কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে সামুদ্রিক শৈবাল ও রঙিন প্রবাল সমৃদ্ধ সমুদ্রের নীল জলের মনোরম দৃশ্য সবার নজর কাড়ছে যুগ যুগ ধরে। প্রকৃতির সেই অপরূপ সুদা পান করতে পর্যটন মৌসুমে লাখো পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণ করছেন। অসচেতনতার কারণে যত্রতত্র বৈর্জ্য ফেলায় প্রতিনিয়ত সমুদ্র ও দ্বীপের পরিবেশের অবনতি ঘটছে। সমুদ্রেও প্লাস্টিক ফেলার কারণে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে দূষণ; হুমকির মুখে পড়ছে সামুদ্রিক জীব ও জনজীবন। পরিত্যক্ত প্লাস্টিক ও বর্জ্যে ন্যুয়ে পড়েছে দ্বীপটি। সেন্টমার্টিনের পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টিক মুক্ত হওয়া জরুরি। সেই লক্ষ্যে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।
সূত্র মতে, তাদের প্রস্তাবে যত্রতত্র ফেলা প্লাস্টিক যত্ন করে কুড়িয়ে নেবে দ্বীপবাসী। কুড়ানো প্লাস্টিকের বিনিময়ে মিলবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। এসব কিনতে আর টাকার প্রয়োজন হবে না। পরিত্যক্ত প্লাস্টিক জমা দিয়েই সেন্টমার্টিনের অধিবাসীরা ব্যাগভর্তি বাজার নিয়ে বাসায় ফেরার ব্যবস্থা করছে বিদ্যানন্দ। মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুর হতে সেন্টমার্টিনে প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোরের কার্যক্রম শুরু করেছে সংস্থাটি।
স্থানীয়দের ধারণা, পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব কেবলমাত্র সরকারের। কিন্তু আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও সরকারের একার পক্ষে পরিবেশ দূষণ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দিন দিন বেড়েই চলেছে প্লাস্টিকসহ দূষণের মাত্রা। এছাড়াও পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের মূল্য দেওয়া বা রিসাইকেল করার মতো কোনো ব্যবস্থা সেন্টমার্টিনে না থাকায় সেখানকার মানুষ প্লাস্টিককে অপ্রয়োজনীয় মনে করে ফেলে দেন।
প্রবাল দ্বীপকে প্লাস্টিক দূষণ থেকে রক্ষায় একদল স্বেচ্ছাসেবী গ্রহণ করেছে প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জের নতুন উদ্যোগ। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এ উদ্যোগের আওতায় সেন্টমার্টিন দ্বীপে স্থাপন করা হয়েছে ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’। যেখানে মানুষ তাদের ব্যবহৃত প্লাস্টিকপণ্যের খালি পাত্র বা বোতল এক্সচেঞ্জ করে নিতে পারবেন চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি। এতে স্থানীয়দের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাহিদা যেমন পূরণ হবে, ঠিক তেমনই কমবে পরিবেশ দূষণ। এই ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’ প্রতি মাসে দুবার প্লাস্টিক নিয়ে দ্রব্য বিনিময় করবে। ফলে মানুষ তাদের জমানো প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ করে প্রয়োজন অনুযায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নিতে পারবে।
এদিকে সংগৃহীত প্লাস্টিক দিয়ে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবীরা কক্সবাজারে তৈরি করবেন বিশাল আকৃতির একটি ‘প্লাস্টিক দানব’। ধারণা করা হচ্ছে- এই দানব হবে বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকতের সবচেয়ে বড় স্ট্যাচু। এই দানব তৈরির মাধ্যমেই বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন মানব সমাজকে একটি বার্তা দিতে চায়- প্লাস্টিকের ফলে পরিবেশ যেই হারে দূষিত হচ্ছে তা ধীরে ধীরে দানবে রূপ নিচ্ছে। আর এই দানবই পরবর্তীতে মানবসমাজের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, প্লাস্টিকের বিনিময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মেলা অবশ্যই দ্বীপকে রক্ষা করতে কার্যকরী ও সুন্দর উদ্যোগ। এটি নিয়মিত করা গেলে অতিসহসা সুফল আসবে।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর'র প্রতিনিধি আকরাম হোসেন জানান, প্লাস্টিক জমা দিলেই প্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্য পাবেন দ্বীপবাসী। প্রথম দিনে লোকজন দ্বীপের নানা স্থান থেকে কুড়িয়ে কুড়িয়ে প্লাস্টিক জমা দিয়ে বাজার করছে। এ কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হিসেবে দ্বীপকে প্লাস্টিক থেকে বাঁচিয়ে দূষণমুক্ত রাখা। আবারও দ্বীপে মাছ দেখা যাবে-জীববৈচিত্র্যে ভরপুর থাকবে দ্বীপ।
তিনি আরও বলেন, প্লাস্টিকের একটি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তার বিনিময়ে চাহিদা মতো পণ্য দেওয়া হচ্ছে। এটি পাইলট হিসেবে সপ্তাহে দুইদিন খোলা থাকাবে। কিন্তু দ্বীপবাসীর আগ্রহে আগামী মাস থেকে চারদিন খোলার ব্যবস্থা করা হবে।
সূত্র জানায়, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন একটি শিক্ষা অনুকূল বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। নানা কার্যক্রমের পাশাপাশি সংস্থাটি প্রতিনিয়ত সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন কাজে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়ে থাকে। যার একটি-সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্লাস্টিকে পরিবেশ দূষণরোধ করতে ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’ স্থাপন। যা দিয়ে কক্সবাজারে নির্মিত হবে প্লাস্টিকের তৈরি বিশাল আকৃতির দানব। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ও জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে কার্যক্রমটি হাতে নেওয়া হয়েছে বলেও জানায় সূত্রটি।
এর আগে কক্সবাজার সৈকতে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন প্লাস্টিকের বিনিময়ে উপহার প্রদান কার্যক্রম শুরু করে। গত ১৭ নভেম্বর থেকে সৈকতের বালিয়াড়ি ও আশপাশে থাকা পর্যটকরা প্লাস্টিক পণ্য জমা দিয়ে উপহার হিসেবে পাচ্ছেন বই, গাছের চারা ও পাটের তৈরি ব্যাগ। প্রতি শুক্র ও শনিবার এবং সরকারি বন্ধের দিন কার্যক্রম চলছে 'প্লাস্টিক দিয়ে উপহার নিন' নামক অভিনব কর্মসূচি। এটি চলার সাথে এখন থেকে সেন্টমার্টিনে শুরু হয়েছে প্লাস্টিকের বিনিময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। সকল উদ্যোগকে অনিন্দ্য বলে উল্লেখ করেছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান।
নয়াশতাব্দী/এফআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ