আজ ১৩ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয় নাটোরের লালপুরবাসী।
লালপুর উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড আব্দুল রাজ্জাক বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে লালপুরের ময়না গ্রামে পাক বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিকামী মানুষের প্রথম সম্মুখযুদ্ধ হয়। ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাক বাহিনী রাজাকারদের সহায়তায় লালপুরের বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিকাণ্ড ও লুটতরাজ চালায়।
৩০ মার্চ ময়নায় সম্মুখযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা হানাদারদের ২৫নং রেজিমেন্ট ধ্বংস করে। সেদিন প্রায় ৮০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহিদ ও ৩২ জন আহত হন। ওই দিন পাক সেনাদের ছোঁড়া একটি সেলে চামটিয়া গ্রামের ৩ জন শহিদ হন। ১২ এপ্রিল ধানাইদহ ব্রিজের কাছে প্রতিরোধ যুদ্ধে ১০ থেকে ১২ জন শহিদ হন। ১৭ এপ্রিল দুয়ারিয়া ইউনিয়নের রামকান্তপুর গ্রামে পাক বাহিনী হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ১৮ জনকে হত্যা করে।
৫ মে পাক হানাদার বাহিনী নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল এলাকা ঘেরাও করে মিলের তৎকালীন প্রশাসক লে. আনোয়ারুল আজিমসহ কর্মরত প্রায় অর্ধশত শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাকে চিনিকলের অফিসার্স কলোনির পুকুর পাড়ে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। ওই দিনই গোপালপুর বাজারে ৭ জন ও গোপালপুর-লালপুর রাস্তার শিমুলতলায় আরও ৫ জনকে গুলি করে হত্যা করে। ২৯ মে খান সেনাদের একটি দল চংধুপইলের পয়তারপাড়া গ্রামের নদীর পাড়ে ধরে এনে অর্ধশতাধিক নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। ১৯ জুলাই গোপালপুর থেকে ধরে এনে ২২ জনকে লালপুর নীলকুঠির কাছে হত্যা করা হয় এবং ২৬ জুলাই একইস্থানে আরও ৪ জনকে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়। ২০ জুলাই রামকৃষ্ণপুর গ্রামে অগ্নিসংযোগ ও ৫ জনকে হত্যা করে। ২৭ জুলাই বিলমাড়িয়া হাট ঘেরাও করে বেপরোয়া গুলি বর্ষণ করে ৫০ থেকে ৬০ জনকে হত্যা করে। ৮ ডিসেম্বর পাঞ্জাব পুলিশ ও খান সেনারা থানা ত্যাগ করে। ৯ ডিসেম্বর অধিকাংশ রাজাকার থানা ত্যাগ করে। ১০ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী থানা দখল করে। জনতা সেদিন উল্লাসে মেতে ওঠে। কিন্তু ১৩ ডিসেম্বর বর্বর খান সেনারা ঝটিকা আক্রমণ করে মহেশপুর গ্রামে ৩৬ জনকে গুলি করে পালিয়ে যায়।
যুদ্ধকালীন রেলওয়ের ২১৮ নম্বর বাওড়া ব্রিজ বদ্ধভূমিতে বিভিন্ন এলাকার মানুষকে ধরে এনে এখানে নৃশংসভাবে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী।
১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ২৪ ডিসেম্বর লালপুর শ্রী সুন্দরী পাইলট হাইস্কুল মাঠে এক বিজয় উৎসব, আলোচনা সভা ও শহিদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে লালপুরে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়।
নয়া শতাব্দী/আরআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ