ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

চাকরি ছেড়ে কেঁচো সার উৎপাদনে সফল নাঈম

প্রকাশনার সময়: ০১ ডিসেম্বর ২০২২, ১৪:৫৪
নাঈমের কেঁচো সার উৎপাদনের ছোট কারখানাটি পরিদর্শন করছেন দুজন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা

নাঈম হুদা কর্মজীবন শুরু করেছিলেন প্রকৌশলীর চাকরি দিয়ে। করেছেনও দুই বছর। কিন্তু শ্রম ও মেধার মূল্যায়ন পাননি। একদিন চাকিরটাই ছেড়ে দিলেন। শুরু করলেন কেঁচো সার উৎপাদন। এখন প্রতি মাসে তার আয় ৩৫-৪০ হাজার টাকা।

নাঈম হুদার বাড়ি চিরিরবন্দর উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের বৈকন্ঠপুরে। বাবার নাম ফজলুর রহমান। ২০১৬ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে স্নাতক শেষ করেছেন তিনি। পড়াশোনা শেষে উত্তরা ইপিজেডে চাকরি নেন।

আশা নিয়েই উত্তরা ইপিজেডে চাকরি শুরু করেছিলেন নাঈম। যে পরিমাণ শ্রম দিতেন, টাকা পেতেন না। চাকরিতে থেকেই চিন্তা করতে থাকেন, উদ্যোক্তা হবেন। কৃষি নিয়ে কাজ করবেন। ২০১৯ সালে চাকরি ছেড়ে বাসায় এসে কৃষিতে মনোযোগ দেন। রোপণ করেন কমলা বাগান, মাল্টা বাগান ও মিশ্রফলের বাগান। পাশাপাশি মাছ চাষ করতে থাকেন পুকুরে। সে সময় দেখলেন, ফল বাগানে রাসায়নিক সারের পাশাপাশি জৈব সারের প্রয়োজন হচ্ছে। তখন কৃষি অফিসের পরামর্শে দুই শতক মাটির ওপর কম্পোস্ট সার উৎপাদন আরম্ভ করেন। সেই থেকে কেঁচো সার দিয়ে ফলবাগানের গাছের চেহারা ভালো ও ফলন ভালো হচ্ছে।

নাঈম হুদা বললেন, পরে আমি এটা আমার পুকুরের মাছকে খাওয়ানো শুরু করি মাছেও ভালো ফলাফল আসে। তখন গ্রামের অনেকে ধানের জমিতে, সবজি খেতে কেঁচো সার ব্যবহার শুরু করে। দেখি কেঁচো খামারে ভালো মুনাফা আছে। তখন আমি এই সার ও কেঁচো নিয়ে গবেষণা শুরু করি। তখন হাউজ ও রিং থেকে আমি কেঁচো সার বাংলাদেশে প্রথম ট্রেতে উৎপাদন শুরু করলাম; এটা আমি মনে হয় দেশে প্রথম।

কেঁচো সার তৈরিতে কাজ করছেন নাঈম হুদা।

এরপর যোগ করলেন, ‘চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়া খামারটি বড় করার জন্য আমি আরও কিছু হাউজ তৈরি শুরু করেছি। এখন আমার প্রায় পাঁচ থেকে ছয় শতক মাটির ওপর তৈরি করেছি কেঁচো কম্পোস্ট’র খামার। এ খামার থেকে প্রতি মাসে গড় ৪ থেকে ৫ টন কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদিত হয়। প্রতি টন ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করি পাইকারিভাবে। আর খুচরা এ সার বিক্রি হয় ১৬ টাকা থেকে ১৮ টাকা কেজি দরে। এখন প্রতি মাসে ভার্মি কম্পোস্ট সার ও কেঁচো বিক্রি করে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় করছি।

বৈকন্ঠপুর গ্রামের কৃষক সাকিল ইসলাম বলেন, নাঈম আমাদের গ্রামের ছেলে। তার কাছ থেকে জৈব সার নিয়ে কলা বাগানে দিছিলাম, সাথে লাল শাক খেতেও দিছি। কলা ও শাকের বাম্পার ফলন হয়েছে। সেই সাথে রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে যে খরচ হতো, তার থেকে অনেক কম খরচ হয়েছে জৈব সার ব্যবহার করে।

তেঁতুলিয়ার গ্রামের কৃষক হযরত আলী বলেন, নাঈমের সবজি খেতে জৈব সার ব্যবহারের ফলে তার সবজির ফলন ভালো ও খরচ কম হওয়ায় তার দেখো দেখি তার কাছ থেকে এ জৈব সার কিনে আমার সবজি খেতে দিছি, সবজি খেতের রেজাল্ট ভালো হয়েছে।

চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জোহরা সুলতানা বলেন, চিরিরবন্দর উপজেলায় এনএটিপি প্রকল্পের আওতায় বেশ কয়েকটি ভার্মি কম্পোস্ট প্রকল্প চালু করেছি। এর মধ্যে অনেকে ভালো করেছে । তবে নাঈম হুদা উদ্যাক্তা হিসেবে খুব ভালা করছে। সে এর মধ্যে ভার্মি কম্পোস্ট সার ও কেঁচো বিক্রি করে ভালা একটা অবস্থা তৈরি করেছে। আমরা সকলে জানি ভার্মি কম্পোস্ট উৎকৃষ্ঠ মানের একটি জৈব সার, এটি মাটিতে দিলে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। মাটির সয়েলড বোন্ড ডিজিস গাছে কম হয়। সেখানে নাঈম হুদা নিজে সার তৈরি করে নিজের বাগানে দিচ্ছে এবং এগুলো বিক্রিও করে অর্থ লাভ করছে পাশাপাশি তার পুকুরের মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে ভালো ফলাফল পেয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ইতি মধ্যে আমরা কৃষি বিভাগ নাইমের ভার্মি কম্পোস্ট মৃত্তিকা গবেষণা ইনস্টিটিউড ভার্মি কম্পোস্ট এরে স্যাম্পল পাঠিয়েছি। সেইসেঙ্গে আমরা বগুড়া আরডিএতে স্যাম্পল পাঠানোর ব্যবস্থা োতে নিয়েছি। যাতে আমরা বুঝতে পারি এই ভার্মি কম্পোস্টে কি কি পুষ্টি উপাদানগুলো রয়েছে।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ