ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

যে কারণে আত্মহত্যা করেন বুয়েটছাত্র ফারদিন

প্রকাশনার সময়: ১৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১৯:৪৭

ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ হতাশা ও টাকার জন্য নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন।

বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবি প্রধান।

তিনি বলেন, ফারদিন নূর পরশ অন্তর্মুখী ছিলেন। সবার সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করতে পারতেন না। তার রেজাল্ট ক্রমান্বয়ে খারাপ হচ্ছিল। প্রথম সেমিস্টারে সিজিপিএ ৩.১৫ আসে, তারপর কমতে কমতে ২.৬৭, যেটা বাসার লোকজন বা আত্মীয়স্বজন কেউ জানতেন না।

ডিবি প্রধান বলেন, বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে স্পেন যাওয়ার জন্য ৬০ হাজার টাকা প্রয়োজন ছিল তার, যেটা জোগার করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। বন্ধুরা তাকে ৪০ হাজার টাকা দেন। পরে এক প্রকার মানসিক চাপে পড়েই আত্মহত্যা করেছেন।

ডিবি প্রধান আরো বলেন, নিজে চারটা টিউশন করে সব টাকা দিয়ে নিজের ও ছোট ২ ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ চালাত ফারদিন। নিজের জন্য কিছু করে না। তারপরও বাড়িতে শাসন তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে। হলে থাকা যাবে না। এক ধরনের চাপের মধ্যে ছিল- যেটা ভিকটিম মানতে পারেনি।

তিনি বলেন, ফারদিন নূর পরশের ২টা নাম্বারে বি-পার্টি ছিল সর্বমোট ৫২২টি। ওই দিন রাতে সে যেখানে যেখানে ঘুরেছে তার সেলে কোনো বি-পার্টি আমরা সার্চ করে পাই নাই একই অবস্থানে। সে যেভাবে উন্মাদের মতো ঘুরে বেড়িয়েছে তাতে প্রতীয়মান হয় যে, মানসিকভাবে ডিস্টার্বড ছিল। কারো সঙ্গে ওই দিন রাতে দেখা করে নাই। সে বাবুবাজার ব্রিজ টার্গেট করে। ১০:৫৩, ১১:০৯ এ সময় বাবুবাজার ব্রিজ অনেক ব্যস্ত থাকায় সম্ভবত সে ওখান থেকে পিছপা হয়। তারপর নিজের সাথে নিজে কথা বলে সময় নেয়। তারপর আবার তার নিজের বাসা অতিক্রম করে ডেমরা সেতুতে যায়। শেষ গ্রামীণ নাম্বারের আইপিডিআরে তার অবস্থান সেতুর উপর অনুমান করা হয়। গ্রামীণ নাম্বারের ফোরজি সেল ১৩, ৩২, ৩৩ তার লোকেশন যেটা লেগুনা ড্রাইভার যেখানে নামিয়েছিল বলছে তার সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। বিশেষ করে ৩২ সেলটা ঠিক ব্রিজের ওপর দেখায়। নদীর এপার বা ওপার গেলে ৩২ সেল পাওয়া যায় না। এটাতে প্রতীয়মান হয় যে, সর্বশেষ সেতুর ঠিক মাঝখানে তার অবস্থান ছিল।

তিনি আরো বলেন, এরকম একটা উদাহরণ আছে- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র আত্মহত্যা করেছিল; আত্মহত্যার আগে সারারাত ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে একা একা ঘুরে বেড়িয়েছিল। আমাদের ভিকটিমও এরকম একা একা ঘুরে বেড়িয়েছে উদ্দেশ্যহীনভাবে। বুশরাকে রাত ৯.৪৫ মিনিটে নামানোর পর উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়িয়েছে এবং কারো সঙ্গে দেখা করে নাই। তার গত ১ বছরের সিডিআর পর্যালোচনা করলে পূর্বে কখনো এমন দেখা যায় নাই।

মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ফারদিনের বান্ধবী ইফাত জাহান মুমুর সঙ্গে মেসেঞ্জারে এবং টেলিগ্রামে অনেক কথোপকথন রয়েছে; যেখানে ফারদিন তার হতাশার কথা ব্যক্ত করেছে বহুবার। মুমুর ভাষ্যমতে, ফারদিন হতাশাগ্রস্ত ছিল। সে আত্মহত্যা করতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

ফারদিন নূর পরশ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। গত ৪ নভেম্বর রাতে তিনি নিখোঁজ হন। এর তিন দিন পর গত ৭ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ। এ ঘটনায় তার বান্ধবী বুশরাসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রামপুরা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন ফারদিনের বাবা কাজী নুরুদ্দিন।

নয়া শতাব্দীা/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ