বুধবার (২৩ নভেম্বর) রাজাপুর পাকহানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বরিশাল অঞ্চলের মধ্যে ঝালকাঠির রাজাপুর থানা সর্বপ্রথম পাক হানাদার মুক্ত হয়। বৃহত্তর বরিশালের রাজাপুরের আকাশে উড়ে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। ১৪ নভেম্বর ১৯৭১ এরপর সারাদেশের ন্যায় রাজাপুরে মুক্তিযুদ্ধ আরও তীব্র হয়। দেশীয় দোসরদের সহায়তায় পাকবাহিনী সাধারণ নিরীহ জনগণকে ধরে এনে বধ্যভূমি সংলগ্ন থানার ঘাটে বেঁধে গুলো করে খালে ফেলে দেয়। লাশের গন্ধে ভারি হয়ে ওঠে আকাশ বাতাস।
তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা আবুল কালাম আজাদকে জাঙ্গালিয়া নদীর পাড়ে গর্ত করে জীবন্ত মাটি চাপা দেয় হানাদাররা। ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা রাজাপুর থানা আক্রমণ করেন। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। এ যুদ্ধে তৎকালীন থানা কমান্ডার কেরামত আলী আজাদ-এর নের্তৃত্বে প্রায় তিনশত মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেন। পরদিন সকাল পর্যন্ত চলে যুদ্ধ। যুদ্ধ চলমান থাকা অবস্থায় ৯নং সেক্টরের সাবসেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন শাহজান ওমর ওই যুদ্ধে যোগদেন। এই যুদ্ধে আব্দুর রাজ্জাক ও হোচেন আলী নামে দুজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। আহত হন ক্যাপ্টেন শাহজান ওমরসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা। থানার ঘাটে যাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল বর্তমানে তাদের স্মরণে সেইখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে সারাদেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়। রাজাপুর থানা ছিল ৯ নং বরিশাল সাব সেক্টরের অধীনে। উপজেলার কানুদাসকাঠিতে সাব সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন শাহজান ওমর মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি তৈরি করেন। দেশ স্বাধীনের পর মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য শাহজাহান ওমরকে বীরউত্তম খেতাবে ভূষিত করা হয়।
সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. শাহ-আলম নান্নু বলেন, ওইদিন রাত ৪টায় আমরা মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে চারদিক থেকে রাজাপুর থানা আক্রমণ করি। দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা যুদ্ধ চলার পরে পাক পুলিশ ও রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। রাজাপুরের আকাশে উড়ে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। এ যুদ্ধে আমরা প্রায় তিনশত মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করি। সেই যুদ্ধে আমাদের দুইজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়। আহত হন ক্যাপ্টেন শাহজান ওমরসহ অনন্ত ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা।
নয়াশতাব্দী/এফআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ