রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে গত বছরের শুরু থেকে বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দার কারণে দেশে উৎপাদন কমে যায়। মূল্যস্ফীতি ও ডলার সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার ফলে ভাটা পড়ে শিল্পঋণে। তবে এখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে এ খাত।
গত বছরের শেষে এসে অর্থাৎ অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে বাড়ে শিল্পঋণ (ইন্ডাস্ট্রিয়াল টার্ম লোন) প্রবাহ। বাড়ে ঋণ বিতরণ ও আদায়। সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে ঋণের স্থিতি (আউটস্ট্যান্ডিং লোন)।
জানা গেছে, ২০২২ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের চেয়েও ২০২৩ সালের একই প্রান্তিকে বিতরণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটিরও বেশি। আবার জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের চেয়ে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা বেশি ঋণ বিতরণ হয় এই খাতে। আদায় হয় দ্বিগুণেরও বেশি। সঙ্গে এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকার স্থিতি বেড়েছে। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, শিল্পঋণের স্থিতি প্রায় পৌনে চার লাখ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, কোভিড মহামারির ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল দেশের অর্থনীতি। ফলে ঘুরে দাঁড়ায় শিল্প খাত। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা লাগে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়। সে পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার পর বাড়ে শিল্পঋণের চাহিদা ও বিতরণ। ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো হওয়ায় আদায়ও বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে অর্থাৎ অক্টোবর-ডিসেম্বরে শিল্পঋণ বিতরণ হয়েছে ২৯ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা। তার আগের প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বরে বিতরণ হয়েছিল ১৮ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। সে হিসেবে এ খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১১ হাজার ১২ কোটি টাকা। এছাড়া তার আগের বছরের একই সময় ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল ১৮ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। সে তুলনায় ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১০ হাজার ৮০২ কোটি টাকা।
একই সময়ে ২০২৩ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে আদায় হয়েছে ৫০ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা। তার আগের প্রান্তিকে আদায় হয়েছিল ২০ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। সে হিসেবে আদায় বেড়েছে ২৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। তার আগের বছরের একই সময়ে আদায় হয়েছিল ১৮ হাজার ৪৭৭ কোটি। আদায় বেড়েছে ৩২ হাজার ১১৬ কোটি টাকা।
বিতরণ আদায়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ঋণস্থিতিও। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকে ঋণস্থিতি ৩ লাখ ৬০ হাজার ৫১ কোটি টাকা। তার আগের প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বরে যা ছিল ৩ লাখ ২৮ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা। সে হিসেবে ঋণের স্থিতি বেড়েছে ৩১ হাজার ৩০৯ কোটি। তার আগের বছরের একই সময়ে ঋণের স্থিতি ছিল ৩ লাখ ৮ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা। সে হিসেবে স্থিতি বেড়েছে ৫১ হাজার ১৩৩ কোটি।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে জানুয়ারি-১৪ মার্চ পর্যন্ত ২০ হাজার ৯০৭ কোটি টাকার শিল্পঋণ (ইন্ডাস্ট্রিয়াল টার্ম লোন) বিতরণ করা হয়েছে। আদায় হয়েছে ১৭ হাজার ৮৯৯ কোটি। স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৫১ কোটি টাকা।
অন্যদিকে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে মোট ৬৮ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকার শিল্পঋণ বিতরণ করা হয়। সেই বছরে আদায় হয় ৬৪ হাজার ৮৬২ কোটি টাকায়। স্থিতি ছিল ৩ লাখ ২০ হাজার ৪১০ কোটি টাকা। তার আগের অর্থবছরে (২০২১-২০২২) এই খাতের মোট ঋণ বিতরণ ছিল ৬৮ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। ওই বছর আদায় হয় ৫৮ হাজার ৪৮৮ কোটি। স্থিতি ছিল ৩ লাখ ১৫ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। ২০২১-২০২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৩ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা বেশি শিল্পঋণ বিতরণ হয়। আদায় বাড়ে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। স্থিতি বাড়ে ৫ হাজার ১১৬ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘অর্থনৈতিক সংকট পুরোপুরি কাটেনি। এখনো নানা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে সময় পার করছি। তবে ব্যবসাকে স্বাভাবিক রাখতে কাজ করে যাচ্ছি। নানাভাবে ডলার ম্যানেজ করা হচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ করে সুদের হার বেড়ে চলেছে। এতে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের সুদ অনেক বেড়ে যাবে। এসব বিবেচনায় নিয়ে ঋণ পরিশোধে অনেকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছেন। ফলে ঋণ আদায় বেড়ে গেছে। আবার অনেকে নতুন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করছেন। অন্যান্য উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করে ঋণ পরিশোধ করছেন। সব মিলে শিল্প খাতে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে।’
নয়া শতাব্দী/আরজে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ