চলনবিলের বিস্তৃত ফসলি মাঠ। মাঠজুড়ে সদ্য জন্ম নেওয়া হলুদ ফুলের সৌন্দর্য। সবুজের বুক চিড়ে জন্ম নেওয়া হলুদে মুগ্ধ হয় হৃদয়। আদিগন্ত সরিষা ফুলের হলুদছবি প্রকৃতিপ্রেমীদের করে তুলে মাতোয়ারা। ভোরের স্নিগ্ধ আলোয় হলুদের বুকে শিশিরের বিন্দু ফর্সা রমনীর নাকে শুভ্র নোলকের মতো লাগে।
তাড়াশ উপজেলাসহ চলবিলের নয়টি উপজেলা উত্তরাঞ্চলের মৎস্য ও শস্য ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত। দেশজুড়ে সুনাম রয়েছে এখানকার উৎপাদিত মাছ, সবজি, চাল-ডাল ও সরিষার। এবার কৃষকরা সরিষা চাষের দিকে বেশ ঝুঁকেছেন। কারণ সরিষা এখন লাভজনক ফসল।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ৫ হাজার ২৭০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও এর মধ্যে তা ছাড়িয়ে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমি ছাড়িয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১ হাজার ২৭০ হেক্টর বেশি।
এদিকে তেল জাতীয় ফসল চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে চলতি মৌসুমে তাড়াশ উপজেলার আটটি ইউনিয়নের ৩ হাজার ৫০ জন কৃষককে কৃষি প্রণোদনার অংশ হিসেবে বিনা মূল্যে উন্নত জাতের সরিষার বিজ ও সার দেয়া হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ফসলি মাঠে আরও সরিষা চাষের জন্য কৃষকরা জমি প্রস্তুত করছেন। এদিকে আগাম জাতের সরিষা ক্ষেত ফুলে ফুলে ভরে গেছে, মৌমাছিরাও মধু সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে, যা দেখে কৃষক ও দর্শনার্থীদের মন আনন্দে ভরে যাচ্ছে। আমাদের এলাকায় বিনা-১৪ জাতের সরিষার আবাদ বেশি হচ্ছে। প্রতি বিঘা জমিতে উফশী জাতের সরিষার ফলন ১০-১২ মণ পর্যন্ত হয় এবং বপণের ৭০-৮০ দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তোলা সম্ভব।
তাড়াশ গ্রামের সরিষা চাষী মোহাম্মদ আলী বলেন, সরিষা একটি অত্যন্ত লাভজনক ফসল। খরচ কম, পরিশ্রম কম ও সময়েও কম লাগে। প্রতি বিঘা জমি থেকে চলতি মৌসুমে ৬-৮ মণ হারে সরিষা পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ সরিষা চার হাজার টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন্নাহার লুনা বলেন, সরিষা চাষ সম্প্রসারণের জন্য কৃষি বিভাগ অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। সরকারিভাবে ৩ হাজার ৫০ জন কৃষককে বিজ ও সার সহায়তা দেয়া হয়েছে। কৃষককে স্বল্প মেয়াদি ধান ব্রি ৯০ চাষ করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রশিক্ষণে সরিষা চাষের উপকারিতা কৃষকদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।
নয়া শতাব্দী/আরআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ