ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাকেরগঞ্জে স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের নামে প্রতারণার ফাঁদ

প্রকাশনার সময়: ২৯ নভেম্বর ২০২২, ১১:৩৯

বাকেরগঞ্জ স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের নামে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার সুকৌশল নিয়ে মাঠে নেমেছে একটি ভূইফোঁড় কোম্পানি। HHH টেলিমেডিসিন অপারেটর প্রশিক্ষণ ব্যানারে তিন দিনের প্রশিক্ষণ দিতে বাকেরগঞ্জ পৌর অডিটোরিয়াম ভাড়া নিয়েছেন সংস্থাটি।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর HHH টেলিমেডিসিন হিউম্যান হেলথ হেল্পলাইন নামের সংস্থাটি স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদিত ২০১৮ সালের একটি অনুমোদন দেখিয়ে কোনো প্রকার বিজ্ঞপ্তি ছাড়া স্বাস্থ্য সেবা প্রশিক্ষণের ট্রেনিং, সার্টিফিকেট দেয়া ও আকর্ষণীয় চাকুরির প্রলোভন নামে ১৪টি ইউনিয়ন থেকে প্রায় ৫০ জন নারীকে তিন দিনের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে।

HHH টেলিমেডিসিন অপারেটর প্রশিক্ষণের ব্যানারে ইতিমধ্যে ১৪টি ইউনিয়ন থেকে ৫০ জনকে ৯ হাজার টাকা করে বেতনের লোভ দেখিয়ে শুধুমাত্র ট্রেনিং এর জন্য জনপ্রতি ৬ হাজার ৫শত টাকা করে ২৯ নভেম্বর প্রশিক্ষণ শেষ দিনে টাকা জমা দিতে বলা হয়েছে।

প্রত্যেক চাকুরি প্রার্থীকে নিজ নিজ এলাকা থেকে গ্রাহক সংগ্রহসহ নানা শর্তজুড়ে দিয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি। বাকেরগঞ্জ স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন ছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নাম বিক্রি করে সরকারি ডাক্তারি সার্টিফিকেটেরও প্রলোভন দেখাচ্ছে তথাকথিত প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা।

টাকা নেয়া হলেও চাকুরিয়া নামে মূলত তাদের দিয়ে টেলিমেডিসিনের দালালি করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আকর্ষণীয় চাকুরির প্রলোভনে পড়ে টাকা দেয়া বিভিন্ন বয়সের অর্ধ শতাধিক নারীরা এখন এই কোম্পানির স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্তের থাকা জনপ্রতিনিধি ও তাদের চাকুরির পাশাপাশি কর্মের বাস্তবায়ন দায়িত্বে থাকা দারিয়াল ইউনিয়ন জনকল্যাণ সংস্থা ও পিপলস ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (পিডিও) কর্মকর্তাদের মন ভুলানো মিষ্টি কথায় প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়েছে।

গত ২৭ নভেম্বর প্রথম দিন প্রশিক্ষণে আসা কয়েকজন ওই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চাকুরি ও সার্টিফিকেটের বিষয়ে তাদের প্রতারণার বিষয়টি টের পেয়ে সাংবাদিকসহ উপজেলা প্রশাসনকে ঘটনাটি অবহিত করে। ওই দিন HHH টেলিমেডিসিন সংস্থার ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মার্কেটিং এর দায়িত্বে থাকা সেলিম রেজাসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে ডাকা হয়।

উক্ত প্রশিক্ষণ পরিচালনার সংশ্লিষ্ট দফতরের কোন অনুমোদন কাগজপত্র ইউএনওকে দেখাতে পারেনি। প্রশিক্ষণ দেয়ার নামে টাকা গ্রহণ ও চাকরির প্রলোভন দেখানোর কারণ জানতে চাইলে তারা কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেনি।

বাকেরগঞ্জ স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন ছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নাম বিক্রি করে সরকারি ডাক্তারি সার্টিফিকেটেরও প্রলোভন দেখাচ্ছে তথাকথিত প্রতিষ্ঠানটি। বরিশাল সিভিল সার্জন অফিস থেকে কোন প্রকার অনুমতি ছাড়া এই ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।

এমনকি HHH টেলিমেডিসিন অপারেটর প্রশিক্ষণের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগ করলে তারা এই ধরনের প্রশিক্ষণের বিষয় অনুমতি অস্বীকার করেন। সব ধরনের যাচাই-বাছাই শেষে বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজল চন্দ্র শীল প্রশিক্ষণ বন্ধের নির্দেশ দেন। অথচ নির্দেশ অমান্য করে প্রশিক্ষণ চালিয়ে আজ (২৯ নভেম্বর) শেষ দিনে টাকা প্রশিক্ষনার্থীদের থেকে নেয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

বিষয়টি নিয়ে বরিশাল সিভিল সার্জন জানান, ৬ হাজার ৫শত টাকা নিয়ে এই রকম একটি ট্রেনিং এর বিষয়ে আমার অফিস থেকে কোন অনুমোদন নেয়া হয়নি। তাদের যোগ্যতা কি তা না জেনে টাকার বিনিময়ে এইধরনের কোন ট্রেনিং এর অনুমোদন আমি দেইনি এবং দেবও না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দেন এই কর্মকর্তা।

এমন পরিস্থিতিতে প্রশিক্ষণার্থীদের প্রতারণার হাত থেকে বাঁচাতে উপজেলা প্রশাসনের এগিয়ে আসা দরকার।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ