ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চরফ্যাশনে গড়ে উঠেছে অবৈধ ইটভাটা, নেই নজরদারি

প্রকাশনার সময়: ০৮ ডিসেম্বর ২০২২, ১৯:০৭

ভোলার চরফ্যাশনে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বা অনুমোদন ছাড়াই গড়ে উঠেছে প্রায় ২০টি অবৈধ ইটভাটা। অসাধু ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় পরিচালিত হচ্ছে এসব ইটভাটা। শুধুমাত্র ড্রামসিটের চিমনি দাঁড় করিয়ে বনের কাঠ উজাড় করে ফসলি জমির মাটি ও ভাটা সংলগ্ন সরকারি খালের মাটি দিয়ে এ ভাটাগুলোতে ইট পোড়াচ্ছে অবৈধ ইট ব্যবসায়ীরা। পরিবেশ ধ্বংস করে এমন অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করায় প্রশাসনের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা।

চরফ্যাসন উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা দক্ষিণ আইচার মানিকা, হাজারীগঞ্জ, চরকলমী, আবদুল্লাহপুর, রসুলপুর, নীলকোমল, ঘোষেরহাটসহ আবদুল্লাহপুর, এওয়াজপুর, আসলামপুর, বেতুয়া ও মাদ্রাজ ইউনিয়নে রয়েছে এ অবৈধ ভাটাগুলো।

ভাটাগুলোতে রয়েছে গাছ কাটার সো-মিল। এই স-মিলে হাজার, হাজার মণ লাকড়ি ও গাছের গুঁড়ি কেটে ইট পোড়ানোর কার্যক্রম চলছে।

স্থানীয় এলাকাবাসীরা বলছেন, ফসলী জমিতে অবৈধভাবে ড্রামসিটের তৈরি চিমনি ব্যবহার করে লাকড়ি দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। যার ফলে এলাকার নারী ও শিশুসহ আবাল বৃদ্ধরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। পাশাপাশি পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। অবৈধ ভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে ভাটা সংলগ্ন জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এসব জমিতে এখন চাষাবাদ করতে পারছেনা বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা।

কৃষক কামাল হাওলাদারসহ একাধীক এলাকাবাসী জানান, অবৈধ ভাটাগুলোর বিষয়ে উপজেলা ও জেলাসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই। দুই বছর আগে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে ছোট, ছোট কয়েকটি ইট ভাটা গুড়িয়ে দিলেও পুনরায় ওই ভাটাগুলো অসাধু কর্তা ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে চালু করেছে দাবি করে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। স্থানীয়রা একাধিক অভিযোগ করলেও ফসলি জমি থেকে এসব ভাটা সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে না।

কৃষক কালু মিয়া জানান, অবৈধ ইট ভাটার কারণে আমার ১০ একর জমিতে কোনো ফসল ফলাতে পারিনা। জমিগুলো কারো কাছে লগ্নী (বছর প্রতি ভাড়া) দিতে পারিনা। চাষিরা এই জমি নিতে চাচ্ছেনা।

স্থানীয় জামাল ভূইয়া, মতলব মুন্সি, আবদুল কাশেমসহ একাধীক এলাকাবাসী বলেন, কুলমী ৯নং ওয়ার্ডের চর-মঙ্গল গ্রামে ফসলী জমি নষ্ট করে আবাসিক এলাকায় ড্রামসিট চিমনি দিয়ে লাকড়ি পুড়িয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে। হাজার হেক্টর জমির ফসলি খেত বনজ ও ফলদ বাগানসহ শতশত বসত বাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব অবৈধ ভাটার পাশে।

দক্ষিণ আইচা মানিকা ইউনিয়নের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসিন্দা বলেন, প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত একাধীক ইট ভাটা রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রশাসনের অনুমোদন ও ছাড়পত্র না থাকলেও অদৃশ্য অনুমোদনে চলছে ভাটাগুলো। পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক ভেঙে দেয়ার পরেও পুনরায় এ অবৈধ ইট ভাটা নির্মাণ করে ইট পোড়ানো হলেও ভোলা পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে বলে তারা দাবি করেন।

সচেতন মহল বলেন, এর আগেও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় অবৈধ ইট ভাটা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পরেও অবৈধ ভাটাগুলোর কার্যক্রম নজরে আসছেনা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর। ভাটাগুলোতে নদী ও খাল থেকে ড্রেজিং দিয়ে মাটি এনে ইট তৈরি করা হচ্ছে বলেও ভাটা সংলগ্ন বাসিন্দারা দাবি করেন।

তারা বলেন, রাতভর ড্রেজিং ও বেকু দিয়ে ফসলি জমির পাশে মাটি কেটে গভীর খনন করে ইট তৈরির মাটি সংগ্রহ করছে ভাটাগুলো।

ইটভাটার মালিকরা জানান, তারা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছেন।

ভোলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তোতা মিয়া জানান, ড্রামসিট চিমনি ব্যবহার করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

তিনি আরও জানান, চরফ্যাশনে প্রায় ১২ থেকে ১৩ টি অবৈধ ভাটা রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে শিগগিরই একজন ম্যাজিস্ট্রেট আসবেন এবং ভাটাগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

তবে ঠিক কতটি ভাটার অনুমোদন রয়েছে রয়েছে জানতে চাইলে তার সদুত্তর দিতে পারেন নি এ কর্মকর্তা।

নয়াশতাব্দী/জেডআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ