শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই যমুনা নদীর বুকে জেগে ওঠা অসংখ্য ডুবোচর ও নাব্যতা সংকটে স্থবির হয়ে পড়েছে নদীপথে উত্তরাঞ্চলে জ্বালানী তেল, সার ও অন্যান্য পণ্য পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দর। পন্যবাহী জাহাজ সরাসরি বন্দরে পৌঁছতে না পারায় লাইটারেজে করে পণ্য পরিবহণে লোকসান গুনতে হচ্ছে বন্দর ব্যবহারকারি ব্যাবসায়িদের।
এছাড়াও প্রয়োজনীয় জেটিঘাট, গোডাউন ও শ্রমিকদের বিশ্রামাগারসহ ন্যুনতম সুবিধা না থাকার সমস্যাও বিদ্যমান বন্দরটিতে। দ্বিতীয় শ্রেনীর বন্দরটিকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নিত করার মাধ্যমে সংকট সমাধানের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়ন হয়নি আজও। যমুনা নদী বেষ্ঠিত সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দর ব্যবহার করে বিদেশ থেকে আমদানি করা হাজার হাজার বস্তা সার উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার বাফার গুদামে পাঠানো হয়। এছাড়া উত্তরাঞ্চলের এই ১৬টি জেলার জ্বালানি তেল সরবরাহের প্রধান মাধ্যমও এই নদী বন্দরটি’ই। সিমেন্ট, গম, কয়লাসহ নানা পণ্যও নিয়মিত বহন করা হয় বাঘাবাড়ি নদীবন্দর হয়েই। দ্বিতীয় শ্রেণির এই বন্দরটি ইজারা প্রদান বাবদ প্রতি বছর প্রায় দেড় কোটি টাকা রাজস্ব পায় সরকার।
৩৬ বছরে মাত্র একটি শেড নির্মাণ করা হলেও ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বন্দরটির মূলপথ পাটুরিয়া-আরিচা থেকে বাঘাবাড়ি পর্যন্ত যমুনা নদী ড্রেজিং করা হয়নি একবারও। ফলে শুষ্ক মৌসুমে এই নদীপথে আসা সার ও জ্বালানি তেলসহ অন্যান্য পণ্যবহনকারি জাহাজ যমুনা নদীর বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়ে থাকে দিনের পর দিন। চরে আটকে থাকা জাহাজের পণ্য ছোট ছোট ট্রলারে বাঘাবাড়ি বন্দরে আনতে বাড়তি অর্থ ব্যায়ের ফলে লোকসান গুনতে হয় ব্যাবসায়িদের। এছাড়া মাঝনদীতে আটকে থাকা জাহাজে ঘটে নানা দুর্ঘটনা। এসকল বিরম্বনা এড়াতে বাঘাবাড়ির পরিবর্তে অণ্যান্য বন্দরমুখি হচ্ছে জাহাজগুলো। এছাড়াও বন্দরে জেটিঘাট ও গোডাউন স্বল্পতা রয়েছে। বন্দরে কাজ করা শ্রমিকদের বিশ্রামাগার না থাকায় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন তারাও।
নৌযান শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল ওয়াহাব বলেন, বাঘাবাড়ি বন্দরের নৌপথে নাব্যতা সংকট ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। দুটি জাহাজ একসাথে আসা যাওয়া করলে সংঘর্ষের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। পূর্ণ লোডের জাহাজ বন্দরে আসতে না পারায় জাহাজ মালিকদের ভাড়ায় পোষায় না, নানা কারণে বাঘাবাড়ি বন্দরের প্রতি বিমুখ হচ্ছে নৌযান চালক-মালিকেরা। অতিদ্রুত নৌপথ ড্রেজিং করে এই বন্দরকে সচল করা প্রয়োজন।শাহজাদপুরের রুপবাটি ইউপি চেয়ারম্যান ও বন্দর ব্যাবসায়ি আব্দুল মজিদ জানান, বাঘাবাড়ি বন্দরের নৌপথে পাটুরিয়া আরিচাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে নাব্যতা সংকটে বন্দরে জাহাজ না থাকায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বন্দর ব্যাবসায়ি, ট্রাকচালক ও শ্রমিকেরা। এই অঞ্চলের ব্যাবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বন্দর সচল রাখতে দ্রুত নৌপথ ড্রেজিংয়ের প্রয়োজন।
বন্দর ইজারাদার আব্দুস সালাম ব্যাপারি ও ব্যাবসায়ি আবুল হোসেন জানান, বন্দরে জাহাজ না আসায় বন্দর ইজারাদারসহ সকল ব্যাবসায়িরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। অতিদ্রুত বন্দরের নৌপথ ড্রেজিংসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা প্রয়োজন। কারণ উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব রয়েছে বাঘাবাড়ি বন্দরের।
বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দরের সহকারি বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দরটি দ্বিতীয় শ্রেণির, দ্বিতীয় শ্রেণির নৌ-বন্দরে নৌপথে যে পরিমান গভীরতা থাকে এখানেও তাই রয়েছে। বন্দরটির নৌরুটের নাব্যতা সংকটসহ সকল সমস্যা সমাধানে বন্দরটিকে ১ম শ্রেণিতে উন্নিত করতে হবে।
সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য প্রফেসর মেরিনা জাহান কবিতা বলেন, বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দরের গুরুত্ব অপরিসীম, এই বন্দরটি প্রথম শ্রেণিতে উন্নিত করার পাশাপাশি অন্যান্য সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নয়াশতাব্দী/এমএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ