ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

টাকায় মেলে বিএনপির পদ, বঞ্চিত ত্যাগীরা

প্রকাশনার সময়: ২৮ নভেম্বর ২০২২, ১৯:০৯ | আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২২, ১৯:১৪

পটুয়াখালীর বাউফলে টাকার বিনিময়ে উপজেলা ও ১৫টি ইউনিয়নে বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে উপজেলা বিএনপির দুই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে। অভিযোগ আমলে নিয়েছেন দলের মহাসচিব। তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমানকে।

আজ ২৮ নভেম্বর জেলা বিএনপি কার্যালয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

উপজেলা বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, গত বছরের ২৫ নভেম্বর উপজেলায় মো. শাহজাদা মিয়াকে আহ্বায়ক, মো. অলিয়ার রহমানকে সদস্য সচিব এবং পৌর এলাকায় হুমায়ন কবিরকে আহ্বায়ক ও এটিএম মিজানুর রহমানকে সদস্য সচিব নির্বাচিত করে বিএনপির কমিটি ঘোষণা করে জেলা বিএনপি।

এ উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব বিভিন্ন ইউনিয়নের কমিটি গঠন নিয়ে বাণিজ্যে মেতে উঠেন। টাকার বিনিময় কমিটি দেওয়া নিয়ে আহ্বায়ক শাহজাদা মিয়া, সদস্য সচিব অলিয়ার রহমান ও যুগ্ম-আহ্বায়ক আপেল মাহমুদ ফিরোজের কথোপকথনের অডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা। পরে আহ্বায়ক শাহজাদা মিয়া ও সদস্য সচিব অলিয়ার রহমানকে অব্যাহতি দিয়ে আব্দুল জব্বারকে আহ্বায়ক ও আপেল মাহমুদ ফিরোজকে সদস্য সচিব করা হয়। যা নিয়ে শুরু হয় নতুন করে সমালোচনা।

অভিযোগ উঠে, আহ্বায়ক জব্বার ২০১৬ সালে বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপাশা ইউপি নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন। অপরদিকে সদস্য সচিব আপেল মাহমুদ ফিরোজও কমিটি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। যার কথোপকথনের অডিও ফাঁস হয়েছিল।

এই দুই নেতা পদ পেয়ে শুরু করেন কমিটি বাণিজ্য। ঘোষণা করা হয় একের পর এক ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি। অর্থের বিনিময়ে ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে অন্যদের পদ দিতে শুরু করেন।

টাকার বিনিময় গোপনে কমিটি ঘোষণার প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপির মহাসচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. তসলিম তালুকদার ও মো. আনিচুর রহমান।

এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে উপজেলা সম্মেলন বন্ধ ঘোষণা ও ইউনিয়ন কমিটির বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

উপজেলা বিএনপির একাধিক যুগ্ম-আহ্বায়ক ও বিভিন্ন ইউনিয়নের বিএনপির নেতারা জানান, আহ্বায়ক আব্দুল জব্বার ও সদস্য সচিব আপেল মাহমুদ ফিরোজ ঢাকা বসে টাকার বিনিময়ে গোপনে বিভিন্ন ইউনিয়ন কমিটি ঘোষণা করেন। যাতে ত্যাগীদের বাদ দিয়ে নিস্ক্রিয় ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের পদ দেওয়া হয়।

উপজেলা বিএনপির একাধিক যুগ্ম আহ্বায়ক জানান, বাউফল বিএনপির জনপ্রিয় নেতা ও সাবেক এমপি শহিদুল আলম তালুকদারকে কোণঠাসা করার জন্য কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক মুহাম্মাদ মুনির হোসেন মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। জড়িয়ে পড়েছেন দলীয় কোন্দলে।

কালাইয়া বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদ-বঞ্চিত মো. শাহজাহান মাতুব্বর বলেন, ‘আমি দুই বার সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। দলের জন্য অসংখ্য বার নির্যাতিত হয়েছি। আমাকে করা হয়েছে ৪৮ নং সদস্য।’

উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক তসলিম তালুকদার বলেন, ‘দুর্দিনে দলের জন্য কাজ করেছেন এমন ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময় স্বজনপ্রীতি করে অদক্ষ, অসাংগঠনিক এবং এলাকায় থাকেন না এমন ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখে কেন্দ্রেীয় বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক মোহাম্মাদ মুনির হোসেনের নির্দেশে ঢাকায় বসে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।’

এবিষয়ে জানতে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল জব্বারের মোবাইল ফোনে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। বন্ধ পাওয়া যায় সদস্য সচিব আপেল মাহমুদের মুঠোফোনও।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক স্নেহাং সরকার কুট্টি বলেন, ‘দলের মহাসচিব এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমানকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে দল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।’

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ