স্বামীর অনুমতি ছাড়া হাসপাতালে যাওয়াই যেন ছিলো তানজিনা নামে এক গৃহবধূর একমাত্র অপরাধ। চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে দুপুরে বাড়ি ফেরার পর লাশ হতে হয়েছে ভৈরবের দুই সন্তানের জননী তানজিনা। পারিবারিক কলহের জের ও স্বামীর অনুমতি না নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার কারণেই ওই গৃহবধূকে মেরে ফেলেছে বলে স্বামী মাসুদুজ্জামান ও তাঁর পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেন নিহত গৃহবধূর মা সানু বেগম।
মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) দুপুর আনুমানিক আড়াইটার দিকে ভৈরব বাজারের বাতাসাপুট্টি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
বিগত বারো বছর আগে নবীনগর উপজেলার (বর্তমান বাড়ি ভৈরব বাজারের বাতাসাপুট্টি) খায়ের মিয়ার ছেলে মাসুদুজ্জামানের সঙ্গে ভৈরব পৌর এলাকার চন্ডিবের গ্রামের মৃত মাজাহার মিয়ার মেয়ে তানজিনার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে পারিবারিক কলহ লেগে থাকতো সংসারে। ১ মেয়ে ও ১ ছেলের জননী সে। পারিবারিক কলহের জেরেই এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করছে স্থানীয়রা।
জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুরে মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত ওই গৃহবধূকে রক্তাক্ত অবস্থায় স্বামী মাসুদুজ্জামান, শ্বশুর খায়ের মিয়া ও দেবর তোফাজ্জল চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই গৃহবধূকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় তড়িঘড়ি করে গৃহবধূর লাশ হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন অভিযুক্তদের আটক করে পুলিশকে খবর দেয়। পরে ভৈরব থানা পুলিশ হাসপাতালে এসে অভিযুক্ত স্বামী মাসুদুজ্জামানসহ তাঁর পিতা খায়ের মিয়া ও ছোটভাই তোফাজ্জল হোসেনকে থানায় নিয়ে যায় জিজ্ঞেসাবাদ করার জন্য।
নিহত গৃহবধূর মা সানু বেগম অভিযোগ করে বলেন, মঙ্গলবার সকালে তার মেয়ে স্বামীর বাড়ি থেকে চিকিৎসার জন্য শহরের একটি হাসপাতালে যায়। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দুপুরে ভৈরব বাজারস্থ স্বামীর বাড়িতে যায়। তখন তার জামাতা মাসুদুজ্জামান রাগান্বিত হয়ে তাকে ফোন করেন। অনুমতি ছাড়া হাসপাতালে যাওয়ায় মেয়েকে ঘরে ঢুকতে দিবে না এবং মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এরপর থেকে চেষ্টা করেও মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। হুমকির কিছুক্ষণ পর মাথায় গুরুতর রক্তাক্ত জখম নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে স্থানীয় লোকজন তাদের আটকের খবর পেয়ে তারা হাসপাতালে এসে মেয়ের লাশ দেখতে পায় বেডে। তার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে এমন অভিযোগ করে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ফাঁসির দাবি জানান তিনি।
এদিকে অভিযুক্তদের ভাষ্য, মঙ্গলবার দুপুরে তিনতলায় বারেন্দায় অসাবধানবসত পড়ে গিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। পরে তারা গুরুত্বর আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্ত স্বামীসহ তার পিতা ও ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য থানায় আনা হয়েছে। ঘটনা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি।
নয়াশতাব্দী/এফআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ