ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর বাড়ি ঘিরে স্কুল বাউন্ডারি!

মাগুরায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর বাড়ি ঘিরে স্কুল বাউন্ডারি তোলা হয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের এমন কর্মকাণ্ডে চরম বেকায়দায় প্রতিবন্ধী আব্দুল মান্নানের পরিবার। প্রায় ৬ মাস ধরে মাগুরার মহম্মদপুর থানার তেলিপুকুর গ্রামের প্রতিবন্ধী মান্নানের পরিবার গৃহবন্ধী জীবনযাপন করছে।

শনিবার (৩ ডিসেম্বর) সরেজমিন এলাকাবাসী ও ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিবন্ধী আব্দুল মান্নানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহম্মদপুর থানার ঢুষরাইল মৌজার তেলিকাড়া গ্রামে স্ত্রী হাসিয়ারা বেগমের নামের (আরএস ১৪৯ খতিয়ানের ৩৪৮ নং দাগে) ৬ শতক জমিতে বাড়ি করে ৩০ বছর যাবত বসবাস করছেন। পরবর্তীতে তাদের বাড়ির পাশে ঢুষরাইল বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। এক সময় ওই বিদ্যালয়টি সরকারি করণ করা হয়। চলতি বছরের জুন মাসে ঢুষরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি পতু মোল্যা, প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নানসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বিদ্যালয়ের প্রয়োজনে প্রতিবন্ধী আব্দুল মান্নানকে তার বাড়ির জায়গা বিদ্যালয়ের জন্য ছেড়ে দিয়ে পাশের জায়গায় বাড়িঘর সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানান। ২৩ জুন মহম্মদপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার ওয়াহিদুজ্জামানের উপস্থিতিতে দু’পক্ষের মধ্যে আপোষ মিমাংসা হয় এই মর্মে যে বিদ্যালয়ের পাশের জায়গার গর্ত ভরাট করে বাড়ি তৈরির উপযোগী করে দেওয়া হলে নিজের বাড়িঘর ভেঙে এনে ওই জায়গায় আব্দুল মান্নান বাড়িঘর করবেন। আর বিদ্যালয়ের জন্য তার বাড়ির জায়গা ছেড়ে দিবেন। গত ৩০ আগস্টের মধ্যে গর্ত ভরাট করে দেওয়ার কথা থাকলেও সামান্য বালু দিয়ে সেখানে ঘর তৈরি করতে বলা হয় আব্দুল মান্নানকে। অসহায় হতদরিদ্র আব্দুল মান্নানের কাছে গর্ত ভরাট করার মতো কোনো টাকা না থাকায় তিনি বাড়ি সরিয়ে আনতে পারেননি। এরই মধ্যে একটি দুষ্টু চক্রের ইশারায় বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির খামখেয়ালি সিদ্ধান্তে বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীরের সঙ্গে প্রতিবন্ধী আব্দুল মান্নানের বাড়িঘর ঘিরে বাউন্ডারি করা হয়েছে। তাদেরকে উৎখাত করার জন্য অনেক সময় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ খামখেয়ালিভাবে বিদ্যালয়ের গেট বন্ধ করে রাখেন। এতে আব্দুল মান্নান ও তার পরিবারের স্বাভাবিক চলাচল ও জীবনযাপন ব্যহত হচ্ছে। তাদের আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশিরা তাদের বাড়িতে যেতে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছেন।

প্রতিবেশী ফুলমিয়া, আকতার ও বারিক ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, গরীব অসহায় হওয়ায় তাদের চরম দুঃখ দুর্দশার কথা কেউ বুঝতে চাচ্ছে না। বাড়িঘর সরিয়ে নিতে তথা তাদের পুনর্বাসনে কোনো সহযোগিতা করছে না। বিদ্যালয়ের স্বার্থের কথা বলে সকলে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে চলে যেতে বলছেন। কিন্তু তার অসহায়ত্বের কথা কেউ বুঝতে চাচ্ছেন না।

আব্দুল মান্নান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ঠিকমতো সংসারের খরচ যোগাতে পারেন না। প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা ও আত্মীয়-স্বজনের সহযোগিতায় কোনো রকম জীবিকানির্বাহ করেন।

এদিকে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি নানা অজুহাতে তাদের উৎখাত করার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে। ব্যক্তি স্বাধীনতা বলে তাদের কিছু নেই। নিজে অন্ধ হওয়ায় কিছুই দেখতে পান না। বাড়ি ঘেরা থাকায় চলাচল করতে অনেক সমস্যা হয়। তার বাড়ি বাদে বিদ্যালয়ের জায়গা ঘেরার সুযোগ থাকা সত্ত্বে সম্পূর্ণ অসৎ উদ্দেশ্যে তাদের বাড়ির সীমানা প্রাচীর দেওয়া হয়েছে। আবার তার বাড়ির জায়গার বদলে যে জায়গা দেওয়ার কথা হয়েছিল সেই জায়গা ভরাট করে দেওয়া হচ্ছে না। বাড়ি করার মতো নিজের কোনো জায়গা না থাকায় সরে যেতেও পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে তাকে চরম দুর্বিসহ জীবনযাপন করতে হচ্ছে। তিনি শান্তিপূর্ণ ও স্বাধীনভাবে বসবাস করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ঢুষরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হান্নান মোল্যা জানান, প্রতিবন্ধী মান্নানের দেওয়া অভিযোগের প্রেক্ষিত শিক্ষা অফিসারের উপস্থিতিতে মহম্মদপুর থানায় সালিশ বৈঠক হয়। সালিশ বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্থানীয় গ্রামবাসীর আর্থিক সহযোগিতায় তাকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে।

বিদ্যালয়ের সভাপতি তবিবর রহমান জানান, আব্দুল মান্নান একজন অসহায় প্রতিবন্ধী। তার প্রতি সকলের সহানুভূতি আছে। গ্রামের সবাই মিলে পাশের জায়গা ভরাট করে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে তিনি বসবাস করতে পারবেন।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, বিদ্যালয়ের নিরাপত্তার জন্য সীমানা প্রাচীর দেওয়া হয়েছে। তবে প্রতিবন্ধী মান্নানের চলাচলের জন্য বিদ্যালয়ের গেট খোলা রাখা হয়। তাছাড়া পাশের গর্ত ভরাট করে তাকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। আর তার চলাচলের জন্য উপযোগী রাস্তা রাখা হয়েছে।

নয়াশতাব্দী/এফআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ