ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

রপ্তানি কমলেও প্রবৃদ্ধি অব্যাহত

প্রকাশনার সময়: ১৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:২৩

একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি। প্রধান এ দুই বাজারেই বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমে গেছে। চলতি এ সময়ে জার্মানিতে পোশাক রপ্তানিতে নেগেটিভ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে এ নিম্নমুখী প্রবণতা সত্ত্বেও পোশাক খাত তার উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। সেপ্টেম্বরে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪.৪৬ শতাংশ। এ সময় রপ্তানি হয়েছে ৩৬১ কোটি ডলারের পোশাক। আগের বছর একই সময়ে রপ্তানি ছিল ৩১৬ কোটি ডলারের।

এছাড়া একই সময়ে দেশ থেকে সব ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৩৬৮ কোটি ৫৪ লাখ ৪০ হাজার ডলারের। এর মধ্যে ১ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের রপ্তানি হয়েছে কেবল দেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) শিল্পই। এ সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৫ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার বা ৫৫১ কোটি ডলারের। এ রপ্তানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেড়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত তথ্য থেকে বিজিএমইএ’র সংকলন করা পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার জার্মানিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ কমে ১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমেছে। অবশ্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ২ দশমিক ৭৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ২ দশমিক ০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এদিকে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলসের (অটেক্সা) হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের (২০২৩) প্রথম আট মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে প্রায় ২২ শতাংশ। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গত বছর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৯৭৩ কোটি মার্কিন ডলারে উঠেছিল। কিন্তু অটেক্সার তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর রপ্তানি প্রবৃদ্ধি তো দূরের কথা, উল্টো কমছে। এ বছরের প্রথম মাস জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি ২১ দশমিক ৭৭ শতাংশ কমেছে। এককভাবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পোশাকের প্রায় এক-পঞ্চমাংশের গন্তব্য এ বাজার। অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট সময়ে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ৫১৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২১ দশমিক ৭৭ শতাংশ কম। গত বছরের প্রথম আট মাসে দেশটিতে ৬৬২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ। বর্তমানে দেশটির বাজারে চীন ও ভিয়েতনামের পর তৃতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়া দেশের পোশাকশিল্পের জন্য উদ্বেগের বলেও মত দিয়েছেন উদ্যোক্তারা। ইপিবির সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বৈদেশিক মুদ্রার সবচেয়ে বড় এ উৎস থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৫০০ কোটি ডলার পাওয়া যায়। প্রবণতা বিশ্লেষণে দেখা যায়, আগের মাসের চেয়ে সেপ্টেম্বরে রপ্তানি কম হয়েছে ৪৭ কোটি ডলার বা প্রায় ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে পণ্য রপ্তানি থেকে এসেছে ৪৩১ কোটি ডলার। আগস্টে এর পরিমাণ ছিল ৪৭৮ কোটি ডলার। এ নিম্নমুখী প্রবণতা সত্ত্বেও পোশাক খাত তার উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। ইপিবির তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) সেপ্টেম্বরে একক মাস হিসাবে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪.৪৬ শতাংশ। এ সময় রপ্তানি হয়েছে ৩৬১ কোটি ডলারের পোশাক। আগের বছর একই সময়ে রপ্তানি ছিল ৩১৬ কোটি ডলারের। যদিও পোশাক রপ্তানিকারকরা বলছেন, ক্রয়াদেশ পরিস্থিতি ধীরে ধীরে নাজুক পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। তারা আরও বলছেন, কোভিড-১৯ মহামারির অভিঘাত কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ক্রমেই বাড়ছিল বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি। কিন্তু ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধের পর এ দেশগুলোতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ধীরে ধীরে কমে আসছে। বড় বড় ক্রেতা ব্র্যান্ড কোম্পানিগুলোর বেচাবিক্রি কমে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে জানান তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা।

সাধারণত প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে এইচঅ্যান্ডএম প্রায় ৪ বিলিয়ন (৪০০ কোটি) ডলারের পোশাক কেনে। এছাড়া ওয়ালমার্ট কেনে ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের পোশাক। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারের জন্য বাংলাদেশের পোশাকের অন্য বড় ক্রেতা হলো প্রাইমার্ক, সিঅ্যান্ডএ, গ্যাপ ও ভিএফ। এদের বিক্রি কমেছে বলেই বাংলাদেশে তার প্রভাব পড়েছে। এ প্রসঙ্গে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। তখন থেকেই দেশ দুটিতে পোশাকের চাহিদা কম। এ কারণে ক্রয়াদেশও কম। মূল্যস্ফীতি কমলেও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়ায়নি।’

অবশ্য ইপিবির তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতে পোশাক রপ্তানি কমলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৫ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলারের। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১.৪৭ শতাংশ বেশি। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র মুখপাত্র ও পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘জার্মানিতে রপ্তানি কমলেও স্পেনে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৩ দশমিক ২৬ শতাংশ, ফ্রান্সে ৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ, নেদারল্যান্ডসে ১৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ।’ তিনি উল্লেখ করেন, ইতালিতে ২৩ দশমিক ২২ শতাংশ আমাদের রপ্তানি বেড়েছে। মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি কমলেও এখনো প্রবৃদ্ধিতে আছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানি ২ দশমিক ৭৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ২ দশমিক ০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘একই সময়ে যুক্তরাজ্য ও কানাডায় রপ্তানি যথাক্রমে ২১ দশমিক ৩৫ শতাংশ ও ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ৩৫২ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে।’

এছাড়া পোশাক খাতে নতুন নতুন রপ্তানি বাজার সৃষ্টি হচ্ছে। তুলনামূলক উচ্চমূল্যের পোশাকের ক্রয়াদেশও আসছে। খাত সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, পণ্য ও বাজার বৈচিত্র্যকরণ, প্রযুক্তি আপগ্রেডেশন, উদ্ভাবনসহ প্রবৃদ্ধির নতুন সুযোগগুলো অন্বেষণ করা হয়েছে। এসব উদ্যোগের সুফল হিসেবেই পোশাক রপ্তানি বাড়ছে। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘জার্মানি ও আমেরিকার বাজারে আমাদের উদ্বেগ বাড়লেও নতুন বাজারে পোশাক রপ্তানি বাড়ছে।’

ইপিবির তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে অপ্রচলিত বাজারে পোশাক রপ্তানি ২৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেড়ে ২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ দশমিক ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রধান অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানি যথাক্রমে ৩৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ, ৫৪ দশমিক ১১ শতাংশ এবং ৩৭ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ বেড়েছে। তবে ভারতে রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় পোশাক রপ্তানি ২ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেড়ে ২ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলার বা ২০৭ কোটি ডলার হয়েছে। এ সময়ে যুক্তরাজ্য ও কানাডায় বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানি হয়েছে যথাক্রমে ১৪৫ কোটি ডলার ও ৩৫ কোটি ২৮ লাখ ৬০ হাজার ডলারের। আলোচ্য সময়ে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দেশ দুটিতে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২১ দশমিক ৩৫ শতাংশ ও ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ