ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রযুক্তিতে বড় বিনিয়োগ

প্রকাশনার সময়: ২৭ আগস্ট ২০২৩, ০৭:১৬

ডলার সংকটে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছেই। সরকার ধার নিয়ে চলছে। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমছে। ঋণ খেলাপিদের চাপে ন্যুব্জ ব্যাংকিং খাত। বলা চলে কঠিন সময় চলছে দেশীয় অর্থনীতিতে। এই কঠিন সময়ও নতুন প্রযুক্তিতে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশের পোশাক, টেক্সটাইল ও অ্যাকসেসরিজ প্রস্তুতকারকরা।

আগামী দুই বছরে শিল্পের দৃশ্যপট পাল্টে দেয়ার পরিকল্পনা কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা জানিয়েছেন, প্রখ্যাত আটটি কোম্পানি প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগ করছে। এ উদ্যোগ তাদের পোশাক, টেক্সটাইল এবং অ্যাকসেসরিজ ইউনিটগুলোতে ৫০ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কৃত্রিম বা ম্যানমেড ফাইবার ও ফ্যাব্রিক, রিসাইকেলড ফাইবার, অটোমেটেড যন্ত্রপাতি এবং গার্মেন্ট ও অ্যাকসেসরিজ উৎপাদনের জন্য রোবটিক প্রযুক্তিসহ আসন্ন নতুন প্রযুক্তিগুলো এ খাতের রপ্তানি ঝুড়িতে বৈচিত্র্য আনার পাশাপাশি শিল্পের সামগ্রিক উৎপাদন প্রক্রিয়াকে গতিশীল করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

যেসব বৃহৎ প্রতিষ্ঠান এ উদ্যোগে নেতৃত্ব দিচ্ছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: হামীম গ্রুপ, ডিবিএল গ্রুপ, প্যাসিফিক জিন্স, টিম গ্রুপ, উইন্ডি গ্রুপ, নিপা গ্রুপ, শাশা ডেনিম ও ইনডেট গ্রুপ।

এ শিল্পগোষ্ঠীগুলো উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে এবং আন্তর্জাতিক তৈরি পোশাক (আরএমজি) রপ্তানির বাজারে নিজেদের হিস্যা বাড়াতে নতুন কারখানা স্থাপন করছে। উদ্যোক্তারা বলেন, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখন চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু তা সত্ত্বেও শিল্পের ভবিষ্যৎ নিরাপদ করতে এবং ব্যবসার ভিত্তিতে বৈচিত্র্য আনতে কৌশলগত পদক্ষেপের অংশ হিসেবে তারা এ বিনিয়োগ করছেন।

পশ্চিমা বাজারে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষণ দেখা যাওয়ায় আগামী বছর নাগাদ পোশাক ব্যবসা ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা। তবে তারা এ-ও স্বীকার করেন যে ডলারের অস্থিতিশীল বিনিময় হার ও বিঘ্নিত ইউটিলিটি সরবরাহের মতো চ্যালেঞ্জগুলো এখনও শিল্পের জন্য বাধা হিসেবে রয়ে গেছে। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রেতারাও আশা প্রকাশ করেন যে আগামী বছরের মধ্যে বাজার ইতিবাচক ধারায় ফিরতে পারে।

বাংলাদেশে জি-স্টার র-এর কান্ট্রি ম্যানেজার শফিউর রহমান বলেন, ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি যদি আরও খারাপ না হয়ে একই রকম থাকে, তাহলে যারা তাদের আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী বিনিয়োগ অব্যাহত রাখছে, তারাই সম্ভবত সুফল পাবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগের সঙ্গে সম্পর্কিত সম্ভাব্য ঝুঁকির কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

অন্যতম শীর্ষস্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারক হামীম গ্রুপ সম্প্রতি দুটি নতুন ইউনিট চালু করেছে—এর মধ্যে একটি গার্মেন্ট-কাটিং ওয়েস্ট রিসাইক্লিং ইউনিট, অপরটি আউটারওয়্যার (অন্য কাপড়ের ওপর যে পোশাক পরা হয়) কারখানা। কোম্পানি সূত্র জানায়, দুটি ইউনিটেই তাদের প্রাথমিক বিনিয়োগ প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা।

হামীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, তারা চলতি বছরের এপ্রিলে ৩টি উৎপাদন লাইন নিয়ে আউটারওয়্যার প্রকল্পটি চালু করেছেন। ডিসেম্বরের মধ্যে উৎপাদন লাইন সম্প্রসারিত করে ১৬টি করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে ব্যবসা টেকসই করার জন্য তাদের কৌশলগত মনোযোগ এখন পোশাক উৎপাদনের সক্ষমতা বৃদ্ধি থেকে বৈচিত্র্যের দিকে সরে গেছে।

এছাড়া হামীম গ্রুপ ২০২৪ সালের মধ্যে পুনর্ব্যবহূত সুতা (ইয়ার্ন) থেকে ফ্যাব্রিক উৎপাদনে যেতে চায়।

এছাড়া আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন ও উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে উইন্ডি গ্রুপ ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে পুরোদমে চালু হলে প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বর্তমানে তাদের রপ্তানি প্রায় ১৯০ মিলিয়ন ডলার। আরেক বৃহৎ পোশাক রপ্তানিকারক প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপ চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) ৭.৫ লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে একটি নতুন উৎপাদন কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে ৩১.৭৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে।

প্যাসিফিক অ্যাটায়ারস লিমিটেড নামের এই নতুন কারখানাটি স্যুট, ব্লেজার, জ্যাকেট, কোট, ড্রেস প্যান্ট ও ক্যাজুয়াল পোশাকসহ উচ্চমূল্যের আনুষ্ঠানিক পোশাকে উৎপাদন করবে। শাশা ডেনিম তাদের টেক্সটাইল সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি একটি সবুজ পোশাক ও ওয়াশিং ইউনিট স্থাপনে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। তাদের প্রাথমিক বিনিয়োগের পরিমাণ হবে ২০০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় পর্যায়ে বাড়তি বিনিয়োগের পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের। তবে ডলারের বিনিময় হার বাড়লে মূল প্রাক্কলনের চেয়ে বেশি বিনিয়োগ করতে হতে পারে।

গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলায় হাসিন ইকো টেক্সটাইল নামে একটি কৃত্রিম ফাইবারভিত্তিক ফ্যাব্রিক কারখানা ও ডাইং কারখানা স্থাপনে ৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে নিপা গ্রুপের। ইনডেট গ্রুপ প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে একটি সবুজ শিল্প পার্ক প্রতিষ্ঠা করছে। এছাড়া তারা এই উদ্যোগের জন্য প্লাটিনাম গ্রিন সনদ চেয়ে আবেদন করেছে।

জানা যায়, গ্রুপটি চলমান অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও নির্মাণ কাজ চলছে। ইতোমধ্যে অনেকগুলো এলসি খুলেছে তারা। কিছু এ বছর খোলা হবে। ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে এ শিল্প পার্ক চালু হওয়ার কথা রয়েছে। একই অঙ্গনে অ্যাকসেসরিজ ও প্যাকেজিংয়ের বিস্তৃত উৎস হবে এই পার্ক। এই প্রকল্পটি রপ্তানি আয়কে দ্বিগুণ করতে পারে। ২০২২-২৩ সালে ইন্ডেট গ্রুপের বার্ষিক টার্নওভার ছিল ৩৬ মিলিয়ন ডলার।

টিম গ্রুপ তাদের সোয়েটার ও নিট কম্পোজিট উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে এবং একটি ডেনিম গার্মেন্ট ইউনিট, একটি জিরো ডিসচার্জ ওয়াশিং প্লান্ট এবং একটি আউটওয়্যার কারখানার জন্য অ্যাকসেসরিজ ও কৃত্রিম ফাইবারভিত্তিক কাপড়ের কারখানাসহ নতুন ফ্যাসিলিটি স্থাপন করতে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। ডিবিএল গ্রুপ শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলে টেক্সটাইল, সিরামিকস ও ফার্মাসিউটিক্যালসসহ একাধিক খাতে সক্রিয়ভাবে প্রায় ৬৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে।

এছাড়া গ্রুপটি এ বছরের শেষের দিকে তাদের টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। উইন্ডি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেসবাহ উদ্দিন খান বলেন, ২০২২ সালের নভেম্বরে চালু হওয়া তাদের নতুন ওয়াশিং প্রকল্পটিসহ নতুন প্রকল্পগুলোতে প্রায় ৮ হাজার কর্মসংস্থান তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই উদ্যোক্তা আরও বলেন, সবুজ শিল্পের জন্য তাদের আরেকটি বড় প্রকল্প রয়েছে। সেটি এখন নকশা প্রণয়নে পর্যায়ে রয়েছে। বাস্তবায়নের পর এ প্রকল্পের লক্ষ্য ২০২৯-৩০ সালের মধ্যে কোম্পানির রপ্তানি ৫০০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা। প্যাসিফিক জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, এ ইউনিটটি চলতি বছরের নভেম্বরের মধ্যে উৎপাদন শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ