ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পেঁয়াজে আবার সেঞ্চুরি

প্রকাশনার সময়: ২১ আগস্ট ২০২৩, ২৩:৫১ | আপডেট: ২২ আগস্ট ২০২৩, ১৭:৪২
ফাইল ছবি

ক্রমশই লাগামহীন হয়ে পড়ছে নিত্যপণ্যের বাজার। দ্রব্যমূল্যের এমন ঊর্ধ্বগতিতে অসহনীয় অবস্থায় বিবাদে জড়াচ্ছেন ক্রেতা-বিক্রেতা। মূলত পণ্যের দাম নিয়ে অসন্তোষ থেকেই সৃষ্টি হচ্ছে এমন পরিস্থিতি। একটু একটু করে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ অবস্থা নতুন করে তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি যেখানে এমন, সেখানে নতুন করে আবারও দুঃসংবাদে ‘বোবা কান্না’ নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের।

তথ্য বলছে, গত শনিবার ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা জানায়। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর এই শুল্ক বহাল রাখা হবে বলে ভারত সরকারের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়। এই খবরে আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। এক দিনের ব্যবধানে খুচরায় ৫৫ টাকার ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায়।

জানা যায়, ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর দেশে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এরমধ্যে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে বেশি। বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫-১০০ টাকা কেজি দরে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশি পেঁয়াজের দামও ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। যা খুচরায় পেঁয়াজের দাম শতকে ঘরে ছুঁয়েছে।

বিক্রেতারা বলছেন, আমদানিকারকদের থেকে কিনে তারপর পেঁয়াজ বিক্রি করা হয়। এখন তারা যা বলবেন, আমরা তা করতেই বাধ্য। তারা সুযোগ পেয়েছেন, তাই দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে আমাদের বাড়তি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। আর বাড়তি দামে পেঁয়াজ কিনে সামান্য লাভে আমরা পেঁয়াজ বিক্রি করছি। আমদানিকারকরা যদি দাম কমায় আমরাও কম দামে কিনে কম দামে বিক্রি করতে পারবো।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, সপ্তাহখানেক হলো পেঁয়াজের দাম বাড়তি। কেজিপ্রতি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৯০-৯৫ টাকায়। আবার কোথাও ১০০ টাকাও বিক্রি করা হচ্ছে। পরিমাণে বেশি নিলে বা পরিচিত ক্রেতা হলে একটু কমও রাখছি আমরা। তবে দাম তুলনামূলকভাবে বেশিই বলা হয়।

তিনি বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা জানা গেছে। তবে পেঁয়াজের ওপর বাড়তি শুল্ক এখনও কার্যকর হয়নি। কিন্তু শুল্ক কার্যকর না হওয়ার আগেই হিলি পেঁয়াজ পয়েন্টে দাম বেড়ে গেছে। ফলে আমাদেরও বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে।

ক্রেতারা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি একের পর এক নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফার আশায় সাধারণ মানুষে পকেট কাটছে। যে গত কয়েকদিনের তুলনায় অনেক বেশি। কেজিপ্রতি পেঁয়াজের মূল্য ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যাওয়া কমকিছু নয়। যেটা আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে কঠিন করে তুলেছে। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুতই কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

কারওয়ান বাজারে মো. ইকবাল নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘মাত্র ২ দুইদিনের ব্যবধানে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম এত বেশি বেড়ে যাওয়া অনেকটা রহস্যজনক মনে হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম যে হারে বেড়েছে তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। আরেকটু কমলে ভালো।’

হিলি স্থলবন্দরের তথ্যমতে, শনিবার যে পেঁয়াজের পাইকারি বাজার ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা, সোমবার সেই পেঁয়াজ প্রকারভেদে পাইকারদের নিতে হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে। এক দিনের ব্যবধানে বন্দর বাজারে আমদানিকারকরা পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ১২ থেকে ১৫ টাকা বেশি দরে। হঠাৎ দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েন পেঁয়াজ কিনতে আসা পাইকাররা। গত শনিবার ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। আর এই ঘোষণার পরই দাম বাড়ে পেঁয়াজের।

যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান মনে করেন, আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ৪০ শতাংশ শুল্কসহ এলসি করা পেঁয়াজ এখনো দেশে আসেনি, কিন্তু ব্যবসায়ীরা এই ঘোষণার পরই দেশের বাজারে দাম বাড়িয়েছেন।

দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ভারতের বাড়তি রফতানি শুল্ক উল্লেখ করে এক পেঁয়াজ আমদানিকারক বলেন, পেঁয়াজের সরবরাহ নেই। তাই দাম বেশি। সামনে বাড়তি শুল্কের পেঁয়াজ আসলে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়বে ৬৫ টাকা। আমরা তো এখনই ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছি। মূলত ভারতের শুল্ক আরোপ করায় দাম ঊর্ধ্বমুখী।

পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, ‘ভারতের শুল্কারোপিত পেঁয়াজের সরবরাহ এখনো শুরু হয়নি। এর পরও দেশের ব্যবসায়ীরা আগের কম দামের আমদানি করা পেঁয়াজ বাড়তি দামে বিক্রি করছেন। একদিনের ব্যবধানে আগের পেঁয়াজ বেশি দামে বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা শতকোটি টাকা সাধারণ ভোক্তার কাছ থেকে আদায় করে নিয়েছেন। প্রশাসনের উচিত বাজার তদারকির মাধ্যমে অতিমুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ