ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সেরা কৃষক পুরস্কার পেলেন গৌরীপুরের ফজল

প্রকাশনার সময়: ১৩ ডিসেম্বর ২০২২, ১৬:৪২

অভাবের তাড়নায় পড়াশোনা হয়নি। জীবিকার তাগিদে চাকরি নেন গার্মেন্টেসে। কিন্ত উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নে সেই চাকরি ছেড়ে গ্রামে কৃষি খামার গড়েন আবুল ফজল (৪২)। শুরুতে কঠিন সময় পার করলেও এখন তিনি সফল। সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরপ সম্প্রতি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে বৃহত্তর ময়মনসিংহের সেরা কৃষক পুরস্কার পেয়েছেন এই উদ্যোক্তা।

আবুল ফজলের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুরের বোকাইনগর ইউনিয়নের বালুচড়া গ্রামে। চাকরি ছেড়ে কৃষি করছেন কথা শোনে অনেকেই কটুক্তি করতো। ছিল পুঁজির সংকট। কিভাবে হলেন সেই গল্পটা শোনা গেলো ফজলের মুখ থেকে।

আবুল ফজল বলেন, অভাবের তাড়নায় নবম শ্রেণিতে পড়াশোনার ইতি ঘটলে ১৯৯৭ সালে চাকরি নেই গার্মেন্টেসে। বেতনের জমানো টাকায় ২০১৬ সালের দিকে বাড়িতে চারটি গরু কিনে ছোট্ট ফার্ম করি। আয় বাড়াতে ২০২০ সালে চাকরি ছেড়ে গ্রামে গরুর ফার্মের পাশাপাশি বিষমুক্ত শাক-সবজি, কুল, কমলা ও ঘাস চাষাবাদ শুরু করি।

বালুচড়া গ্রামে দুই একরের বেশি জমি লিজ নিয়ে কৃষি খামার করেছেন ফজল। নিজের গরুর ফার্মের বর্জ্য থেকে বার্মি কমপোস্ট সার উৎপাদন করে বিষমুক্ত পদ্ধতিতে খামারে লাউ, কুমড়ো, শিম, টমেটো, বেগুন, করলাসহ বিভিন্ন মৌসুমী শাক-সবজি উৎপাদন করেন। পাশাপাশি গোখাদ্যের জন্য করেছেন ঘাস ও সজনার বাগান। আরো আছে করেছেন কুল ও কমলা চাষ।

৪টি গরু দিয়ে ফার্ম শুরু করা ফজলের খামারে এখন ১৪টি গাভী রয়েছে। খামারের উৎপাদিত ঘাস ও সজনা পাতায় ফার্মের গরুর চাহিদা মিটিয়ে বাণিজ্যিক ভাবে বিক্রি করেন। পাশাপাশি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দুধ ও বিষমুক্ত সবজি বাণিজ্যিক ভাবে পাঠানো হয় আশেপাশের জেলা উপজেলায়।

আবুল ফজল বলেন, গার্মেন্টেসে মেইনটেন্সেস বিভাগের ইনচার্জ হিসাবে প্রতি মাসে প্রায় অর্ধলক্ষ টাকা বেতন পেতাম। এখন গরুর ফার্ম ও কৃষি খামার থেকে প্রতি মাসে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা আয় হয়। পাশাপাশি গ্রামের ১০/১২ জন যুবকের কর্মসংস্থান করেছি। আগে মানুষ কটুক্তি করলেও এখানে অনেকেই ফার্ম করতে পরামর্শ নেয় আমার কাছে।

উপজেলা ক্ষেত মজুর সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, ফজল ভাই গার্মেন্টেসে ভালো বেতনের চাকরি ছেড়ে কৃষি খামার করছেন দেখে অবাক হয়েছিলাম। কিন্ত তিনি প্রমাণ করেছেন কঠোর পরিশ্রম করলে সফল হওয়া যায়। গ্রামের বেকার যুবকরা এখন তাকে দেখে কৃষিতে ঝুঁকছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার লুৎফুন্নার লিপি বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় ভূমিকা রাখায় আবুল ফজল প্রথম ‘কৃষক পুরস্কার’ পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখার ঘোষণায় অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি খামারে এক ইঞ্চি জায়গাও অনাবাদি রাখেননি। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছি।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ