ঢাকা, রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থের টানে ধীরগতি

প্রকাশনার সময়: ০৯ মার্চ ২০২৪, ০৭:৪৯

জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকার একটার পর একটা উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করলেও চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে দেখা যাচ্ছে মন্থরগতি। ডলার সংকটের প্রভাব পড়েছে এখানেও। এছাড়া অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় কৃচ্ছ্রসাধনের পথে হাঁটায় কমেছে এডিপি বাস্তবায়ন।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এডিপি বাস্তবায়নের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে অর্থাৎ জুলাই-জানুয়ারি সময়ে এডিপি বরাদ্দ থেকে ৭৪ হাজার ৪৬৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। অঙ্ক এডিপিতে মোট বরাদ্দের ২৭ দশমিক ১১ শতাংশ।

আইএমইডির ওয়েবসাইটে ২০১০-১১ অর্থবছর পর্যন্ত বছরের প্রথমার্ধের অগ্রগতির তথ্য দেয়া হয়েছে। সে তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ১৪টি অর্থবছরে প্রথম সাত মাস (জুলাই-জানুয়ারি) সময়কালে এত কম বাস্তবায়ন আর কখনো হয়নি। আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন কারণ দেখালেন কৃচ্ছ্রসাধনকে। তিনি বলেছেন, বৈশ্বিক সংকটের সময়ে কেনাকাটা কম হওয়ায় তার প্রভাব পড়েছে এডিপি বাস্তবায়নে।

প্রতি বছরই সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি তথা এডিপিতে অর্থ বরাদ্দ বাড়ে। সে অনুযায়ী খরচও বাড়ে। সেই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপির আকার ধরা হয়েছে লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি লাখ টাকা। গত অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল লাখ ৫৬ হাজার কোটি ২৭ লাখ টাকা।

আইএমইডির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, আগের ১৪ অর্থবছরের কোনোবারই অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে এডিপি ২৭ দশমিক ১১ শতাংশের কম বাস্তবায়ন হয়নি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ২৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ৩০ দশমিক ২১ শতাংশ।

২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ২৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে হার ছিল ৩২ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ। ২০১০-১১ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে মোট এডিপির মাত্র ৩৩ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছিল।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ৭৪ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা খরচের মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ব্যয় হয়েছে ৪২ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা। বিদেশি ঋণের (প্রকল্প সাহায্য) ২৮ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিলের হাজার ২৪৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

সবশেষ জানুয়ারি মাসে মোট এডিপির ১২ হাজার ৭২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। শতাংশ হিসাবে যা দশমিক ৬৩ শতাংশ। গত বছরের জানুয়ারিতে ব্যয় হয়েছিল ১১ হাজার ৮৪১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। শতাংশ হিসাবে ছিল দশমিক ৬৩ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের এডিপিতে প্রকল্প রয়েছে হাজার ৩৯২টি। বাস্তবায়নের ধীরগতির কারণে মূল এডিপি থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বিদেশি সহায়তা থেকে এডিপি কমবে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা। আর দেশজ উৎসের অর্থ কমছে সাড়ে হাজার কোটি টাকা। সংশোধন হলে এডিপিতে বিদেশি সহায়তার পরিমাণ দাঁড়াবে ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, দেশজ উৎসের অর্থের পরিমাণ দাঁড়াবে লাখ ৬১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। গতবারও সংশোধিত এডিপিতে সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছিল।

এডিপি বাস্তবায়নের হার কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে আইএমইডি সচিব মহিউদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কৃচ্ছ্রসাধন করা হয়েছে। গত বছরও (২০২২-২৩ অর্থবছর) কৃচ্ছ্রসাধনের নির্দেশনা ছিল। কিন্তু বছর সেই নির্দেশনার বাস্তবায়নটা বেশি হয়েছে। গত বছর একই নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও সরকারের জন্য কিছু গাড়ি ক্রয় করা হয়েছিল। কিন্তু বছর সরকারি গাড়ি কেনা একদম বন্ধ। তাছাড়া সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প এবং চলতি অর্থবছরে শেষ হবেএমন প্রকল্প ছাড়া অন্যগুলোতে অর্থছাড় কম করার নির্দেশনার কথাও তুলে ধরেন সচিব। এডিপি বাস্তবায়নের হার কম হওয়ার পেছনে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জাতীয় নির্বাচনের কথাও বলছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারে অর্থ মন্ত্রণালয় সামলে আসা মির্জ্জা আজিজ বলেন, দুবছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

সরকার কৃচ্ছ্রসাধনের পথ বেছে নিয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে জ্বালানি তেল গ্যাসের বিল পরিশোধ করতে সরকার বড় ধরনের অর্থ সংকটে পড়েছে। আর সংকটে পড়েই এডিপিতে অর্থের জোগান দিতে পারছে না। সে কারণে এবার বাস্তবায়ন কম হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনও এতে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন তিনি। আইএমইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত ১৫ মন্ত্রণালয় বিভাগে গড় বাস্তবায়ন হয়েছে ২৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য সরকার লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকার যে এডিপি অনুমোদন দিয়েছে, তাতে ৮০ শতাংশই বরাদ্দ পেয়েছে এসব মন্ত্রণালয় বিভাগ।

এর মধ্যে শতাংশ হিসাবে সবচেয়ে বেশি ৩৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৮ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ খরচ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ ব্যয় করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন পর্যটন মন্ত্রণালয়।

এছাড়া ৩৫ দশমিক ১৮ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে সেতু বিভাগ। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় খরচ করেছে ২৬ দশমিক ১৬ শতাংশ; বিদ্যুৎ বিভাগ বাস্তবায়ন করেছে ৩০ দশমিক ৭১ শতাংশ, গৃহায়ণ গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ২৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ, বিজ্ঞান প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ২৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ, প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ২৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ, সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগ ২২ দশমিক ৫৯ শতাংশ, শিল্প মন্ত্রণালয় ১৯ দশমিক ১০ শতাংশ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ১৭ দশমিক ৫১ শতাংশ, মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা বিভাগ ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় খরচ করেছে মাত্র ১২ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

সচিব মহিউদ্দিন বলেন, গত ২৪ জানুয়ারি পরিকল্পনা কমিশনের সভায় প্রকল্প বাস্তবায়ন মনিটরিং জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থবছরের বাকি সময়ে মনিটরিং জোরদার হলে শেষ পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়ন বাড়বে।

নয়া শতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ