নাম ঝুমকি বেগম। বৃদ্ধ শ্বশুর, স্বামীসহ পরিবারে রয়েছেন ছয়জন সদস্য। তাদের একসময় ছিল কয়েক বিঘা ফসলি জমি, বসতবাড়ি ও ডেইরি ফার্ম। বুকে ছিল অনেক স্বপ্ন। নদীর ভাঙনে সেই সকল স্বপ্ন হারিয়ে হয়েছেন এখন নিঃস্ব।
সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া জমিটুকুও প্রভাবশালীরা দখল করে নেওয়ায় পরিবারের লোকজন নিয়ে দ্বারে-দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার পূর্ব এনায়েতনগর ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের আব্দুল হামিদ আকনের স্ত্রী ঝুমকি বেগম ও তার পরিবার।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই যে নদী দেখতেছেন না? ওই নদীর পাড়ে আমাগো বাড়িঘর,ফার্মসহ সব আছিলো, এখন আর কিছুই নাই। আমার এই জীবনে তিনবার আমাগো বাড়িঘর নদীর পেটে গেছে। জায়গা-জমি যা ছিলো, সব শ্যাষ। কতো যে না খাইয়া থাকছি হিসাব নাই। নদীতে যাগো সব লইয়া যায়, তাগো তো আর কোনো কিছুই থাকে না। এদিকে সব হারিয়ে ওই অসহায় পরিবারের আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন উপায় নেই বলে জানিয়েছেন ঝুমকির পরিবার।
রোববার সরেজমিনে জানা গেছে, উপজেলার পূর্বএনায়েতনগর ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের মো. হামিদ আকনের স্ত্রী ঝুমকি বেগম তার স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়িসহ -পরিজন নিয়ে আড়িয়াল খাঁ নদীর পাড়ে তার নিজ বসতবাড়িতে বসবাস করে আসছেন। ওই বাড়িতেই তিনি একটি ডেইরি ফার্ম নির্মাণ করে সুখের সংসার গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু কয়েকদফা ভাঙ্গনের পর প্রায় দুই বছর আগে রাক্ষসী নদী আড়িয়াল খাঁ তার বসতভিটা ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এতে করে তার স্বপ্ন মুহূর্তের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। এ ঘটনার পরে তাকে ভূমিহীন হিসেবে ঘোষণা করেন ইউপি চেয়ারম্যান।
এ দিকে তার পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করায় হামিদ আকন ও তার স্ত্রী ঝুমকী খানমের নামে ১১০নং আলীপুর মৌজায় মোট ২৬ শতাংশ সরকারি খাস জমি কবুলিয়াত দলিল মুলে ভূমিহীন হিসেবে প্রদান করা হয়। পরে সে জমিতে তিনি বসতঘর নির্মাণ করে ভোগ দখল করেন। কিন্তু একই গ্রামের প্রভাবশালী কবির খা, হাবি মালত, নজু মালত ও আরিফ মালতসহ বেশ কয়েকজন মিলে তাকে মারধোর করে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়। উপায়ন্ত না পেয়ে সে তাদের নামে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে আদালত হামিদ আকনকে তার জমি বুঝিয়ে দেয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু তার জমি এখনও বুঝিয়ে না দেয়ায় হামিদ আকন তার পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এবং তার জমি বুঝে পাবার জন্য দ্বারে-দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
ভূক্তভোগী ঝুমকি বেগম ও তার স্বামী হামিদ আকন কান্না জরিত কণ্ঠে বলেন, আমরা আমাদের পরিবারের ৬জন সদস্য নিয়ে সুখেই ছিলাম। কিন্তু নদী আমার স্বপ্ন নিয়ে গেছে। পরে আমাকে সরকার কিছু জমি দিয়েছে। কিন্তু প্রভাবশালী কবির খা, হাবি মালত, নজু মালত ও আরিফ মালতসহ বেশ কয়েকজন মিলে আমাকে মারধোর করে সেখান থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তাই আমি তাদের নামে মামলা করেছি। কিন্তু বিচার পাইতেছি না। এখন আমাদের আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন উপায় নেই। তবে অভিযুক্তরা ঘটনা অস্বিকার করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পিংকি সাহা বলেন, হামিদ আকনের বিষয়টি আমি দেখতেছি।
নয়াশতাব্দী/জেডএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ