ঢাকা, রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

হাতের টাকা ছাড়ছে না মানুষ!

প্রকাশনার সময়: ০৩ মার্চ ২০২৪, ০৭:২৭ | আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৪, ০৭:৩৫

ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ বাড়ছে। বাড়েনি ঋণ বিতরণ। এই দুইয়ে বিপরীতমুখীতে অবস্থান করছে। এ ছাড়া আমানত বাড়লে মানুষের হাতে টাকা কমে যাওয়ার কথা। কিন্তু এখানেও উল্টো পথে হেঁটেছে। মানুষের হাতে টাকা রাখার প্রবণতা আবারও বেড়েছে। গত ডিসেম্বর মাসের শেষে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে ছিল দুই লাখ ৫৪ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা।

যা আগের মাস নভেম্বরে ছিল দুই লাখ ৪৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত ডিসেম্বরে গ্রাহকরা ব্যাংক থেকে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা তুলে আর ব্যাংকে ফেরত দেননি। ফলে এই টাকা রয়ে গেছে মানুষের হাতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাসভিত্তিক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগে ডিসেম্বরে নগদ টাকার লেনদেন বেড়ে যাওয়া, এ ছাড়া উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণেও অনেক মানুষ সঞ্চয় ভাঙাচ্ছেন। হুন্ডি তৎপরতা বৃদ্ধিও এর অন্যতম কারণ হতে পারে।

সাধারণত ছাপানো টাকার বড় অংশই থাকে মানুষের হাতে ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভল্টে। বাকি অংশ থাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, একমাসে ছাপানো টাকার পরিমাণ বেড়েছে ৩১ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। কারণ, গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে ছাপানো টাকার পরিমাণ (রিজার্ভ মানি) ছিল তিন লাখ ৭২ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। আগের মাস নভেম্বরে ছিল তিন লাখ ৪০ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ডিসেম্বরে মানুষের হাতে নগদ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকের ভল্টে থাকা টাকার পরিমাণ কমে গেছে। ডিসেম্বরে ভল্টে ছিল (কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকে) এক লাখ ১৭ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা। বাকি দুই লাখ ৫৪ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা রয়েছে মানুষের হাতে বা সিন্দুকে।

এদিকে, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, মানুষের হাতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি টাকা রয়েছে। আগে বাজারে টাকা দিলেও পণ্য পাওয়া যেত না। তবে এখন সেই সমস্যা নেই। পণ্য পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ডিসেম্বরে ২৪ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা ছিল বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভল্টে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ছিল ৯২ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। গত নভেম্বরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ভল্টে ছিল ২৬ হাজার ৬৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ছিল ৬৫ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নভেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভল্টে ছিল ৯১ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা।

বাকি দুই লাখ ৪৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা ছিল মানুষের হাতে বা সিন্দুকে। তবে রেকর্ড পরিমাণ টাকা ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে ছিল গত জুন মাসে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুন শেষে মোট ছাপানো নোটের পরিমাণ ছিল তিন লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাইরে ছিল তিন লাখ ১০ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে দুই লাখ ৯২ থেকে দুই লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা ছিল মানুষের হাতে। সাধারণত কোরবানির ঈদের সময় মানুষের হাতে নগদ টাকা বেশি থাকে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের কারণে ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে টাকার পরিমাণ বেড়েছে। প্রার্থীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই টাকা খরচ করেছেন, যা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, এই টাকা আবার ঘুরে ব্যাংকেই আসবে। ব্যাংক খাতে অব্যবস্থাপনার কারণেও অনেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। এখন ব্যাংকগুলো আমানতের সুদ বাড়িয়ে দেয়ায় এসব টাকা দ্রুতই ব্যাংকে ফিরে আসবে।

এরইমধ্যে ব্যাংক খাতের আমানত বাড়ছে। কেটে যাচ্ছে তারল্য সংকট। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষে ব্যাংক খাতে আমানত দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৪ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ঋণের সুদ বাড়ার কারণে আমানতের সুদ হার বেড়েছে। আর আমানতের সুদ হার বাড়ার কারণে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন সুদ আয়নির্ভর আমানতকারীরা।

এদিকে আগ্রাসীভাবে ঋণ বিতরণের পাশাপাশি সরকারি ট্রেজারি বিলে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে ব্যাংকগুলো। এ ছাড়া ঋণের টাকা কাঙ্ক্ষিত হারে ফেরত না আসায় তারল্য সংকটে পড়েছে বেশিরভাগ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বরে ব্যাংক ঋণ ছিল ১৫ লাখ ৬৪ হাজার ৬২১ কোটি টাকা, পরের মাস ডিসেম্বরে বেড়ে হয়েছে ১৫ লাখ ৯২ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা।

অবশ্য মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করতে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন করে টাকা না ছাপানোর কথা বলা হয়েছিল। বরং আগে ছাড়া টাকার কিছু অংশ পর্যায়ক্রমে তুলে নেবে। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে বেশ কিছু টাকা তুলে নিয়েছে। টাকা ছাড়িয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারকে ঋণের জোগানও বন্ধ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব উৎস বা ছাপানো টাকায় যেসব তহবিল গঠন করা হয়েছে, সেগুলোয় নতুন করে অর্থের জোগান বন্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব টাকায় আপাতত আর নতুন তহবিল গঠন করা হবে না।

নয়া শতাব্দী /আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ