কালিয়াকৈর হানাদার মুক্ত দিবস কাল। দীর্ঘদিন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাক বাহিনীর হাত থেকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর মুক্ত হয়।
জানা গেছে, ১১ ডিসেম্বর রাতে কালিয়াকৈরের লতিফপুর ব্রিজের কাছে এবং ১২ ডিসেম্বর উপজেলার মৌচাক ইউনিয়নের সফিপুর এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকহানাদার বাহিনীর সম্মুখযুদ্ধ সংগঠিত হয়। সম্মুখযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর একটি জিপ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ১৩ ডিসেম্বর হিজলতলী এলাকায় বংশী নদীর ওপর ব্রিজের কাছে পাক বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধ হয়। একই দিন উপজেলার সাকাশ্বর এলাকায় পাক বাহনীর একটি যুদ্ধবিমান ভূপতিত করা হয়। এ যুদ্ধে পাকবাহিনীর দুইজন পাইলটকে হত্যা করেন মুক্তিযোদ্ধারা।
১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের রমজানের ঈদের রাতে কালিয়াকৈরের লতিফপুর সেতুর কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর সম্মুখযুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধের ফলে পাকিস্তানি বাহিনী উপজেলার শ্রীফলতলী গ্রামটি জ্বালিয়ে দেয়। এদিকে উপজেলার সফিপুর বাজারের পূর্বপাশে সশস্ত্র হানাদারদের একটি দলকে বাধা দিলে তারা একটি জিপ গাড়ি রেখে পালিয়ে যায়। পরে রাতের বেলায় হানাদার বাহিনী সফিপুর বাজার আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
১৪ ডিসেম্বর হিজলতলী এলাকায় বংশী নদীর ওপর ব্রিজের কাছে পাক-বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা শ্রী গোবিন্দ চন্দ্র দাস ও ফজলুল করিম শহিদ হন। একই দিনে সোনাখালী সেতু থেকে পাকবাহিনী মতিউর রহমানকে ধরে নিয়ে যায়, যার সন্ধান আজও মিলেনি।
এছাড়াও ওই সময় যুদ্ধে শহিদ হন নোমিজ উদ্দিন, আব্দুল আজিজ ও শাহাবুদ্দিন। শহিদ হন নরুল ইসলাম, আব্দুস সালাম ও বাবুল হোসেন। টাঙ্গাইলের নাটিয়াপাড়ায় শহিদ হন লাবিব উদ্দিন।
১৯৭১ সালে সারা দেশের মতো গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মুক্তিপাগল মানুষ, সাহসী যুবক ও তরুণেরা স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। কালিয়াকৈরে ১৯৭১ সালের ১১ থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নানামুখী আক্রমণের মুখে মুক্তিবাহিনীর কাছে হানাদাররা পরাজিত হয়। মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধের তোড়ে হানাদার বাহিনী কালিয়াকৈর ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর কালিয়াকৈর পুরোপুরি হানাদার মুক্ত হয়।
নয়া শতাব্দী/আরআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ