আজ ২৭ নভেম্বর। ভোলাবাসীর কাছে দিনটি ‘কোকো ট্রাজেডি’ পরিচিত। ২০০৯ সালের এদিন জেলার লালমোহন উপজেলার তেঁতুলিয়া নদীতে ডুবে যায় এমভি ‘কোকো-৪ লঞ্চ।’ এতে প্রাণ হারান ৮১ জন যাত্রী।
কোকো ট্রাজেডির ১৩ বছর পার হলেও স্বজন হারানোদের কান্না এখনো থামেনি। সেই স্মৃতি মনে করে এখনো কাঁদছেন তারা, বিচার না পাওয়ার আক্ষেপ বয়ে বেড়াচ্ছেন জীবনভর।
এই লঞ্চ ডুবিতে দুই বছরের নাতনি লিমা ও মেয়েকে হারিয়েছেন উপজেলার রমাগঞ্জ ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ইসমাইল ব্যাপারী বাড়ির মনোয়ারা বেগম।
শনিবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা হয়। মনোয়ারা বলেন, মেয়ে ও নাতনি ঈদ করতে ঢাকা থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিলেন। কিন্তু দুজনের আর জীবিত বাড়ি ফেরা হয়নি।
মনোয়ারার মতো একই দশা নূরে আলম সাগরের। তিনি চর ছকিনা গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে। এই লঞ্চ ডুবিতে প্রাণ যায় তার নববধূ ইয়াসমিন, শ্যালিকা হ্যাপি বেগমের।
এছাড়াও শামসুন নাহার মেয়ে সুরাইয়া (৭), দেবরের মেয়ে কবিতা (৩) ও দেবর সোহাগ (১৩) হারিয়েছেন। তিনি বলেন, লঞ্চ ডুবে যাওয়ার ঘটনায় ছোট সুরাইয়া (৭) মারা যায়। তিনদিন পর লাশ পাওয়া যায়।
একই বাড়ির সুফিয়া বেগম হারিয়েছেন ছেলে সোহাগকে, হাজেরা হারিয়েছেন ২ বছরের শিশু কবিতা সুফিয়াকে, হাজেরা তাদের সন্তাদের হারিয়েছেন।
তারা বলেন, ঢাকার থেকে ফেরার পথে লঞ্চ দুর্ঘটনায় আমাদের সন্তান মারা গেছে। আমরা এর বিচার চাই।
লালমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, লঞ্চ দুর্ঘটনার ঘটনায় ২০০৯ সালের ৩০ নভেম্বর লালমোহন থানায় কোকো লঞ্চের চালক ও মাস্টারসহ ৮ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। ২০১১ সালে পুলিশ ওই মামলার চার্জশিট দিয়েছে। মামলাটি এখনও বিচারধীন অবস্থায় রয়েছে।
এ ব্যাপারে লালমোহন উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিন বলেন, লঞ্চ কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে এতো মানুষের প্রাণে গেছে। কিন্তু লঞ্চ মালিক পক্ষ কারো খোঁজখবর নেয়নি।তাদের কোন ক্ষতিপূরণ দেয়নি। আমরা ঘটনার বিচার চাই।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৬ নভেম্বর ঢাকা থেকে ঈদে ঘরমুখো যাত্রী নিয়ে ভোলার লালমোহনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে লঞ্চটি। দিবাগত রাতে লালমোহনের নাজিরপুর ঘাটের কাছে এসে যাত্রীর চাপে ডুবে যায়। কোকো ট্রাজেডিতে লালমোহনে ৪৫ জন, চরফ্যাশনের ৩১ জন, তজুমদ্দিনে ২ ও দৌলতখানে ৩ জনের প্রাণহানি ঘটে।
নয়াশতাব্দী/জেডেএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ