ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রতিপক্ষের নির্যাতনে বিছানায় কাতরাচ্ছে শ্রাবন্তী, অভিযোগেও মিলছেনা প্রতিকার

প্রকাশনার সময়: ৩০ নভেম্বর ২০২২, ২১:৪৭

মোংলায় স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী দুই বোনকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছেন প্রতিপক্ষরা। নির্যাতনের শিকার দুই বোনই এখন বিছানায় কাতরাচ্ছেন।

মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নির্যাতনের শিকার ওই দুই বোন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিলেও হাসপাতালে শয্যার সংকুলান না থাকায় তারা বাড়িতে চিকিৎসারত রয়েছেন। এ নিয়ে রাতে ভুক্তভোগী পরিবার থানায় অভিযোগ দিলেও ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও মেলেনি কোনো প্রতিকার। এ দিকে থানায় অভিযোগ দেওয়ায় বুধবার (৩০ নভেম্বর) সকালে ও দুপুরে দুই দফায় ভুক্তভোগী পরিবারকে ভয়ভীতিসহ নতুন করে নির্যাতন ও হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন প্রতিপক্ষরা।

জানা যায়, উপজেলার চিলা ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের হলদিবুনিয়ার পাগলের মোড় এলাকার গীর্জার মাঠে মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ব্যাডমিন্টন খেলছিলো স্থানীয় বাসিন্দা লিটন স্বর্ণকারের দুই মেয়ে বৈশাখী স্বর্ণকার (১৮) ও শ্রাবন্তী স্বর্ণকার (১৭)। তখন একই এলাকার শহিদুল হাওলাদারের ছেলে রাসেল হাওলাদার (২৫) ও মৃত বেলায়েত হাওলাদারের ছেলে সিহাব হাওলাদার (১৭)সহ ৫ থেকে ৬ জনে অতর্কিত হামলা চালায় খেলতে থাকা বৈশাখী ও শ্রাবন্তীর ওপর। তখন হামলাকারীরা খেলার মাঠ থেকে তাদেরকে চুলের মুঠি ধরে রাস্তার ওপর ফেলে প্রকাশ্যে মারধরসহ নির্যাতন করেন। তাদের ডাক চিৎকারের আশপাশের লোকজন ছুটে এলেও হামলাকারীরাদের ভয়ে তাদেরকে ছাড়ানোর সাহস করেননি কেউ। পরে খবর পেয়ে তাদের মা ছুটে এলে তাকেও মারধর করেন হামলাকারীরা। পরে অত্যন্ত মুমূর্ষু অবস্থায় তাদেরকে সেখান থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান পরিবার। রাতে হাসপাতালে শয্যা না থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদেরকে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিলে তারা বাড়িতে চলে যান। তাদের শরীরের সর্বাঙ্গে আঘাতের কালো দাগ, ফুলা জখম, আচর, কাটা-চেরার চিহ্ন রয়েছে। গত রাত থেকেই তারা বাড়িতে বিছানায় শয্যাশায়ী রয়েছেন। বিছানা থেকে নিজেরা উঠতে পারছেন না। আবার কারো সহায়তায়ও উঠতে পারছেন না ব্যথার যন্ত্রণায়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার প্রকাশ কুমার দাশ বলেন, মঙ্গলবার রাতে হলদিবুনিয়ার পাগলের মোড় এলাকা থেকে আসা গুরুতর আহত দুই বোনের সারা শরীরের মারাত্মক জখম দেখা গেছে। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর হাসপাতালে থাকার শয্যা সংকটের কারণে পরিবার তাদেরকে বাড়িতে নিয়ে যান।

এদিকে বিছানা থেকে উঠার শারীরিক সক্ষমতা না থাকায় নির্যাতনের শিকার শ্রাবন্তী সরকারের বুধবার থাকা তার বাংলা দ্বিতীয়পত্রের ব্যাকরণ পরীক্ষা দিতে পারেননি। বার্ষিক পরীক্ষা দিতে না পারায় তার এক বছরের লেখাপড়ার ভবিষ্যৎও অন্ধকারে চলে গেছে। এ নিয়েও দুঃখ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন নারী-পুরুষ বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই মেয়ে দুটিকে প্রকাশ্যে মারপিট করলো রাসেল ও সিহাব গং। তাতে কোনো বিচারও হয়নি। আবার মার খেয়ে পরীক্ষাও দিতে পারেনি শ্রাবন্তী। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ নিয়ে কোনো জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের কোনো ভূমিকাও নেই। সংখ্যালঘু তাই মার খেয়ে ও পরীক্ষা দিতে না পারার কোনো বিচারই পাচ্ছেন না লিটন পরিবার।

স্থানীয় চায়ের দোকানি পলি সরকার বলেন, রাসেল ও সিহাবসহ আরও কয়েকজন এসে বৈশাখী ও শ্রাবন্তীর ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে ব্যাপক নির্যাতন করেছেন। ওই সময় প্রচুর লোকজন জড়ো হলেও কেউ তা ঠেকায়নি। রাসেল ও সিহাব এলাকায় চরম বেপরোয়া। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারে না। তাদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এ এলাকার বহু পরিবার, যার কোনো বিচার হয়নি কোনদিন।

চরম নির্যাতনের শিকার শ্রাবন্তী স্বর্ণকার মালগাজী বালিকা বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী, অপর বোন বৈশাখী স্বর্ণকার মোংলা বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী।

অভিযুক্ত রাসেল ও সিহাব হাওলাদারকে বার বার ফোন করা হলেও তারা কল রিসিভ করেননি।

মোংলা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নয়াশতাব্দী/এফআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ