রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) ভোর থেকে শুরু হয়েছে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট।
গত ২৬ নভেম্বর নাটোরে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের যৌথ সভায় এই ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছিলেন সংগঠনটির সভাপতি সাফকাত মঞ্জুর বিপ্লব।
বৃহস্পতিবার ভোর থেকে রাজশাহীর কোনো গাড়ি ছেড়ে যায়নি। জেলায় কোনো গাড়ি ঢুকতেও দেখা যায়নি। তবে বিআরটিসি বাস চলছে।
এই ধর্মঘটের কারণে বিপাকে পড়েছেন দূর-দূরান্তের যাত্রীরা। যানবাহন না পেয়ে দূর-দূরান্তে নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়ে পথে পথে যাত্রীরা নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সকাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার উদ্দেশে মহানগরের শিরোইল, ভদ্রা ও রেলগেট বাস টার্মিনালে আসেন যাত্রীরা। কিন্তু বাস না পেয়ে কেউ বিকল্প যানবাহন কেউবা বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। অনেককে আবার রাজশাহী রেল স্টেশনে ভিড় করতে দেখা যাচ্ছে।
ধর্মঘটের ফলে চাপ পড়েছে ট্রেনে। তাই বিভিন্ন রুটের ট্রেনের টিকিট এরই মধ্যে হাওয়া গেছে। টিকিট না পেয়ে অনেকে দাঁড়িয়েই রওয়ানা দিচ্ছেন। এছাড়া পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকেই ভোগান্তি পোহাচ্ছেন রাজশাহীর আন্তঃজেলা রুটের যাত্রীরাও। সিএনজি, হিউম্যান হলার, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন বিকল্প যানবাহনে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে যাত্রীরা জরুরি প্রয়োজনে নিজ গন্তব্যে রওয়ানা দিচ্ছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জেও অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট চলছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ১০ দফা দাবিতে ধর্মঘট শুরু করেছে পরিবহন মালিকরা। মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) বিকেল পর্যন্ত দূরপাল্লার বাস সব ছেড়ে গেলেও যাত্রীদের নিয়ে আর ফেরেনি। এছাড়া, বুধবার (৩০ নভেম্বর) বিকেল থেকেই আন্তঃজেলা চলাচলকারী পরিবহনগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।
এর আগে শনিবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে নাটোর শহরের কানাইখালি এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে বিভাগীয় পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় তাদের ১১ দফা দাবি আদায়ে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য রাজশাহীর আট জেলায় পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। নাটোর জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন- রাজশাহী বিভাগীয় সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি সাফকাত মনজুর বিপ্লব।
পরে একই স্থানে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ সংশোধন করা ও মহাসড়ক থেকে নছিমন, করিমন, ভটভটিসহ অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধসহ ১১ দফা দাবি বাস্তবায়নে সরকারের কাছে অনুরোধ জানানো হয়।
এছাড়া হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়ক থেকে থ্রি হুইলার সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ এবং পরিবহন যন্ত্রাংশের মূল্য কমানোরও দাবি করেন তারা। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে তাদের এসব দাবি বাস্তবায়ন করা না হলে ১ ডিসেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় পরিবহন ধর্মঘট পালন করা হবে বলেও সভায় ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
এদিকে রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ হবে শনিবার (৩ ডিসেম্বর)। গণসমাবেশে নেতাকর্মীরা যেন না আসতে পারে সেজন্য সরকার এই পরিবহন ধর্মঘট চাপিয়ে দিয়েছে বলে বিএনপি অভিযোগ করছে।
তবে বুধবার থেকেই নেতাকর্মীরা দূর-দূরান্ত থেকে রাজশাহী আসতে শুরু করেছেন। তাদের অনেকেরই বুধবার রাত কেটেছে খোলা আকাশের নিচে। ঠান্ডা বাতাসের ভেতর কম্বল গায়ে দিয়ে তারা রাত পার করেছেন।
বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে (হাজী মুহম্মদ মুহসীন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে)। বুধবার পুলিশের অনুমতি পাওয়ার পর মঞ্চ ও মাঠ প্রস্তুতের কাজ শুরু হয়েছে। তবে পুলিশের শর্ত অনুযায়ী, যারা মাঠে কাজ করছেন কেবল তারাই মাঠে প্রবেশ করতে পারছেন। অন্য সব নেতাকর্মীরা আশ্রয় নিয়েছেন মাদ্রাসা মাঠের পাশে রাজশাহীর হযরত শাহমখদুম (র.) কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে।
বুধবার রাতে ঈদগাহ মাঠে গিয়ে দেখা যায়, চাল, ডাল, শুকনো খাবার, পাতিল, লাকড়ি ও ব্যাগে প্রয়োজনীয় গরম কাপড় নিয়ে নেতাকর্মীরা এখানে এসেছেন। বেশিরভাগ নেতাকর্মী একপাশে শুধু পলিথিনের বেড়া দিয়ে কম্বল জড়িয়ে শুয়ে পড়েছেন। কোথাও কোথাও রান্নার আয়োজন চলছে। কেউ কেউ শ্লোগান দিচ্ছেন। স্থানীয় নেতারা তাদের খোঁজ নিচ্ছেন।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার একটি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলিনুর রহমান আন্না বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হচ্ছে বলে আগের দিনই চলে এসেছি। প্রায় ৪০০ নেতাকর্মী বগুড়া থেকে চারটি বাসে করে এসেছি।
তিনি জানান, রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা কলেজ মোড়ে পুলিশ তাদের বাস থেকে নামিয়ে দেয়। এরপর প্রায় ১৩ কিলোমিটার রাস্তা তারা হেঁটে এসেছেন। তারা সমাবেশ সফল করে ফিরবেন।
ঈদগাহ মাঠে খোলা আকাশের নিচে কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়েছিলেন পাবনার বেড়া পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক জহুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, পরিবহন বন্ধ থাকবে বলে আগেই চলে এসেছি। বাধা অতিক্রম করে তিন দিন আগেই সমাবেশস্থলে এসেছি। যত কষ্টই হোক, সমাবেশ সফল করেই ফিরবো।
নয়াশতাব্দী/জেডআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ