অন্যান্য সকল বিষয়ে ঈর্ষান্বিত নম্বর পেয়েও একটি কক্ষের ৫২ জন পরীক্ষার্থী গণিতে ফেল করেছেন। এমন ফলাফলে পরীক্ষার্থী-শিক্ষক ও অভিভাবকগণ হতবাক।
জানা যায়, এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি কলেজের ৮নং কক্ষে মোট ৬০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন। তবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে ওই ৬০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৮ জন মেয়ে পরীক্ষার্থী ছাড়া বাকি ৫২ জন ছেলে পরীক্ষার্থী সবাই এসএসসির ফলাফলে গণিতে ফেল করেছে। ওই হলের পরীক্ষার্থী সবাই ছিল ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ছাত্র।
সূত্র জানায়, সারাদেশের ন্যায় মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (এসএসসি) ময়মনসিংহ বোর্ডে ফল প্রকাশিত হয়েছে বৃহস্পতিবার। কাঙ্খিত ফল পেয়ে উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা যখন গোটা দেশ তখনই বিষাদে ছেয়ে গেছে আঠারবাড়ি এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের ৫২ পরীক্ষার্থী।
ফলাফলের পর অভিভাবক ও শিক্ষক হৃদয়সহ অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। ওই কেন্দ্রের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের পরীক্ষার্থীদের জন্য কলেজের ৮ নম্বর কক্ষ বরাদ্ধ দেওয়া হয়। ওই বিভাগের পরীক্ষার্থী ছিল ৬০ জন। এর মধ্যে ৮ জন মেয়ে ৫২ জন ছেলে ছিল। মেয়ে ৮ জনই সব বিষয়ে পাশ করলেও ছেলেরা গণিত বিষয়ে ফেল করেছে।
ওই হলের পরীক্ষার্থী ইয়াসির আরাফাত প্রান্ত বলেন, আমি সব বিষয়ে এ প্লাস পেয়েছি শুধুমাত্র গণিতে ফেল দেখানো হয়েছে। এই ফলাফল আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। গণিত পরীক্ষা আমার খুব ভালো হয়েছিল। কেন্দুয়া উপজেলার শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান জানান, আমাদের বিদ্যালয় প্রতি বছর জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় শতভাগ পাশ করে আসছে । এ বছর ঈশ্বরগঞ্জের আঠারবাড়ী এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে (কেন্দ্র নং-১৭৭) আমাদের বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষায় অংশ
নিয়েছিল। সাইন্স বিভাগ থেকে ২৯ জন অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৭ জন, মানবিক বিভাগ থেকে ২৭ জন অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬ জন । অন্যরা জিপিএ ৪.২৮ থেকে ৪.৯৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ১৬ জন অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে ৩ জন মেয়ে ১৩ জন ছেলে। মেয়ে ৩ জনের মধ্যে দুজন জিপিএ-৫ ও অন্যজন জিপিএ ৪.৮৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। অপরদিকে ছেলেরা সবাই গণিত বিষয়ে ফেল করেছে। ওই কক্ষের ৮ জন মেয়ে ছিল সবাই পাশ করেছে। কিন্তু ছেলেরা কেউ গণিত বিষয়ে পাশ করেনি। এই ফলাফল আমরা মেনে নিতে পারছিনা। ফলাফল সীট তৈরিতে ঝামেলা হতে পারে। বিষয়টির সঠিক তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান তিনি। তাঁর ধারণা সঠিক তদন্ত হলে ফেল করা ছাত্র থেকে অনেকেই জিপিএ-৫ সহ আশানুরূপ ফলাফলে উত্তীর্ণ হবে।
এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে আঠারবাড়ি হলের কেন্দ্র সচিব আব্দুল মতিন ভূঁইয়া বলেন, আঠারবাড়ি কেন্দ্রে আঠারবাড়ি ডিগ্রি কলেজের ৮ নং কক্ষের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিয়েছিল। ওই হলের ৮ মেয়ে ছিল সবাই পাশ করেছে, কিন্তু ছেলেরা সবাই গণিতে ফেল করেছে। অথচ ছেলেরা গণিত ছাড়া সব বিষয়ে ভালো নম্বর পেয়েছে। ফেল করা ছাত্রদের মধ্যে অনেকেই আছে গোল্ডেন এ প্লাস পাবে। তারা কেন গণিতে ফেল করছে বিষয়টি আমাদেরকে ভাবাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে বিষয়টির সঠিক তদন্তের দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান গাজী হাসান কামাল জানান, বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জেনেছি। খুব গুরুত্বসহকারে বিষয়টি দেখবো এবং দুই-তিন দিনের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে।
নয়াশতাব্দী/এফআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ