ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধ হচ্ছে

প্রকাশনার সময়: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৪:৩২ | আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৪:৩৩
ফাইল ছবি

বর্তমানে বোতলজাত কিংবা খোলা দু’ভাবেই সয়াবিন তেল বাজারজাত করা হচ্ছে। তবে বাজারে বিক্রি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে খোলা সয়াবিন তেল। দেশে ভোজ্যতেলের উৎপাদক কোম্পানিগুলো খোলা সয়াবিন সরবরাহ করবে না। সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত, বোতলজাত সয়াবিনের বাইরে বাকি খোলা সয়াবিন বাজারজাত করতে হবে পলি প্যাক মোড়কে। এ প্যাকেটের গায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য, উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ এবং উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ থাকতে হবে।

এতে বাজার তদারককারী প্রতিষ্ঠান অভিযানে গেলে পণ্যের ওজন, মান, দাম এবং সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকেও সহজে চিহ্নিত করে অভিযোগ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবেন। দেশে এখন যে পরিমাণ সয়াবিন তেল বাজারজাত হচ্ছে, তার ৬৫ শতাংশই বিক্রি হচ্ছে খোলা আকারে, যা মিলগেট থেকে ড্রামে ড্রামে পরিবেশকের মাধ্যমে সরবরাহ হয় সারাদেশে। বাকি ৩৫ শতাংশ তেল বোতলজাত মোড়কে বিক্রি হয়ে থাকে। খোলা সয়াবিন তেল খুচরা বাজারে প্যাকেটজাত করে বিক্রি নিশ্চিত করতে শিল্প মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত ১০ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে শিল্পসচিবের কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে সয়াবিন তেলের যথাযথ মান রক্ষা, সয়াবিন তেলের সঙ্গে পাম তেল মেশানোর প্রবণতা পরিহার, লিটার না কেজি এ ধরনের বিভ্রান্তি দূর করতে খোলা সয়াবিন বাজারজাত করার পরিবর্তে প্যাকেটজাত মোড়কে সরবরাহ নিশ্চিত করতে বলা হয়।

এদিকে চিঠি পাওয়ার পর পর দুই দিনের মাথায় গত রোববার শিল্প মন্ত্রণালয় তেল উৎপাদক প্রতিষ্ঠান, পরিবেশক ও পাইকারি বিক্রেতা, বিএসটিটিআই, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছে।

বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, দেশে আর কোনো খোলা তেল বিক্রি হবে না। সয়াবিন তো বটেই, পাম তেলও বিক্রি হবে পলিপ্যাক মোড়কে। তবে প্রাথমিকভাবে সারাদেশে এটা বাস্তবায়ন সম্ভব না-ও হতে পারে। এ জন্য ভোজ্যতেলের বড় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে খোলা সয়াবিন তেল বাজারজাত করা থেকে সরে আসার তাগিদ দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বাধ্য করা হবে।

সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোকে প্রথম টার্গেট করা হবে। ধীরে ধীরে এটা সারাদেশে এবং সব কোম্পানির ক্ষেত্রে নিশ্চিত করা হবে। এরপর না মানার প্রবণতা দেখা গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে সরকার। বর্তমানে খোলা সয়াবিন আর পাম অয়েলের মধ্যে খুচরা বিক্রয় মূল্যের ব্যবধান ১৩ টাকা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি অনুবিভাগ) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘প্রাথমিক উদ্যোগটি ছিল শিল্প মন্ত্রণালয়ের। তারা অনেক আগেই চেয়েছিল খোলা তেল বাজারজাত বন্ধ করতে। কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তদারক মন্ত্রণালয় হিসেবে করোনা পরিস্থিতি, ব্যবসায়ীদের অনুরোধ এবং দেশে ভোক্তার সক্ষমতাসহ নানা দিক বিবেচনা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়কে পদক্ষেপটি বাস্তবায়নে আরো কিছুদিন সময় নেয়ার জন্য বলা হয়েছিল। এরপর একটা লম্বা সময় পার হয়েছে। সয়াবিন তেলের আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতির উল্লম্ফন ঘটেছে। তিনি বলেন, এই সময়ে দেশে সয়াবিন ও পাম অয়েলের দামে একটা উল্লেখযোগ্য তফাত সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সয়াবিনের সঙ্গে পাম তেলের সংমিশ্রণ প্রবণতা বেড়ে গেছে। এ ছাড়া বিক্রয় পর্যায়ে কেজি-লিটারের পার্থক্যসহ খোলা তেলের স্বাস্থ্যমান নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চিঠি পাঠিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়কে তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অনুরোধ করেছে। এখন কবে নাগাদ তা বাস্তবায়ন করা হবে, সে সিদ্ধান্ত নেবে শিল্প মন্ত্রণালয়।

কবে থেকে দেশে খোলা সয়াবিন তেল বাজারজাত বন্ধ হচ্ছে জানতে চাইলে দেশে ভোজ্যতেলের বড় উৎপাদক ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক (অর্থ) বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, সরকার একটি সিদ্ধান্ত দিলে উৎপাদকদের সেটি বাস্তবায়ন করতে হয়। দেশের প্রচলিত আইন, বিধি, নীতি ও সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তা সবাই মানতে বাধ্য। উৎপাদকরা নিশ্চয়ই যার যার মতো করে খোলা সয়াবিন বাজারজাত বন্ধের চেষ্টা করবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খোলা তেল বাজারে স্থায়ীভাবে সরবরাহ বন্ধ করতে উৎপাদকরা ২০২২ সালের ডিসেম্বরকে লক্ষ্য ধরে এগোচ্ছে। তবে ইতোমধ্যে উৎপাদকরা তার প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছে। অল্প সময়ের ভেতরে তার প্রতিফলনও হয়তো দেখা যাবে। এর সঙ্গে তিনি আরো যোগ করেন, খোলা সয়াবিন প্যাকেটজাত মোড়কে বিক্রির সিদ্ধান্ত কতটা কার্যকর হবে, সেটা নির্ভর করবে দেশের মানুষের অভ্যস্ততার ওপর। কারণ ভোক্তাদের বেশিরভাগ এখনো খোলা সয়াবিনে অভ্যস্ত। আপনি দেখবেন, গ্রামের মানুষ বাজারে কিংবা দোকানে এখনো তেল কেনার জন্য বোতল কিংবা অন্য কোনো পাত্র নিয়ে যায়। এ প্রবণতা চাইলেই অল্প কিছু দিনের মধ্যে দূর করতে পারবেন না। এর জন্য সচেতনতা এবং জোরালো প্রচারও দরকার আছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব খন্দকার নূরুল হক স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী বিশেষ করে ভোজ্যতেলের (সয়াবিন) বাজার নিয়মিত মনিটর করে আসছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাজার মনিটরিং কর্মকর্তাদের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, খোলা সয়াবিন তেল বাজারে বিক্রয়ে কিছু সমস্যা তৈরি হচ্ছে। যেমন- পাম অয়েলের খুচরা মূল্য তুলনামূলক কম। এ কারণে সয়াবিন তেলের সঙ্গে পাম তেল সংমিশ্রণের ঝুঁকি রয়েছে।

তা ছাড়া খোলা তেল লিটারে বিক্রি না করে কেজিতে বিক্রির একটা প্রবণতা দেখা যায়। ফলে সাধারণ ক্রেতা খোলা ভোজ্যতেল কেনার সময় বিভিন্নভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। তবে এরই মধ্যে কিছু সয়াবিন তেল প্যাকেটজাত করে বাজারে বিক্রি হওয়ায় সাধারণ ক্রেতা এর সুফলও পাচ্ছেন। তাই সয়াবিন তেল খোলা অবস্থায় বিক্রি না করে প্যাকেটজাত করে বিক্রির ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সাধারণ ক্রেতা প্রতারণা থেকে রক্ষা পাবেন।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ