ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

থলে ফাঁকা, কোথায় যাচ্ছে টাকা?

প্রকাশনার সময়: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪:৫২

‘আয় ঠিক আছে। ব্যয় ঠিক নেই। প্রতিদিনই কোনো না কোনো জিনিসের দাম বাড়ে। চড়া মূল্যের বাজার দরে কষাঘাতে জর্জরিত। আয় যতই করি লাভ নেই। হিমশিম খেতে হয়। মুখ তুলে অনেকেই না বলতে পারলেও বাজারের থলেই অনেক কিছু জানান দেয়। এখন মধ্যবিত্তদের টিকে থাকা খুব কঠিন।’

এভাবেই নিত্যপণ্যের চড়ামূল্যে নিজের দৈনন্দিন জীবন পরিচালনার দুঃখগাথা বর্ণনা করলেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান বাজারের দর্জি ও চা-সিগারেট বিক্রি দোকানের মালিক মো. গোলাম মোস্তফা।

তিনি বলেন, পকেটের হাজার হাজার টাকা ফুরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু বাজারের থলে ভরছে না। তলানিতেই পড়ে থাকে বাজার। বাজারের থলেতে যেন ভূতের বসবাস। টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় চাহিদার কিছুমাত্র কিনে বাধ্য হয়েই হতাশ মনে ফিরতে হচ্ছে বাড়ি। অথচ মাত্র একযুগ আগেও চার-পাঁচশ টাকা নিয়ে গেলে পাওয়া যেত ব্যাগভর্তি বাজার। গরুর মাংস, মাছ, সঙ্গে থাকত অন্যান্য শাকসবজি। তারপরও কিছু টাকা থেকে যেত। এক যুগের ব্যবধানে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান বাজার। বাজারের একাংশে চালের দোকান। তার মাঝেই একটি বড় দোকানে চলছে দর্জির কাজ। একই দোকানে বিক্রি হচ্ছে চা-সিগারেট। দোকানটির মালিক মো. গোলাম মোস্তফা। মার্কেটটির শুরু থেকেই এখানে ব্যবসা করেন। ১১ বছর আগে চালের ব্যবসা শুরু করেছিলেন তিনি। করোনাকালে সে ব্যবসা ধ্বংস হয়ে গেছে। জীবিকার তাগিদে চালের দোকানকে দর্জির দোকান বানিয়েছেন। লম্বা আকারের দোকানের একাংশে বানিয়েছেন চায়ের দোকান। একই সঙ্গে দুই দোকান পরিচালনা করেন তিনি। লক্ষ্য- চড়ামূল্যের বাজারে পরিবার-পরিজন নিয়ে টিকে থাকা। তবে দুটি ব্যবসা করেও পরিবার নিয়ে ভালো নেই গোলাম মোস্তফা। আলাপকালে তিনি জানান, দুই ব্যবসা দিয়েও এখন টিকে থাকা কঠিন।

গতকাল শুক্রবার ঢাকা উদ্যান হাজী জয়নাল আবেদিন মার্কেটের মাছ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারজুড়ে মাছের দোকান গোটা বিশেক। তবে দামি মাছের পরিমাণ কম।

দোকানিরা জানান, রুই-কাতলা, চিংড়ি, ইলিশের মতো মাছের চাহিদা এ বাজারে কম। একজন বিক্রেতা বলেন, এখানে কম দামের মাছের চাহিদা বেশি। দামি মাছ এই এলাকার মানুষ কম খায়।

বাজারের মাত্র একটি দোকানে ইলিশ মাছ দেখা গেছে। সেগুলোও আকারে ছোট। আবার দোকানটিতে ক্রেতাদের ভিড় নেই। পুরো বাজারের দৃষ্টি কেড়ে আছে পাঙ্গাশ মাছের দোকানি। ১৬০ টাকা কেজি দরে জীবিত পাঙ্গাশ মাছ বিক্রি করছেন এ বাজারের বিক্রেতারা। চড়া মূল্যের বাজারে কম দামে মাছ কিনতে উপচে পড়তে দেখা গেছে ক্রেতাদের।

অপরদিকে অস্বস্তি রয়েই গেছে মাছ-মাংসের বাজারে। আবারও ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। সোনালি ৩০০-৩৩০ টাকা। আবারও গরুর মাংস ৭০০-৭৫০ টাকায় দাম উঠেছে।

মাছের বাজারে সাইজ ভেদে তেলাপিয়া ২২০-২৩০ ও পাঙ্গাশ ১৮০ থেকে ২২০ টাকা। যা গেল সপ্তাহেও একই দামে বিক্রি হয়েছে। অন্য মাছের মধ্যে মাঝারি ও বড় আকারের চাষের রুই, কাতলা ও মৃগেল মাছের দাম প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। এছাড়াও ৬০০ টাকার নিচে নেই পাবদা, টেংরা, কই, বোয়াল, চিতল, আইড় ও ইলিশ মাছ। মাছ যত বড় তার দাম তত বেশিতে বিক্রি হচ্ছে।

মিনারা বেগম নামে ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্যয়ের লাগাম টানতে পাঙ্গাশ খেতে শিখেছে তার পরিবারের সদস্যরা।

তিনি বলেন, ‘আমার বাসায় আমার জামাই ছাড়া পাঙ্গাশ মাছ কেউ খাইতো না। এখন সবাই খায়। না খাইয়া উপায় নেই। অন্য মাছের অনেক দাম।’

মাছ বাজার থেকে বের হতেই মাংসের বাজার। রয়েছে তিনটি গরুর মাংসের দোকান। তবে ভিড় নেই।

মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে নগরের চাকরিজীবীরা বেতন পান। এ সময় অনেকেই গরুর মাংসের প্রতি ঝোঁকেন। তবে ব্যয়ের লাগাম টানতে সাড়ে সাতশো টাকার গরুর মাংস থেকে সরে এসেছেন অনেক ক্রেতাই। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আধা কেজি আর এক কেজি পরিমাণ গরুর মাংস কেনার খদ্দেরই বেশি।

এ সময় দুই কেজি গরুর মাংস কিনতে দেখা যায় সেলিনা বেগম নামে একজন ক্রেতাকে। আলাপকালে এই ক্রেতা বলেন, ‘মেয়ের শ্বশুরবাড়ির আত্মীয় আসবে। তাই গরুর মাংস কিনছি। তাগো তো আর ব্রয়লার মুরগি খাওয়ান যায় না। নইলে দুই কেজি মাংস কেনার সাধ্য আমার নেই।’

সেলিনা বেগমের মতো মধ্যবিত্তরা ভিড় করেছেন ব্রয়লার মুরগির দোকানেই। ২১০ টাকা কেজি দরে ব্রয়লার মুরগি কিনছেন তারা।

এদিকে শীতের অজুহাতে কয়েক সপ্তাহজুড়ে ভরা মৌসুমেও চড়া দাম ছিল সবজির। তবে আজ কিছুটা কমেছে সবজির দাম। কেজি প্রতি ১০-২০ টাকা কমেছে প্রায় প্রত্যেকটি সবজি। তবে এখনো স্বস্তি ফিরেনি।

তবে গত দুদিনে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২০ টাকা। এখন ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে, যা ছিল ১০০ টাকা। আর গত এক সপ্তাহে বেড়েছে ৪০ টাকা। তার আগের সপ্তাহে কেজি ছিল ৮০ টাকার মধ্যে।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, লম্বা বেগুন প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা, গোল বেগুন ৭০-৮০ টাকা, ফুলকপি ৪০-৫০ পিস, একই দামে বাঁধাকপি। শিম ৭০-৮০, টমেটো ৫০-৬০, পেঁপে ৪০-৫০ টাকা, করলা ৭০-৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০-৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০-৮০ টাকা মান ও সাইজভেদে লাউ ৭০-১০০ টাকা, শশা ৫০-৬০, মুলা ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। যা গেল সপ্তাহজুড়ে কিছুটা ১০-২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হয়েছে।

এছাড়াও শাকের মধ্যে সরিষা শাক আঁটি ১৫ টাকা, ডাঁটা শাক ১৫ টাকা, পালং ১৫-২০ টাকা, লাউ শাক ৪০-৫০, লাল শাক ১৫ টাকা, বথুয়া শাক ১৫-২০ টাকা আঁটি বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজারে দোকানের তুলনায় ভ্যানে কিংবা ফুটপাতের দোকানগুলোতে প্রত্যেক সবজির দাম ৫-১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দাম কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহে ৪০-৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হলেও আজ তা ৩৫-৪০ টাকায় নেমেছে। তবে কমেনি পেঁয়াজের দাম। ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ