ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাংলার সূর্য সন্তানদের বীরত্বে হানাদার মুক্ত পটুয়াখালী

প্রকাশনার সময়: ০৮ ডিসেম্বর ২০২২, ১৬:৩২

মুক্তিযুদ্ধ বাঙালীদের ইতিহাসের প্রধান আঁতুড়ঘর। বাংলার সূর্য সন্তানদের হাত ধরে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ৩০ লাখ শহীদের ত্যাগের বিনিময়ে এসেছে বাংলার স্বাধীনতা। সমগ্র বাংলাদেশের মতো পটুয়াখালীর বীর সৈনিকদের সাহসিকতার লড়াইয়ে মধ্যদিয়ে ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর পটুয়াখালী হানাদার মুক্ত হয়।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকসেনারা দেশব্যাপী পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। গভীর রাতেই তারবার্তা এসে পৌঁছে পটুয়াখালী জেলা সংগ্রাম কমিটির হাতে। পরের দিন ২৬ মার্চ পটুয়াখালী মহিলা কলেজে কন্ট্রোলরুম খোলেন মুক্তিযোদ্ধারা। পাশের জুবিলী স্কুলে শুরু হয় মুক্তি সেনাদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ। স্থানীয় সংগ্রাম কমিটির হাতে হাত মেলান স্থানীয় অকুতোভয় তরুণ যুবকরা।

তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবদুল আউয়াল পটুয়াখালী পুলিশ লাইন অস্ত্রাগার থেকে ৬৫টি রাইফেল তুলে দেন মুক্তি সেনাদের হাতে। পটুয়াখালী ছিল ৯ নং সেক্টরের একটি সাব সেক্টর। ১০টি থানাকে ৫টি অঞ্চলে ভাগ করে দায়িত্ব পালন করেন কমান্ডার মো. নুরুল হুদা ও সেকেন্ড ইন কমান্ড হাবিবুর রহমান শওকত। বর্তমান ডিসি বাংলোর পূর্ব পাশে পাক বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে ৭ আনসার ও মাতবর বাড়ির সামনে ১৭ মুক্তিসেনা শহীদ হন।

১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল সোমবার। আকাশের উত্তরদিক থেকে গগণবিদারী আওয়াজ তুলে ধেয়ে আসে বেশ কয়েকটি পাকিস্তানি জঙ্গী বিমান। বৃষ্টির মতো গোলাবর্ষণ, শেলিং ও মেশিনগানের গুলি ছুঁড়ে ধবংস করে দেয় পটুয়াখালী শহর। এ সময় প্রাণ বাঁচাতে হাজার হাজার নারী-পুরুষ ওই সময় শহর সংলগ্ন লোহালিয়া ও লাউকাঠি নদীতে ঝাঁপ দেন। পটুয়াখালীর পুরনো বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় ঘর-বাড়ি। চাঁদমারী, কালিকাপুর, মাতবর বাড়ি ও ডিসি বাংলোর দক্ষিণ পাশে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে হাজারও মানুষ।

১৯৭১ সালের ১৮ নভেম্বর গলাচিপা উপজেলার পানপট্টিতে সংগঠিত হয় জেলার সব চেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ। টানা ৮ ঘণ্টা উভয় পক্ষের গোলাগুলিতে অর্ধশত পাকসেনা নিহত হন। পরে ৩৮৫ জন পাকসেনা নিয়ে মেজর ইয়ামিন খান পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তি সেনারা পটুয়াখালী শহরের চারদিক অবস্থান নিয়ে চূড়ান্ত হামলার প্রস্তুতি নেন। পরের দিন ৭ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের শহর দখলের খবর টের পেয়ে পাকবাহিনী আচমকা পটুয়াখালী শহরে কারফিউ জারি করে একটি দোতলা লঞ্চ ও একাট একতলা লঞ্চ যোগে পটুয়াখালী শহর ছেড়ে পালিয়ে যান। ৮ ডিসেম্বর খুব ভোরে পটুয়াখালী শত্রুমুক্ত হয়।

পটুয়াখালী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদর উপজেলার সাবেক কমান্ডার বাদল ব্যানার্জি জানান, নভেম্বর থেকেই হানাদার ও রাজাকার আল-বদরদের হাত থেকে মুক্তিযোদ্ধারা পটুয়াখালী দখলে নেয়। ৭ ডিসেম্বর হঠাৎ করে কারফিউ জারি করে পটুয়াখালী থেকে পালিয়ে যায়। ৮ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করা হয়।

নয়াশতাব্দী/এফআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ