প্রায় সাত বছর আগে বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমল পাল শুরু করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের গল্প ফেরি করা। প্রথমে তিনি ময়মনসিংহ শহরের ব্রহ্মপুত্র নদের পারে জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালার পাশের জয়নুল পার্ক আর বিপিন পার্কে গল্প বলতেন। পার্কে বেড়াতে আসা শিশু-কিশোরসহ সব বয়সী মানুষকে ডেকে এনে তিনি শোনাতেন মুক্তিযুদ্ধের গল্প। এরপর বছর চারেক আগে তিনি শুরু করেন স্কুলে স্কুলে গিয়ে শ্রেণিকক্ষে মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলা। গল্প বলার সময় তিনি সঙ্গে রাখতে একটি সাদা বোর্ড। শিক্ষার্থীরা কখনো গল্প বুঝতে না
পারলে তিনি বোর্ডে মুক্তিযুদ্ধের পরিবেশ এঁকে, কখনো উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম দিক এঁকে যুদ্ধের বর্ণনা দিতেন। এভাবে তিনি
ময়মনসিংহ জেলা শহরের প্রায় সব স্কুলেই বলেছেন মুক্তিযুদ্ধের গল্প। এরপর শুরু করেন উপজেলা পর্যায়ের স্কুলে গল্প বলা। বিমল পাল ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলে আমি সবচেয়ে বেশি সুখ পান। কেউ আমন্ত্রণ জানালে দেশের যেকোনো জেলায় গিয়ে গল্প বলতেও তিনি রাজি। গল্প বলা ছাড়াও বিমল পাল লিখেছেন ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের তেলিখালী যুদ্ধের ওপর ছোট একটা বই। ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চের মতো জাতীয় দিবসগুলোয় তিনি যখন ঘর থেকে বের হন, তখন ওই ঝোলায় থাকে সেই বই।তবে এবার গল্প নয়, ময়মনসিংহে ৩শ কিলোমিটার পথ হাটার উদ্যোগ নিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমল পাল। আগামী ১ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে উজ্জীবিত করতে সার্কিট হাউজ মুজিব চত্বরে বিজয় পদযাত্রার অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে।
পরে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে তিনশ কিলোমিটার পথযাত্রা শেষ করে একই স্থানে সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে। মঙ্গলবার দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানান বীর মুক্তিযোদ্বা বিমল পাল।
বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমল পাল জানান, ২ ডিসেম্বর ভোর ৬টায় নগরীর টাউন হল থেকে ৩শ কিলোমটিার যাত্রা শুরু করবেন। প্রথম দিনে মুক্তাগাছা উপজেলা হয়ে যাত্রাবিরতি শেষে ফুলবাড়িয়া উপজেলার উদ্দেশ্যে রওনা করবেন। এভাবে ত্রিশাল ভালুকা হয়ে গফরগাঁও যাবেন ৪ ডিসেম্বর। ৫ ডিসেম্বর গফরগাঁও থেকে যাত্রা শুরু করে দেওয়ানগঞ্জ হয়ে নান্দাইল উপজেলা সদরে রাত্রি যাপন করবেন। ৬ ডিসেম্বর ঈশ্বরগঞ্জ হয়ে গৌরীপুর। পরদিন ৮ ডিসেম্বর নেত্রকোনার শ্যামগঞ্জ হয়ে পূর্বধলায় রাত্রি যাপন শেষে ভোরে চেচুঁয়া বিল হয়ে ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় উপস্থিতি এবং সেখানে রাত্রি যাপন। ৯ ডিসেম্বর ভোরে রওনা করে হালুয়াঘাটে উপস্থিতি ও রাত্রি যাপন। সেখান থেকে ১০ ডিসেম্বর ভোর ৪টায় যাত্রা শুরু করে ফুলপুর উপজেলা হয়ে তারাকান্দা উপজেলা যাত্রা বিরতি।
সেখান থেকে রওনা দিয়ে বিকেল ৪টায় ময়মনসিংহ নগরীর পাটগুদাম চায়না ব্রীজ সংলগ্ন জয় বাংলা চত্বরে উপস্থিতি। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে নগরীর জিরো পয়েন্ট হয়ে টাউন হল-সার্কিট হাউজ সংলগ্ন মুজিব চত্বরে সমাপনী অনুষ্ঠান।
মুক্তিযোদ্ধার বিজয় পদযাত্রা সমন্বয় কমিটির আয়োজনে হাঁটা কর্মসূচিতে সহযোগিতা করবেন, সংশ্লিষ্ট থানা ও উপজেলা প্রশাসন, ক্লিন আপ বাংলাদেশ, ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটি, ময়মনসিংহ সিটি সাইক্লিস্ট, হেল্পপ্লাস ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড।
সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা বিমল পাল, শংকর সাহা, ইয়াজদানী কোরায়শী কাজল এবং পদযাত্রা সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান ফয়সাল।
নয়াশতাব্দী/এফআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ