ঢাকার কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নের মোল্লার বাজার সেতুর নির্মাণ কাজ বর্ধিত সময়েও শেষ হচ্ছে না। নির্ধারিত মেয়াদ পর্যন্ত সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় আরো দুই বছর বাড়িয়ে চলতি মাসের ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত পুনরায় কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলেও কোন উন্নতি ঘটেনি। এতে নদীর দুই পাড়ের লাখ লাখ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ছে। তাদের ভোগান্তি যেন শেষ হচ্ছে না।
সেতু নির্মাণে চরম গাফলতির কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুরমা এন্টারপ্রাইজের মালিকের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খেয়া পারাপারের বিভিন্ন পেশার হাজার হাজার মানুষ। নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নদীর দুই পাড়ের মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই নিত্যদিন খেয়া নৌকা পারাপারের মাধ্যমে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে একদিকে অর্থ অন্যদিকে সময়ের অপচয় হচ্ছে। তবে কাজের গতির ধরন দেখে অধিকাংশ মানুষ মনে করছে আগামী আরো ২ বছরের মধ্যে সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অর্থায়ন ও তত্ত্ববধানে সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান, টুঙ্গীবাড়ি, লৌহজং উপজেলার একাংশ ও মুন্সীগঞ্জ সদর এলাকার একাংশের মানুষ যাতে কেরানীগঞ্জ হয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যে রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগ করতে পারে সেজন্য কোন্ডা ইউনিয়নের মোল্লার বাজার এলাকায় ধলেশ্বরী শাখা নদীর উপর ২০১৮ সালের ১০ জুন সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। ২৫২ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১০ মিটার প্রস্থের এই সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩ কোটি ২৭ লাখ ৪২ হাজার ২৮৪ টাকা। সুরমা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে
সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর। কিন্তু ধলেশ্বরী শাখা নদীর দুইপাড়ে কিছু ইটভাটা স্থানান্তর ও অন্যান্য জটিলতার কারণ দেখিয়ে সেতুর নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় আরো দুই বছর বাড়িয়ে চলতি মাসের ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত পুনরায় নির্মাণ কাজের সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেতুর নির্মাণ কাজের গতি বাড়ানোর জন্য ১৪ বার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সুরমা এন্টারপ্রাইজকে তাগিদ দেয়া হয়েছে এবং ২ বার তাদেরকে ওয়ার্ক প্ল্যান দেওয়া হয়েছে। কিন্ত এতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোন টনক নড়েনি এবং কাজের কাজ কিছুই হয়নি।সরেজমিন প্রতিবেদনে গিয়ে দেখা যায়, মোল্লা বাজার এলাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একটি অফিস থাকলেও সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি সেতুর কোন নির্মাণ শ্রমিককেও সেতু এলাকায় দেখা যায়নি। সেতুন ৮টি পিলারের সব কয়টি পিলারের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে আরো দেড় বছর আগে। নদীর দক্ষিণ প্রান্তে একটি স্প্যান ও গার্ডারের নির্মাণ কাজ শুরু করা হলেও সেটিও এখন বন্ধ রয়েছে। এক কথায় সেতুর নির্মাণ কাজ এখন সম্পূর্নভাবে বন্ধ রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানান, এ পর্যন্ত ৪/৫বার সেতুর ডিজাইন পরিবর্তন করা হয়েছে। সেতুর দুই পাড়ের জমি অধিগ্রহণ নিয়েও জটিলতা দেখা দেয়ায় সেতুন নির্মাণ কাজ ধীর গতির মুখে পড়ে। এছাড়া চাহিদা মোতাবেক সেতুর নির্মাণ প্রকল্পে অর্থ বরাদ্ধ না থাকায় সেতুর নির্মাণ কাজ প্রায় মুখ থুবড়ে পড়ে।
নদীর উভয় পাড়ের একাধিক মানুষ জানান, দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় হাউজিং কোম্পানিসহ কয়েকটি হাউজিং কোম্পানি ওইসব এলাকায় কম দামে জমি কেনার জন্য সেতু নির্মাণ কাজ ধীর গতিতে করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এছাড়া নির্মাণাধীন সেতুর সাথেই ধলেশ্বরী শাখা নদীতে প্রতিদিন ২০/২৫ হাজার মানুষ খেয়া পারাপার হচ্ছে। এতে জনপ্রতি ৫টাকা, মোটরসাইকেল ২০/৩০টাকা এবং সিএনজি অটোরিকশা পারাপারে ১০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। এভাবে খেয়া পারাপারে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা আদায় কর হচ্ছে। অনেক মানুষের ধারণা সেতুন নির্মাণে ধীরগতির জন্য খেয়াঘাট মালিকদেরও হাত থাকতে পারে।
ঢাকা জেলা যুবলীগের সদস্য কোন্ডা ইউনিয়নের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, সেতুটি দ্রুত নির্মাণের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির মালিককে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ একাধিক বার তাগিদ দিলেও নির্মাণ কাজ কেন দ্রুত শেষ হচ্ছে না সেটি এখন ভাবনার বিষয়।
ধলেশ্বরী শাখা নদীর উপর মোল্লা বাজার সেতুটি কেরানীগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের সাথে যোগাযোগ বাড়াবে। এতে রাজধানী ঢাকা থেকে এই সেতু দিয়ে সিরাজদীখানের বেতকা হয়ে খুব কম সময়ে মুন্সীগঞ্জ সদরে যাওয়া যাবে।
কোন্ডা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড সাবেক মেম্বর ইকবাল আহমদ নিবির বলেন, মোল্লাহ বাজার সেতুটি নির্মিত হলে এটির মাধ্যমে কেরানীগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান, টুঙ্গীবাড়ি, লৌহজং উপজেলাসহ মুন্সীগঞ্জ সদরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করবে। খুব সহজেই ওইসব এলাকার মানুষ রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবে। কেরানীগঞ্জের মানুষও সহজে মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় যাতায়াত করতে পারবে। সেতুটি দুইপাড়ে গড়ে উঠবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান। সেতুটি নির্ধারিত সময়ে নির্মাণ না হওয়ায় দুই পাড়ের সকল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এখন মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। তাই আমরা দ্রুত এই সেতুটি নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
সিরাজদীখান থানার লতবদী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এসএম সোহরাব হোসেন বলেন, মোল্লা বাজার সেতুটি দ্রুত নির্মিত না হওয়ায় আমাদের সিরাজদী খান উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন বাসীর জন্য খুব দুর্ভোগ নেমে এসেছে। সেতুটি দ্রুত নির্মাণ না হওয়ায় আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে নদী পার হয়ে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করতে পারছি না। মুন্সীগঞ্জ সদরসহ টুঙ্গীবাড়ি ও লৌহজং উপজেলার একাংশের মানুষজনও অতিসহজে কেরানীগঞ্জ ও রাজধানীতে যাতায়াত করতে পারছে না এবং প্রয়োজনীয় বিভিন্ন মালপত্র আনা-নেওয়া করতে পারছে না।
সিরাজদী খানা থানার বালুর ইউনিয়নের কালি নগর গ্রামের মোঃ শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ব্রিজটি দ্রুত নির্মাণ না হওয়ায় আমরা অনেক কষ্টে আছি। প্রতিদিন আমর খেয়া নৌকা পার হয়ে রাজধানী ঢাকাতে যাতায়াত করে থাকি। এতে অনেক সময় ঘাটের লোকজন আমাদের সাথে খারাপ ব্যাবহার করে।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী কাজী মাহমুদুল্লাহ বলেন, করোনাকালীন সময় ও বর্ষার কারনে সেতু নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকে। ব্রিজের নির্মান কাজ শতকরা ৬০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন জটিলতার কারণে নির্ধারিত সময়ে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় চলতি মাসের ১৭ নভেম্বর সময় পুনরায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। আশা করছি এখন দ্রুত গতিতে নির্মাণ কাজ এগিয়ে যাবে।
সেতু নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুরমা এন্টার প্রাইজের মালিক মোঃ আয়ুব আলীর মোবাইলে ফোন করলে তার মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ঠিকাদারী প্রথিষ্ঠান সুরমা এন্টার প্রাইজের ম্যানেজার প্রকৌশলী মোঃ সাইফুল ইসলামের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মাত্র ২ মাস আগে এই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছেন। তাই সেতুর বিষয়ে তিনি কোন কিছু বলতে পারবেন না।
নয়াশতাব্দী/জেডআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ