চলতি আমন মৌসুমে পাবনার ঈশ্বরদীতে ধান কাটা-মাড়ায়ের মহোৎসবের ধুম পড়েছে। এসব আমন ধান কেটে সরিষা, তিল, মটর, মসুর, খেসারি, কালাই, আলু, গমসহ বিভিন্ন ফসল চাষের জন্য জায়গা খালি করা হচ্ছে।
এদিকে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা দলে দলে ধান কাটা, ধান মাড়াইয়ের ও ঘরে ধান সংগ্রহে ব্যস্ত। ধান কাটা-মাড়াইয়ে কৃষকের পাশাপাশি দিনমজুরদের মাঝেও বেড়েছে চরম ব্যস্ততা। ভালো ফলন ও দাম ভালো থাকায় নতুন ধান সংগ্রহে কৃষকদের মনে আনন্দের চিত্র ফুটে উঠেছে।
কৃষকরা জানান, চলতি মৌসুমে তেল, পানি ও সার সংকটে আমরা ভয়ে ছিলাম। বিঘা প্রতি গতবারের তুলনায় এবার ১ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। ধানের ফলন ভালো হওয়াই এবার আমরা খুশি। এবারে আমন ধান ভালো হয়েছে। ধানে চিঠার পরিমাণ কম। ধানের দাম অব্যাহত থাকলে আগামীতে ধান চাষে আমাদের আর ও আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় রোপা আমন ধানের মোট ৩ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন আমন ক্ষেত ঘুরে দেখা যায়, এর মধ্যে শীতকালীন ফসল সরিষার পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে তিল, মটর, মসুর, খেসারি, কালাই, আলুসহ বিভিন্ন ফসল চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
অন্যদিকে মাঠের ক্ষেতে ধান কেটে শুকানোর জন্য ফেলে রাখছেন কৃষক। পরে ধানের সঙ্গে খড় শুকিয়ে তা খোলায় নিয়ে যাচ্ছেন কৃষক।
চলতি আমন মৌসুমে বর্ষার পানি পর্যাপ্ত না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছিলেন আমন চাষিরা। আবার দেখা দিয়েছিলো সার সংকট এবং হঠাৎ তেলের দাম বৃদ্ধি। সব মিলিয়ে ধান চাষে খরচ বেশি হয়েছিলো কৃষকদের। আবার ধান কাটা-মাড়াইয়ে বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার টাকার মতো। তবে যদি ধানের দাম সরকার বাড়ায় তাহলে লাভের মুখ দেখবেন, বলছেন আমন চাষিরা।মুলাডুলির ইউনিয়নের কৃষক কবির মালিথা জানান, এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এবার অনাবৃষ্টি, তেল, সারের দাম বেশি থাকায় ভয়ে ছিলাম আমন ধান ভালো হবে কি-না।
তিনি বলেন, আমি আধুনিক রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে ৬ বিঘা আমন ধান চাষ করেছি। এতে আমার খরচ কম হয়েছে। বিঘা প্রতি ৫৫০০ টাকা খরচ হয়েছে, ধান ঘরে উঠতে সময়ও কম লেগেছে। ধান হয়েছে ২২ মণ করে, মণ প্রতি ১৪০০ টাকা ধান বিক্রি করে আমরা খুশি।
ধান কাটা শ্রমিকরা জানান, এবার বর্ষা নাই। মাঠে কোন পানি নেই। এতে আমাদের ধান কাটতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। আমরা ৭ জন এক সঙ্গে ধান কাটছি। ধান কাটা-মাড়াইতে বিঘা প্রতি ৩ হাজার টাকা নিচ্ছি। দিনে দেড় থেকে দুই বিঘা জমির ধান কাটতে পারছি। অনেক কৃষক ধানের বিনিময়েও ধান কাটিয়ে নিচ্ছেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার জানিয়েছেন, ঈশ্বরদী উপজেলায় মোট ৩ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। উপজেলার অধিকাংশ জমির ধান কাটা-মাড়াই হয়েছে। ফলন অনেক ভালো। আশা করছি, কৃষক তাদের কাঙ্খিত ফসল সময়মতো ঘরে তুলবেন।
নয়াশতাব্দী/এফআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ