ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

একসঙ্গে এসএসসি পাস করলেন বাবা-ছেলে

প্রকাশনার সময়: ২৯ নভেম্বর ২০২২, ১৭:৫১

নাটোরে বাগাতিপাড়ায় বাবা ইমামুল ইসলাম ও তার ছেলে আবু রায়হান এবার একসঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেছেন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বাগাতিপাড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট কেন্দ্রের একই কক্ষে বাবা এবং ছেলে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। ইমামুল ইসলাম জিপিএ ৪.৭৯ এবং তার ছেলে আবু রায়হান জিপিএ ৪.৮২ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

তারা বাগাতিপাড়া উপজেলার পাকা ইউনিয়নের চকতকিনগর গ্রামের বাসিন্দা।

ইমামুল ভোকেশনাল শাখার ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিং ট্রেড থেকে পরীক্ষা দেন। আর রায়হান পরীক্ষা দেয় জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস ট্রেড থেকে।

জানা গেছে, পড়ালেখার অনেক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সংসারে অভাব-অনটনের কারণে অষ্টম শ্রেণি পাসের পর আর স্কুলে যাওয়া হয়নি ইমামুলের। পড়ালেখা ছেড়ে জীবিকার তাগিদে ২৪ বছর আগে তিনি ঢাকায় পাড়ি জমান। সেখানে প্রায় ১৮ বছর গার্মেন্টসে শ্রমিকের কাজ করেন।

২০১৬ সালে সেই কাজ ছেড়ে বাড়ি ফিরে আসেন। সেই সময়ে জমানো টাকা দিয়ে আমের ব্যবসা শুরু করেন। পাশাপাশি বাড়ির পাশে একটি ছোট্ট মুদির দোকান দেন। কিন্তু বুকের ভেতরে লেখাপড়া করতে না পারার চাপা কষ্ট মাঝেমধ্যেই তাকে পীড়া দিত। লোকলজ্জায় সেটিও হয়ে উঠছিল না। পরে পারিবারিক সিদ্ধান্তে সেই ইচ্ছা পূরণে ২০২০ সালে ছেলের সঙ্গে বাগাতিপাড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের ভোকেশনাল শাখার নবম শ্রেণিতে ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিং ট্রেডে ভর্তি হন। আর ছেলে রায়হান ভর্তি হয় একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একই শ্রেণির জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস ট্রেড।

ইমামুল ইসলাম বলেন, সমাজে আর ১০টা মানুষের মতো নিজেকেও একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে যেন পরিচয় দিতে পারি, সেই উদ্দেশ্যেই দীর্ঘ ২৪ বছর পর আবার লেখাপড়া শুরু করি। পড়ালেখায় শিক্ষকদের পাশাপাশি ছেলের সহযোগিতা নিই। ২০২০ সালে ছেলের সঙ্গে বাগাতিপাড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের ভোকেশনাল শাখার নবম শ্রেণিতে ভর্তি হই। এবার পাস করলাম। এখন পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চাই।

আবু রায়হান বলে, বাবা আর আমি একই শ্রেণিতে পড়ায় প্রথম দিকে লজ্জা পেলেও বাবার ইচ্ছার কারণে এখন আর কিছু মনে হয় না। বরং এখন গর্ব হয়। তাছাড়া একইসঙ্গে দুজনে পড়ার টেবিলে বসে পড়তেও বেশ ভালো লাগে। বাবা পাস করায় আমি ভীষণ খুশি হয়েছি। ভবিষ্যতেও আমরা একসঙ্গে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চাই।

বাগাতিপাড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোছা. সামসুন্নাহার বাবা-ছেলের একসঙ্গে পাসের খবরে তাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ