ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাজারে কমছে না উত্তাপ, ক্রেতাদের অস্বস্তি

প্রকাশনার সময়: ১৩ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৪০

‘শুক্রবার এলেই সবজি, মাছ-মাংসের দাম বেড়ে যায়। অথচ এখন শীতকালের সবজি বাজারে উঠতে শুরু করেছে। তবুও বাজারে দাম অনেক বেশি। গত দুইদিন আগে ডাটা শাক এক আটি কিনলাম ১৫ টাকা দিয়ে, আর আজকে একই ডাটা শাক এক আটি কিনতে হলো ২৫ টাকা দিয়ে। অথচ দুই দিনের মধ্যে দেশে এমন কিছু হয়নি যে তার জন্য এক আটি শাকে ১০ টাকা বাড়বে।’ রাজধানীর উত্তরা আজমপুর কাঁচাবাজারে বাজার করতে এসে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মো. নাজমুল হক।

বাজার করতে এসে এমন অভিযোগ শুধু নাজমুল হকের একার নয়, এমন অভিযোগ এখন সব মানুষের। কারণ, নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তদের ওপর চাপ আরও বাড়ছে। ফলে বাজারের তালিকায় কাটছাঁট করতে হচ্ছে তাদের। অধিকাংশ মানুষ অস্বাভাবিক বাজার দরে ক্ষোভ প্রকাশও করছেন।

জানা গেছে, শীতকালে বাজারে সাধারণত লাউ, মিষ্টি কুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, দেশি পিঁয়াজ, ভারতীয় পিঁয়াজ, বেগুন, মুলা, লালশাক, পালংশাক, পটোল, ঢেঁড়স, বরবটি, ঝিঙা, পেঁপে, আলু, করলা, কচু, শসাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজিতে ভরপুর থাকে। তবে এ বছর টানা বৃষ্টির কারণে সবজি উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। যে কারণে বাজারে সবজি তুলনামূলক কম। তাই, সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরেই থাকছে শীতের সবজি।

রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে সিম বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি, টমেটো ১০০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা, মুলা ৭০ টাকা, পটল ৮০, মিষ্টি কুমড়া ৫০ (কেজি), পেঁপে ২৫ টাকা, কাঁচামরিচ ২০০ টাকা কেজি। এ ছাড়াও শসা ৮০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, আলু ৫৫ টাকা কেজি, ফুলকপি ৪০ টাকা (ছোট), বাঁধাকপি ৩০ টাকা (ছোট) দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজার করতে আসা সাহানা আখতার নামে একজন বলেন, ‘আজকের বাজারে সবকিছুরই দাম বেশি মনে হচ্ছে। মুলার কেজি ৮০ টাকা, যা সাধারণত ৩০/৪০ টাকার মধ্যেই থাকে। বাজারে সিম এসেছে অন্তত আরও ১৫-২০ আগে, অথচ দাম এখনো ২০০ টাকা কেজি। দাম জিজ্ঞেস করে চলে আসা ছাড়া আর কিছু করার আছে?’

তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে জিনিসপত্রের এতো দাম, আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কেনার অবস্থা নেই। যে সবজিরই দাম জিজ্ঞেস করি, ৭০/৮০ টাকার নিচে কিছুই নেই। বাজারে এলেই হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়। মাছ-মাংস কেনার অবস্থা নেই। ভর্তা-ভাত, সবজি খেয়ে থাকবো সেটাও অবস্থা নেই। আমরা গরীব মানুষ কতোটা বিপদে আছি বলে বোঝানোর ভাষা নেই।’

এদিকে বাজারে ডিমের বাজারেও চলছে অস্থিরতা। শেষ এক সপ্তাহে প্রতি হালি ডিমের দাম পাঁচ টাকা বেড়ে ৫৫ থেকে ৫৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড়বাজারে কিনলে ডিমের ডজন পড়ছে ১৬০ টাকা, যা পাড়া-মহল্লার খুচরা দোকানে ১৬৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে। অর্থাৎ, ভোক্তাদের এখন একটি ডিম কিনতে গুনতে হচ্ছে ১৫ টাকা। অথচ সরকার প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে।

অন্যদিকে সরকারের দাম বেঁধে দেওয়া আরেক পণ্য পেঁয়াজ। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি এ পণ্যটির দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। এখন দেশি ভালোমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে। আর আমদানি করা পেঁয়াজ ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার পণ্যের দাম বেঁধে দিলেও আমরা সেই দামে বিক্রি করতে পারছি না। এর চেয়ে বেশি দামেই আমাদের আড়ত থেকে কিনতে হচ্ছে। তাহলে বিক্রি করবো কিভাবে? এখানে দাম সব পর্যায়েই বেশি তাই দাম নির্ধারণ করে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যাবে না।

কারওয়ান বাজারের শহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘পণ্যের মূল্য আড়ত থেকেই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে সাধারণ ব্যবসায়ীদের। আড়ত মালিকদের দাম কমানোর বিষয়ে কথা বললে তারা নানা অজুহাত দেখিয়ে কথা ঘুরায়। তাহলে এখানে স্বচ্ছ বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠবে কিভাবে। আগে মাথা ঠিক করতে হবে। জবাবদিহিতার জায়গা নিশ্চিত করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভ্রাম্যমান আদালত বাজারে এসে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করলে জরিমানা করে যায়। অথচ বড় বড় আড়তে গিয়ে কিছুই করতে পারে না।’

নয়াশতাব্দী/এমটি

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ