ময়মনসিংহের গৌরীপুরের মাওহা ইউনিয়নের অসহায় ও দুস্থদের শীতের কম্বল কিনে দিতে ধান কেটে টাকা সংগ্রহ করছে একদল শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষার্থীরা স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বন্ধুর বাঁধন একতা ছাত্র সংঘের সদস্য।
জানা গেছে, সংগঠনের সদস্যরা মাওহা ইউনিয়নের বাসিন্দা। তারা দেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। প্রতিবছর আমন ও বোরো মৌসুমে শিক্ষার্থীরা মজুরি ভিত্তিতে ধান কেটে ও রোপণ করে অর্থ সংগ্রহ করে গ্রামের অসহায় ও দুস্থদের সহযোগিতা করে থাকেন।
সেই ধারাবাহিকতায় দুস্থদের কম্বল কিনে দিতে শিক্ষার্থীরা ছুটিতে বাড়ি এসে মজুরি ভিত্তিতে কৃষকের আমন ধান কাটছেন।
বৃহস্পতিবার মাওহা ইউনিয়নের নয়ানগর বাউশালীপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায় ১০-১২ জন শিক্ষার্থীদের একটি দল কাঁচি দিয়ে কৃষক জমির ধান কাটছে। পরে ধান মাড়াই করে বস্তায় ভরে মুখ বেঁধে মাথায় নিয়ে কৃষকের বাড়ি পৌঁছে তারা। প্রতি কাঠা জমির ধান কাটা ও মাড়াই করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার বিনিময়ে ৭০০ টাকা পাচ্ছেন।
সংগঠনের সভাপতি শাহীন আলম বলেন, চলতি সপ্তাহেই আমরা ধান কাটা শুরু করেছি। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আমরা দল বেঁধে ধান কাটি। গ্রামে ধান কাটা শ্রমিকের সংকট থাকায় কৃষকরাই জমির ধান ঘরে তুলতে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
আনন্দ মোহন কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আজহারুল করিম বলেন, আমন মৌসুমে মজুরি ভিত্তিতে প্রায় ৫০ কাঠা জমির ধান কাটার উদ্যোগ নিয়েছি। ধান কাটার প্রাপ্ত অর্থ থেকে গ্রামের ১০০ জন দুস্থ মানুষকে শীতের নতুন কম্বল উপহার দেয়া হবে।
নয়ানগর গ্রামের কৃষক মাহবুবুর রহমান বলেন, গ্রামে ধান কাটার শ্রমিক সংকট। প্রতি কাঠা জমির ধান কেটে মাড়াই করে বাড়ি পৌঁছাতে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা লাগে। কিন্তু সংগঠনের সদস্যরা ৭০০ টাকায় করে দিচ্ছে।
মাওহা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আল ফারুক বলেন, পড়াশোনার জন্য এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা গ্রামে বাইরে অবস্থান করলেও গ্রামের দারিদ্রপীড়িত মানুষের মুখ তাদের চোখ এড়ায় না। ধানকাটার মৌসুমে তারা দল বেঁধে কাজ করে অর্থ উপার্জন করে অভাবী মানুষকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করে। তাদের কাজ মাওহার সুনাম বাড়িয়েছে।
ইউএনও হাসান মারুফ বলেন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির কিছু ইতিবাচক কাজ আমাদের নজরে এসেছে। বিভিন্ন সেবামূলক কাজের মাধ্যমে তারা পাড়াগাঁয়ে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। সবাই যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে এভাবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ালে শীতার্তদের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২২ এপ্রিল মাওহা ইউনিয়নে একদল শিক্ষার্থীরা হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বন্ধুর বাঁধন একতা ছাত্র সংঘ’। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সংগঠনের সদস্যরা এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণ, দুস্থদের ঈদ উপহার, সড়ক সংস্কার, কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা, বৃক্ষরোপণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রশংসা কুড়ায়।
নয়াশতাব্দী/এফআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ