সুগন্ধি চালের কদর দেশে-বিদেশে সমাদৃত। জনপ্রিয় হওয়ায় দিন দিন দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর এ ধানের চাষ বাড়ছে। এ বছর সুগন্ধি ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। আগামী দুই-এক সপ্তাহের মধ্যে যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয় তাহলে বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। তবে এ ধানের দাম নিয়ে রয়েছে কৃষকের দুশ্চিন্তায়।
সরেজমিনে উপজেলায় ঘুরে দেখা গেছে, চারদিকে এখন ঢেউয়ের মতো দোল খাচ্ছে সুগন্ধি ধানের সোনালী শীষ। সবুজ ধান গাছ হলুদ বর্ণ ধারণ করছে তার উপর সুগন্ধি চিকন ধানের সেনালি শীষ। সুগন্ধি ধানের মৌ মৌ গন্ধে সোনালি ধানের শীষে ঝলমল করছে ফসলের মাঠ। মাঠভরা ফসল দেখে কৃষকদের চোখে-মুখে হাসি ফুটে উঠলেও ধানের দাম না পাওয়া নিয়ে আছে দুশ্চিন্তা।
জানা গেছে, কয়েক বছরে সুগন্ধি ধানের আবাদে এসেছে বড় পরিবর্তন। গত এক দশকে দিনাজপুরে সুগন্ধি ধানের আবাদ বেড়েছে অনেক চিরিরবন্দর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সুগন্ধি ধান আবাদ হয়।
নাম শুনেই বোঝা যায় এটির উৎপাদনই হতো কেবল রাজা-বাদশাহদের রসনা বিলাসে। আজ রাজা-বাদশাহরা নেই, নেই তাদের বাদশাহীও। তবে থেকে গেছে বাদশাভোগ। এখনও ঐতিহ্য ধরে রাখতে দিনাজপুরে সামান্য পরিমাণে উৎপাদিত হয় সুগন্ধি বাদশাভোগ ধান। শুধু বাদশাভোগ নয়, আরও আছে চিনি কাটারি, জিরা ৩৪, জিরা কাটারি, জটা কাটারি, কাটারিভোগ, ফিলিপাইন কাটারি, কালো জিরা, চল্লিশ জিরাসহ বেশ কয়েকটি প্রজাতির সুগন্ধি ধান। এই চাল দেখতে সরু ও লম্বা। এর অগ্রভাগ ছুরির মত একটু চোখা ও বাঁকা। উঁচু বেলে-দোআঁশ মাটি কাটারিভোগ চাষের উপযোগী। কাটারিভোগ চালের চিড়া প্রসিদ্ধ। এই চাল দিয়ে পোলাও, বিরিয়ানি, জর্দা, পায়েস, ফিরনি প্রভৃতি প্রস্তুত করা যায়। এই চাল সুগন্ধযুক্ত ও সুস্বাদু।বিত্তবান কিংবা মধ্যবিত্তদের বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানে, হোটেল-রেস্তোরাঁয়ও সুগন্ধি চালের ব্যবহার বেড়েছে। সব মিলিয়ে সুগন্ধি চালের চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী।
মথুরাপুর গ্রামের কৃষক সাইফুদ্দিন বলেন, আামি এবার সুগন্ধি ধান ২২ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তবে শেষ সময় এসে ধানে পোকার আক্রমণ দেখা গেছে। তাই খরচটা বেড়ে যাচ্ছে। ধান কাটার পর ধানের দামটা ভালো থাকলে লাভবান হব। ধানের দাম না পেলে ক্ষতিগ্রস্ত হবো।
পুনট্রি ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রামের কৃষক আরিফুল ইসলাম বলেন, আমি এবার ৪ একর জমিতে সুগন্ধি ধান আবাদ করেছি। ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে। তবে গতবছরের তুলনায় করচ বারছে সুগন্ধি ধান লাগার সময় আকাশের পানি না থাকায় সেচ দিয়ে পানি দিতে হয়েছে এবার সার, কিটনাশক ও ধান কাটা শ্রমিকের দাম বেমি। এখন দামটা ভালো পেলেই হয়। না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে।
উপজেলার ভিয়াইল গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক হোসেন বলেন, সুগন্ধি ধানের ফলন ভালো হয়েছে।তবে শেষ সময়ে আসে ধানে কিছু পোকার আক্রম দেখা দিছে এজন্য খরচ বাড়ছে। তবে জিরা ধানে গতবছরের তুলনায় এবার খরচ বারছে দ্বিগুন। কিন্তু ধানের বাজার নিয়ে আছে আমাদের দুশ্চিন্তা,কারণ ধানা কাটা মাড়াই করার সময় এ ধানের দাম কমে যায় তখন নেয্য দামে ধান বিক্রি করতে পারি না।
উপজেলার ভিয়াইল গ্রামের কৃষক উদয় রায় বলেন, জিরা ৩৪ সুগন্ধি ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগের পারার্মশে এবার আমি প্রায় ২বিঘা জমিতে সুগন্ধি ধান লাগিয়েছি। তবে গতকয়েক বছরের তুলনায় খরচ প্রায় দিগুন হারে বেরে গেছে গতবছর ৮০০ টাকার সার এবার ১৪০০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে কৃটনাষকের দামও বেরে গেছে এদিকে ধান লাগার শুরুতে জমিতে আকাশের পানি না থাকায় সেচ দিয়ে পানি দিতে হয়েছে সেখানেও তেলের দাম বেশি সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। কিন্তু ধান কাটা মাড়াই শুরু হলে এ ধানের বাজার কমে যায়। ধানের বাজার যদি বস্তা প্রতি ৪ হাজার ৫০০ টাকার উপর না থাকে গতবছরের মত শুরুতে ৩ বা সাড়ে ৩ হাজার টাকা বস্তা থাকে তাহলে এবার কৃষক লাভবান হতে পারবে না।
চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জোহরা সুলতানা বলেন, জেলার সবচেয়ে বেশি সুগন্ধি ধানের আবাদ চিরিরবন্দর উপজেলায়। সুগন্ধি ধান দিনাজপুরের একটি ঐতিহ্য। ইতোমধ্যে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ফলে কাটারিভোগ এখন বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিনিধি। সুগন্ধি ধানের আবাদ বাড়াতে কৃষি বিভাগ সবসময়ই কৃষকদের পাশে থেকে বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে আসছে।গত বছরের তুলনায় এ বছর সুগন্ধি ধানের ভালো ফলন হয়েছে। কৃষকরাও অনেক খুশি। সুদন্ধি ধানের এর মধ্যে জিরা-৩৪ আবাদ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। তবে কিছু জমিতে শেষ সময়ে এসে পোকার আক্রমন দেখা দিয়েছে আমার কৃষকদরে বিভিন্ন ভাবে সচেতন করার চেষ্টা করি কিন্তু কৃষক সঠিক ভাবে জমিতে বা সঠিক সময় কিটনাষক স্প্রে না করাই কিছু কিছু জমিতে পোকার আক্রম দেখা দেয়।
নয়াশতাব্দী/জেডআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ