ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আশ্রয়ণের ঘরে মানবেতর জীবনযাপন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের

প্রকাশনার সময়: ১৬ ডিসেম্বর ২০২২, ১৫:০৭

মনোয়ারা বেগম, বয়স ৬৫ পেরিয়েছে। দুই মেয়ে ও এক ছেলের জননী তিনি। মুক্তিযোদ্ধা স্বামীকে হারিয়েছেন ২৫ বছর আগে। তারপর থেকে একাই সংসার সামলাচ্ছেন তিনি। এখন শরীরে আগের মত শক্তি নেই। নানা অসুস্থতা নিয়ে চলাফেরা করতে হয় তাকে। তবে বিধিবাম এখনো শান্তির প্রবাহ আসেনি জীবনে। নয় সদস্য বিশিষ্ট পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।

ঠাকুরগাঁও পৌরসভার মুসলিমনগর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা (বেসামরিক গেজেট নং-৪৭০, লাল মুক্তি-৩১০০১০৬৪৬) মৃত শাহজাহান আলীর সহধর্মিণী মনোয়ারা বেগম। বর্তমানে তারা সদর উপজেলার সালান্দর ইউনিয়নের বরুণাগাঁও আশ্রয়ণের প্রকল্পের ঘরে বসবাস করছেন।

বিয়ের পর থেকেই স্বামী নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকতে হয়েছে মনোয়ারা বেগমকে। তিন সন্তান বড় হওয়ার আগে পৃথিবী ছেড়ে গিয়েছেন তার স্বামী। পরিবারের পুরো দায়দায়িত্ব মাথায় জেঁকে বসে তার। কোনরকম করে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তবে চার বছর যেতে না যেতেই বড় মেয়ের স্বামী মারা যায়। মেয়ে আর নাতি চলে আসে আবার তার কাছে। ঋণের টাকায় ছেলেকে নিয়ে দিয়েছেন অটো আর ছোট মেয়ের বিয়ে হলেও মেনে নেয়নি শ্বশুরবাড়ির পরিবার। তিন সন্তান আর পাঁচ নাতনিসহ তাদের পরিবারের সংখ্যা নয় জনে দাড়িয়েছে। সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে কোনমত বসবাস করছেন তারা।

মুক্তিযোদ্ধার বড় মেয়ে শামসুন্নাহার বলেন, আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আমাদের ঘর বাড়ি ছিলনা। অনেক কষ্ট করে আমরা বড় হয়েছি। একটা সরকারি ঘর দেওয়া হয়েছে। সেখানে আমাদের জায়গা হয়না। আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর তিন সন্তান নিয়ে মায়ের সাথে থাকি। অন্যের বাড়িতে সারাদিন কাজ করি। আমি নিজেও অনেকবার ভূমি অফিসে গেছি কোন লাভ নাই। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করতে চাই সরকার যাতে করে আমার মাকে একটা বীর নিবাস দেয়।

ছোট মেয়ে শারমিন আক্তার বলেন, আমি ডিগ্রি প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করেছি। অনেক জায়গায় চাকরির চেষ্টা করেছি অথচ হয়নি। আমাদের অনেক কষ্ট করে জীবনযাপন করতে হয়। যদি একটা চাকরি পেতাম তাহলে এ কষ্টগুলো ঘুচানো যেত।

মুক্তিযোদ্ধার সহধর্মিণী মনোয়ারা বেগম বলেন, আমার স্বামীর বাসা ছিল ময়মনসিংহ। এদিকে যুদ্ধের সময় চলে আসে। বিয়ের পর তিনি আমাকে বলেন তার মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট আছে। তারপর আমি সেটা সংগ্রহ করি। কয়েক বছর পর তিনিও মারা যায়। পরে অনেক কষ্ট করে অন্যের বাড়িতে কাজ করে সন্তানদের বড় করেছি। যা ভাতা পাই তা ঋণের টাকা পরিশোধ করতেই শেষ হয়ে যায়। সব মুক্তিযোদ্ধা পরিবার বীর নিবাস পেলেও আমরা পেলামনা। একটা ঘরে ৯ জন সদস্য নিয়ে থাকতে অনেক কষ্ট হয়। একটা সরকারি ঘর পাইছি তাও আবার গ্রামে। এখানে এতজন আমরা থাকতে পারিনা। যদি সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের ভালো একটি ঘর দেওয়া হয়। যেখানে আমার পরিবার নিয়ে শান্তিতে থাকতে পারব। তাহলে মরেও শান্তি পাব আমি।

ঠাকুরগাঁও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল মান্নান বলেন, বীর নিবাস সকল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য। যাদের জমি নেই তারা যদি খাস জমির জন্য ভূমি অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন তাহলে এটি সমাধান হবে বলে আশা করছি।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. শামসুজ্জামান বলেন, বীর নিবাসের প্রথম শর্ত হলো চার শতক জমি থাকতে হবে। নিজস্ব জমি না থাকলে এখন পর্যন্ত ঘর দেওয়ার কোন নিয়ম নেই। যদি উনার মেয়ে বিধবা হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে আবেদন করলে আমরা সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের জন্য বিবেচনা করব। সবচেয়ে ভালো হয় তারা জমি কিনে বীর নিবাসটি নিতে পারেন। তারপরেও আমাদের উপজেলা প্রশাসন তাদের পাশে থাকবেন।

নয়াশতাব্দী/এমএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ