ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাঁধনহারা তিন পণ্য, বাড়ছে ক্রেতাদের ক্ষোভ

প্রকাশনার সময়: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৪৬

দুই সপ্তাহ আগে সরকার আলু-পেঁয়াজ-ডিম এই তিন পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছেল। কিন্তু দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও বেঁধে দেয়া দাম বাজারে কার্যকর হয়নি। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর অভিযান চালিয়েও দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে আলু-পেঁয়াজ-ডিম। দাম বেঁধে দিয়েও সেই নির্দেশ মানার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের বাঁধা যায়নি। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে সরেজমিন এ চিত্র দেখা যায়।

১৪ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের দাম নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী তিন কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণের সিদ্ধান্ত জানান। সে অনুযায়ী প্রতি কেজি পেঁয়াজের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য হবে ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। আলু কেজিতে ভোক্তা পর্যায়ে ৩৫-৩৬ টাকা এবং কোল্ড স্টোরেজ থেকে ২৬-২৭ টাকা। ডিমের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য প্রতি পিস ১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপরও দাম নিয়ন্ত্রণে না এলে ডিম আমদানির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। এরমধ্যে ১০ কোটি পিস ডিম আমদানির অনুমতিও দেয়া হয়েছে। গতকাল রাজধানী মিরপুর ১ নম্বার কাঁচাবাজারে দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকা, ক্রস জাতের পেঁয়াজ ৮৫ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় পেঁয়াজ এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা বেশিতে।

গত সপ্তাহে এ পেঁয়াজের দাম ছিল ৬০ টাকা। এই বাজারে আলু ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া বাজারগুলোতে লাল ডিমের ডজন ১৫০ টাকা, হাঁসের ডিম ২২০ টাকা, দেশি মুরগির ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। এদিকে গত কয়েক মাসে যেসব সবজির দাম বেড়েছে, তা কমার নাম নেই। বরং ক্রেতার মনে নতুন করে দাম বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। দিন যত এগোচ্ছে, বাজার দরের ওপর ক্রেতাদের ক্ষোভ যেন ততই বাড়ছে। ক্রেতারা বাজারে গেলেই জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির উত্তাপে একপ্রকার নাস্তানাবুদ হচ্ছেন বলে দাবি তাদের।

মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদ বাজারে শুক্রবার সকালে সবজি কিনতে এসেছিলেন মোহাম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, এক কেজি বেগুন ৮০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত! উত্তরবঙ্গে কত? গাড়ি ভাড়া এত বেশি? দোকানদাররা আমাদের বুঝায় দাম বেশি। কি বুঝায়? আব্দুল আউয়াল নামের আরেকজন ক্রেতা বলেন, কৃষক সবজি বিক্রি করতে পারে না। দাম পায় না। বাধ্য হয়ে ফেলে দেয়। আর আমাদের এখানে চড়া দামে কিনতে হয়। এ ক্রেতার অভিযোগ, কোনো পণ্যের দাম মাত্রাতিরিক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত বাজার সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টিগোচর হয় না।

এসময় বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে, একই দামে বিক্রি হচ্ছে ধুন্দল, বরবটি ও চিচিঙ্গা। ঢেঁড়সের কেজি ৬০ টাকা। প্রতি কেজি শসা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। লাউয়ের পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকা। জালি কুমড়া ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কলার হালি ৩০ টাকা, লেবুর হালি ১০ থেকে ২০ টাকা, ধনিয়া পাতার কেজি ৪০০ টাকা। কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে। মুদি বাজারে প্রতি কেজি আলু ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ছোট আকারের বাঁধাকপি কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ফুলকপি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এ ছাড়াও মুলা ৪০ টাকা, পাকা টমেটো ১০০ থেকে ১৪০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা, গাজর ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে শিম পাওয়া যাচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। তবে সোনালি ও দেশি মুরগি আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না আলু, পেঁয়াজ, ডিম। চাল এবং শাকসবজির দামও বাড়তি। ১২ নম্বর সেকশনের মুসলিম বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী শরিফুজ্জামান বলেন, গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০-১৮০ টাকায় বিক্রি করেছি। এ সপ্তাহে দাম ১০-২০ টাকা কমেছে। তবে অন্য কোনো মুরগির দাম কমেনি। প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ২৯০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা কেজিতে।

বাজারগুলোতে লাল ডিমের ডজন ১৫০ টাকা, হাঁসের ডিম ২২০ টাকা, দেশি মুরগির ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩ টাকায়। যদিও সরকার প্রতি পিস ডিম ১২ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। আর গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজিপ্রতি ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মাহমুদুল হাসান বলেন, আজকের বাজারে সবকিছুরই দাম বেশি মনে হচ্ছে। বাজারে এলেই ঘাম ছুটে যায়।

তিনি বলেন, বাজারে কোনো পণ্যের দামে নিয়ন্ত্রণ নেই। ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছে মতো যখন ইচ্ছে দাম বাড়িয়ে নিচ্ছে। আমি মনে করি এটা সরকারের বড় ব্যর্থতা। বাজারে শিম এসেছে আরও দুই সপ্তাহ আগে, তারপরও দাম এখন ২০০ টাকা কেজি। রোকেয়া আক্তার নামে আরেক ক্রেতা বলেন, বাজারে জিনিসপত্রেন এত দাম, আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কেনার অবস্থা নেই। যে সবজিরই দাম জিজ্ঞেস করি, ৫০/৬০ টাকার নিচে কিছুই নেই। বাজারে এলেই হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়। তিনি বলেন, মাছ-মাংস কেনার অবস্থা নেই। ভর্তা-ভাত, সবজি খেয়ে থাকব সেটারও অবস্থা নেই। আমরা গরিব মানুষ কতটা বিপদে আছি বলে বোঝানোর ভাষা নেই।

সবজির দাম প্রসঙ্গে রামপুরা বাজারের সবজি বিক্রেতা নুরুজ্জামান বাবু বলেন, শীতের সবজি বাজারে এলেও চাহিদা অনুপাতে পরিমাণ খুবই কম। আমরাও চাহিদা মতো আড়ত থেকে কিনতে পারছি না। যে কারণে বাধ্য হয়েই একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। এদিকে বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে চালের দাম। তবে মৌসুম অনুযায়ী চালের দাম বাড়তি বলে ক্রেতা ও বিক্রেতারা জানিয়েছেন। বাজারে প্রতি কেজি সরু বা চিকন চাল ৭০-৮০ টাকা, আটাশ চাল ৫৫-৬০ টাকা, মোটা চাল ৪৫-৫০ টাকা, নাজির চাল ৭০-৮৫ টাকা, বাসমতি চাল ৮৯-৯০ টাকা, চিনিগুঁড়া চাল ১২০-১৫০ টাকা, কাটারি ৮০-৯০ টাকা, আমন ৬৫ টাকা, আউশ ৭৫ টাকা ও জিরাশাইল ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ