত্তিক। অর্থাৎ সুদের হার তুলনামূলক বেশি। আগামীতে সুদ পরিশোধে ব্যয় আরও বেড়ে যেতে পারে। তাই এখন থেকে খুব যাচাই-বাছাই করে বিদেশি ঋণের প্রকল্প নেওয়া প্রয়োজন। সহজ শর্তের, স্বল্প সুদের ও দীর্ঘমেয়াদে পরিশোধযোগ্য ঋণ নিতে হবে। পাশাপাশি বন্ধ করতে হবে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নেওয়ার প্রবণতা।
এদিকে, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থছাড় কিছুটা বেড়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ ও অনুদান বাবদ অর্থছাড় হয়েছে ৪৯৯ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৪৮৭ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। গত জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সংস্থাটির কাছ থেকে পাওয়া গেছে ১৩০ কোটি ডলারের কিছু বেশি।
এরপরের অবস্থানে আছে জাপান। অর্থবছরের আট মাসে জাপান ১০৪ কোটি ২১ লাখ ডলার ছাড় করেছে। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সফটলোন উইনডো খ্যাত সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) আছে তৃতীয় অবস্থানে। আইডিএ ছাড় করেছে ছাড় করেছে ৮৭ কোটি ৭৯ লাখ ডলার।
এছাড়াও রাশিয়া ৮০ কোটি ৭৫ লাখ ডলার, চীন ৩৬ কোটি ১৭ লাখ ডলার, ভারত ১৯ কোটি ৬১ লাখ ডলার এবং এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক (এআইআইবি) ৩ কোটি ২০ লাখ ডলার ছাড় করেছে।
ইআরডির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ ও অনুদান দুটোরই প্রতিশ্রুতি বেশ বেড়েছে। এই সময়ে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীরা ৬৭৪ কোটি ডলারের ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ১৫৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। এছাড়া অনুদানের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ৪৬ কোটি ১১ লাখ ডলারের। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ২৪ কোটি ৮৯ লাখ ডলার।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ