ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিশ্বে কমেছে মুরগি-তেলের দাম, বেড়েছে দেশে

প্রকাশনার সময়: ০৮ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:২৬

আন্তর্জাতিক বাজারে মুরগির মাংস ও তেলের দাম কমলেও দেশের বাজারে বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মাসিক খাদ্যের মূল্যসূচক (এফএফপিআই) অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর মাসে খাদ্যদ্রব্য, মাংস, তেল ও দুগ্ধজাত পণ্যের দাম বিশ্ববাজারে কমেছে। শুধু দানাদার খাদ্য ও চিনির দাম বেড়েছে। শুক্রবার সংস্থাটির সদর দপ্তর রোম থেকে সূচকের ওপর প্রতিবেদন করা হয়।

এফএফআইপি অনুযায়ী, মাংসের গড় মূল্যসূচক কমেছে ১.২ পয়েন্ট। সেপ্টেম্বরে গড় মূল্যসূচক ছিল ১১৪.২ পয়েন্ট, যা আগস্টে ছিল ১১৫.৪। সে হিসাবে কমেছে ১.২ পয়েন্ট (১.০ শতাংশ)। সূচক অনুযায়ী, এ নিয়ে টানা তিন মাস আন্তর্জাতিক বাজারে মাংসের মূল্য কমেছে। আর এক বছর আগের চেয়ে দাম কমেছে ৬.১ পয়েন্ট (৫.০ শতাংশ)। এফএওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে মুরগির মাংসের দামও কমেছে। কেননা ব্রাজিল প্রচুর পরিমাণে মুরগি সরবরাহ করছে। চীন ও মধ্যপ্রাচ্যে স্থির চাহিদা থাকা সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়া থেকে উচ্চ সরবরাহের কারণে ধীর গতিতে হলেও মুরগির মাংসের দাম টানা পাঁচ মাস ধরে কমছে। রাজধানী ঢাকার কারওয়ান বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজিতে।

অথচ গত শুক্রবারে বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকা কেজি। খাসির মাংস আগের মতোই ১১০০ টাকা ও গরুর মাংস ৭৫০-৭৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লেয়ার মুরগি ৩১৫ টাকা, পাকিস্তানি ৩০০ টাকা কেজি এবং দেশি মুরগি আগের মতোই ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এফএফপিআই অনুযায়ী, দানাদার খাদ্যের গড় মূল্য সেপ্টেম্বরে ছিল ১২৬.৩ পয়েন্ট, যা আগস্টে ছিল ১২৫.৫ পয়েন্ট। সে হিসাবে এ মাসে দানাদার খাদ্যের মূল্যসূচক বেড়েছে ১.৩ পয়েন্ট (১ শতাংশ বেড়েছে)। কিন্তু গত এক বছর আগের মূল্যের চেয়ে ২১.৬ পয়েন্ট (১৪.৬ শতাংশ) কমেছে। সেপ্টেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে মোটা শস্যের দাম ৫.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। ক্রমাগত সাত মাস মূল্য পতনের পর সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে ভুট্টার দাম ৭.০ শতাংশ বেড়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ব্রাজিলে জোগানের জোরালো চাহিদা, আর্জেন্টিনায় চাষিদের ধীর বিক্রিসহ বিভিন্ন কারণ। বার্লির দাম ছিল স্থিতিশীল। বিপরীতে রাশিয়ান ফেডারেশনে পর্যাপ্ত সরবরাহের কারণে আন্তর্জাতিক গমের দাম ক্রমাগতভাবে কমেছে। প্রতি মাসে কমের পরিমাণ ছিল ১.৬ শতাংশ।

এফএফপিআই অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে চিনির গড় মূল্যসূচক ছিল ১৬২.৭ পয়েন্ট, যা আগস্টে ছিল ১৪৮.২ পয়েন্ট। সে হিসাবে ১৪.৫ পয়েন্ট (৯.৮ শতাংশ) বেড়েছে। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় মাস দাম বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। জুলাই মাসে মূল্যসূচক ছিল ১৪৬.৩ পয়েন্ট। ২০১০ সালের নভেম্বরের পর থেকে গত সেপ্টেম্বরে এ দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। দাম বৃদ্ধির কারণ মূলত বৈশ্বিক সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ। আগামী ২০২৩-২৪ মৌসুমে চিনি উৎপাদনকারী দেশ থাইল্যান্ড এবং ভারতে উৎপাদন কমার ইঙ্গিত রয়েছে। কেননা এল নিনোর কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে আবহাওয়া বেশি শুষ্ক রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ও চিনির দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। অনুকূল আবহাওয়ার মধ্যে বর্তমানে ব্রাজিলে ফসল কাটা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের বিপরীতে ব্রাজিলিয়ান রিয়ালের দুর্বলতায় বিশ্বে চিনির দাম মাসে মাসে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এফএওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগস্টের চেয়ে সেপ্টেম্বরে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যসূচক কমেছে শূন্য দশমিক ১ পয়েন্ট। আগস্টে খাদ্যদ্রব্যের সূচক ছিল ১২১.৫ পয়েন্ট, যা সেপ্টেম্বরে কমে হয় ১২১.৫ পয়েন্ট। খাদ্যদ্রব্যে মূলত চাল ও আটাজাতীয় পণ্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে। সেপ্টেম্বরে সব ধরনের চালের দাম ০.৫ শতাংশ কমেছে। ভারতের চাল রপ্তানিতে বিধিনিষেধ এবং এশিয়ায় নতুন ফসল কাটার আগে সরবরাহ ক্রমান্বয়ে কম হওয়ার কারণে দাম বৃদ্ধির প্রবণতা ছিল। সেপ্টেম্বরে ভোজ্য তেলের মূল্যসূচক ছিল ১২০.৯ পয়েন্ট, যা আগস্টে ছিল ১২৫.৮ পয়েন্ট। সে হিসাবে ৪.৯ শতাংশ কমেছে। টানা দ্বিতীয় মাস থেকে পাম, সূর্যমুখী, সয়াবিন তেলের দাম বিশ্বে কমের দিকে। সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে পাম তেলের দাম কমার কারণ হিসেবে প্রধানত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রধান উৎপাদক দেশগুলোতে মৌসুমি উচ্চ উৎপাদনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্বে সূর্যমুখী তেলের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমছে।

দুগ্ধজাত পণ্যের দাম কমছে ৯ মাস ধরে। গত মাসে দুগ্ধজাত পণ্যের গড় মূল্যসূচক ছিল ১০৮.৬ পয়েন্ট, যা আগস্টে ছিল ১১১.২ পয়েন্ট। সে হিসাবে ২.৫ পয়েন্ট (২.৩ শতাংশ) কমেছে। ৯ মাস ধরে দাম কমছে। গত বছরের একই মাসের মূল্যের চেয়ে ৩৪.১ পয়েন্ট কমল (২৩.৯ শতাংশ)। সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে সব দুগ্ধজাত পণ্যের দাম কমেছে। দাম কমার কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, নিউজিল্যান্ডের নতুন উৎপাদন মৌসুমে রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমিত অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং মার্কিন ডলারের বিপরীতে দুর্বল ইউরোর প্রভাব আন্তর্জাতিক দুগ্ধজাত পণ্যের দামের ওপর প্রভাব ফেলে থাকে। যদিও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলে মাসের শেষের দিকে কিছু দুগ্ধজাত পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ