কয়দিন আগেও কৃষিঋণ বিতরণে ইতিবাচক ধারায় ছিল ব্যাংকগুলো। এ খাতে বিতরণকৃত ঋণের আদায়ের পরিমাণ অন্য যে কোনো খাতের চেয়ে বেশি। খেলাপি ঋণের পরিমাণ বলতে গেলে অনেক কম। এসব কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কৃষিখাতে ঋণ বিতরণ বেশ নিরাপদ বলে মনে করছেন। তাই কৃষিঋণ বিতরণে বেশ আগ্রহ দেখা গেছে ব্যাংকগুলোকে।
তবে এখন উলটা পথে হাঁটছে কৃষিঋণ। গত ডিসেম্বরে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ব্যাংকগুলোর কৃষিখাতে ঋণ বিতরণ কমেছে ২১.৭৪ শতাংশ। ডিসেম্বরে কমলেও চলতি অর্থবছরে ইতিবাচক ধারায় রয়েছে কৃষিঋণ বিতরণ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ও ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকটের কারণে এমনটা হয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দেশের ব্যাংকগুলো কৃষকদের ঋণ বিতরণ করেছে তিন হাজার ৪৬ কোটি টাকা। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এটি ছিল তিন হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বরে) ব্যাংকগুলো কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ করেছে ১৮ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯.৯ শতাংশ বেশি।
ব্যাংককাররা বলছেন, জানুয়ারির শুরুতে দেশের জাতীয় নির্বাচন থাকায় গ্রাহকরা এ সময়ে নির্বাচনমুখী ছিলেন। কৃষকরাও নতুন ঋণ নিতে অনাগ্রহী ছিলেন।
তারা আরও জানান, ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকটও একটি অন্যতম কারণ। যদিও জানুয়ারিতে কৃষি ঋণ বাড়বে বলে আশা করেছেন তারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের ব্যাংকগুলোর জন্য চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। যদিও চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি তথা ৫২.৩৬ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে অর্থাৎ জুলাই থেকে ডিসেম্বরে কৃষকদের মাঝে যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, তার চেয়ে কৃষকরা বেশি ঋণ পরিশোধ করেছেন।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, এ সময়ে কৃষি ঋণ থেকে ব্যাংকগুলো ১৭ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা আদায় করেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এ টাকার পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় আদায় ঋণ পরিশোধের হার বেড়েছে ৮.২১ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগের পরিচালক কানিজ ফাতেমা বলেন, কৃষি ঋণ বিতরণ বাড়াতে আমরা প্রতি মাসে সরকারি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সভা করি। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সভা হয় দুই মাস পরপর। তাই তারা আগের চেয়ে বেশি কৃষি ঋণ বিতরণে উদ্বুদ্ধ হয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ব একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, কিছু কিছু ব্যাংক আছে যারা কৃষি ঋণ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বিতরণ করতে পারে না। আবার কিছু কিছু ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করতে পারে। তাই যারা কৃষি ঋণ বিতরণ করতে পারবে না, তারা সমর্থ ব্যাংকগুলোকে তাদের ফান্ড ট্রান্সফার করে দেবে— এ রকম একটি নির্দেশ রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। ফলে কৃষি ঋণ দ্রুত বাড়ছে। গত বছরের মতো এ বছরও সহজেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবে।
কৃষি খাতে মোট বকেয়া ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা গত বছরের ডিসেম্বর শেষে কৃষি খাতে বকেয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, আগের বছর যা ছিল ৫০ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ছয় হাজার ৫৬৮ কোটি টাকার কৃষি ঋণ বিতরণ হয়েছে, যা পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার ৫৪.৬০ শতাংশ।
অন্যদিকে বেসরকারি বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে, যা তাদের পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার ৫২.৩৬ শতাংশ। এছাড়া চলতি অর্থবছরের এ সময়ে ১১টি ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার ৩০ শতাংশ কম ঋণ বিতরণ করেছে।
নয়াশতাব্দী/আরজে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ