ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাগাম টেনে ধরার আকুতি

প্রকাশনার সময়: ১৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:২০

দীর্ঘদিন ধরেই নিত্যপণ্য, কাঁচাবাজার, মাছ-মাংস, এমনকি মসলাজাত পণ্যের দামে হাঁসফাঁস অবস্থা সাধারণ মানুষের। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। বাজার অস্বস্তিতে ভোগান্তির অন্ত নেই। বিভিন্ন সময় নানা পণ্যের দাম কিছুটা ওঠানামা করলেও বাজার ছুটছে ঊর্ধ্বমুখী। আবারও বেড়েছে ডিম ও মুরগির দাম। মাছ-মাংস আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। যদিও সয়াবিন তেল ও চালের বাজার কিছুটা স্থিতিশীল।

স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের কাছে বাজারে আসা যেন আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিত্যপণ্যের দামে নাভিশ্বাস অবস্থা ক্রেতাদের। সম্প্রতি শীতকালীন কিছু আগাম সবজি বাজারে আসতে শুরু করলেও দাম যেন আকাশছোঁয়া। যে কোনো ধরনের সবজি কিনতে হচ্ছে অন্তত ৮০ টাকায়; একমাত্র মুলা পাওয়া যাচ্ছে ৬০ টাকায়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য বাজারে ক্রেতার সংখ্যা কম— বলছেন বিক্রেতারা, আর দামের লাগাম টেনে ধরার আকুতি সাধারণ ক্রেতাদের।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ন্যূনতম ৬০-৭০ টাকার কমে তেমন কোনো সবজি মিলছে না। শুধু পেঁপে আর মিষ্টি কুমড়ার কেজি তুলনামূলক একটু কম। এছাড়া বেশিরভাগ সবজির দামই চড়া।

রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা পর্যায়ের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীতকালীন সবজির মধ্যে প্রতি কেজি শিম ২০০ টাকা, মুলা ৭০-৮০ টাকা ও টমেটো ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম ৬০ টাকা, স্থানভেদে বেশিও বিক্রি হচ্ছে। লাউয়ের দামও চড়া।

এছাড়া আলু ৫০-৬০ টাকা কেজি, করলা ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা, মূলা ৭০ টাকা, পটোল ৮০-৯০ টাকা, পেঁপে ২৫-৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে কাঁচামরিচ ২০০ টাকা কেজি, ঝিঙ্গা ৮০, উস্তা ১০০ ও কচুর লতি ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গাজর প্রতি কেজি ১২০ টাকা, প্রতি পিস জালি ৫০-৬০ টাকা ও লাউ প্রতি পিস ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে কাঁচাকলা প্রতি হালি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর রায়েরবাজারে কথা হয় ক্রেতার সঙ্গে। তিনি সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম নিয়ে হতাশ। জাকারিয়া বললেন, আমরা নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ। মাছ-মাংস এখন আশাও করি না। শেষ ভরসা সবজি, সেটাতেও আগুন। ডিম-ডাল-আলু দিয়ে ভাত খেতেও এখন কষ্ট হয়ে যায়।

ক্রেতা শরীফ রুবেল বলেন, আগে বাজারে গেলে ৫০০ টাকায় ব্যাগভর্তি সবজি কেনা যেত। এখন ব্যাগের তলাও ভরে না। যা কিনতে যাই- বিরক্ত লাগে, অস্বস্তি লাগে। একেবারে কম হলেও ৫০-৬০ টাকার নিচে কিছু নেই। বাজারে এলে অনেকটা হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়।

এদিকে সবজি বিক্রেতারা বলছেন, শীতের সবজি বাজারে এলেও চাহিদার অনুপাতে তা খুব কম। ক্রেতাদের চাহিদামতো কিনতে পারছি না। বাধ্য হয়ে একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। সার ও কীটনাশকের দাম অনেক বেশি, শ্রমিক মজুরিও অনেক। কৃষক পর্যায় থেকেই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। অপরদিকে সম্প্রতি ডিমের দাম হঠাৎ করে বেড়ে যায়। ডজনে দাম হয়ে গিয়েছিল ১৮৫ টাকা, যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ। তবে বর্তমানে ফার্মের মুরগির ডিম ডজনে ১৬০ এবং হালিতে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া হাসের ডিমের হালি ৬৫-৭০ টাকা। মাছের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ইলিশ মাছ ধরা ও বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় অন্যান্য দেশি মাছের দাম বেড়েছে। নদীর মাছের দাম আকাশছোঁয়া। স্থানভেদে পাঙ্গাশ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি দরে। অল্প কম-বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে চাষের কই ও তেলাপিয়া। এক কেজির রুই-কাতলার দাম হাঁকানো হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজি। দুই থেকে আড়াই কেজির রুই-কাতলার দাম কেজিতে ৩৭৫ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া স্থানভেদে শোল মাছ প্রতি কেজি ৬০০-৬৫০ টাকা এবং শিং মাছ ও বাইলা মাছ প্রতি কেজি প্রকারভেদে ৬০০-৬৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজার করতে আসা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী শামীম হাসান বলেন, শুক্রবার এলেই সবজি, মাছ-মাংসের দাম আর এক ধাপ বেড়ে যায়। পরশু বাজার করে নিয়ে গেছি, ঢেঁড়স ছিল ৫০ টাকা, আজকে নাকি ৮০ টাকা। দুদিনেই দেশে কী এমন হয়ে গেল যে ৩০ টাকা দাম বেড়ে গেল? তার মানে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ায়। আর ব্যবসায়ীদের এই অনিয়ম যেন দেখার কেউ নেই।

তিনি বলেন, হয়তো এ দাম কিছু মানুষের জন্য কিছুই না, আমাদের মতো মধ্য-নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষের জন্য অনেক কিছু। ৫০০ টাকা বাজারে নিয়ে গেলে ব্যাগ অর্ধেকও ভরে না, অথচ গত বছরখানেক আগেও এমন ছিল না।

আবার মাংসের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির দাম ১৯০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। এছাড়া সোনালি জাতের মুরগির কেজি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা। পাকিস্তানি মুরগি ৩৪০-৩৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগি কিনতে কেজিতে খরচ হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা। কিছু স্থানে ৭০০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গরুর মাংস ৮০০ টাকা, খাসির মাংস ১১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। স্থানভেদে কম-বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে ব্রয়লার মুরগিসহ বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর জানিয়েছে বাজার তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। সংস্থাটির ঢাকা অফিসের প্রধান আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, ব্রয়লার মুরগিসহ অন্যান্য পণ্য সরকার নির্ধারিত দামেই বিক্রি হচ্ছে। বাজার মনিটরিং করার জন্য আমাদের টিম রয়েছে যারা প্রতিদিনই অভিযান পরিচালনা করছে। কয়েকটি জায়গায় অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি দামে বিক্রি করলেও তাদেরকে আমরা জরিমানার আওতায় আনছি।

সাহানা আখতার নামে একজন বলেন, আজকের বাজারে সবকিছুরই দাম বেশি মনে হচ্ছে। মুলার কেজি ৮০ টাকা, যা সাধারণত ৩০/৪০ টাকার মধ্যেই থাকে। বাজারে সিম এসেছে অন্তত আরও ১৫-২০ দিন আগে, অথচ দাম এখনো ২০০ টাকা কেজি। দাম জিজ্ঞেস করে চলে আসা ছাড়া আর কিছু করার আছে?

তিনি আরও বলেন, বাজারে জিনিসপত্রের এতো দাম, আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কেনার অবস্থা নেই। যে সবজিরই দাম জিজ্ঞেস করি, ৭০/৮০ টাকার নিচে কিছুই নেই। বাজারে এলেই হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়। মাছ-মাংস কেনার অবস্থা নেই। ভর্তা-ভাত, সবজি খেয়ে থাকব সেটাও অবস্থা নেই। আমরা গরিব মানুষ কতটা বিপদে আছি বলে বোঝানোর ভাষা নেই।

এদিকে নিম্ন আয়ের মানুষের পুষ্টির অন্যতম অনুষঙ্গ ডিমের উচ্চমূল্যে অস্থির বাজার। গত সপ্তাহের তুলনায় ডজনপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। দেশি মুরগির পাশাপাশি ব্রয়লার মুরগির দামও ঊর্ধ্বমুখী। খাসি এগারোশ’ টাকা কেজি ও গরুর মাংস আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। ভোজ্য তেল, ডালে কিছুটা স্বস্তি থাকলেও গরম মসলার বাজার চড়া। চালের মজুত থাকায় বাজার স্থিতিশীল আছে।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ