কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন ভাষ্কর্য ‘স্বাধীনতা ৭১’ অযত্নে ও অবহেলায় নষ্ট হতে চলেছে।
জানা গেছে, জেলা পরিষদের অর্থায়নে বিগত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তাড়াইল উপজেলা চত্বরের পুরাতন কোর্ট ভবনের বালুর মাঠে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক হিসেবে প্রায় ৪৭ লক্ষ টাকা ব্যায়ে নির্মাণ করা হয় ‘স্বাধীনতা ৭১।’
২০১৬ সালের ২৬ মে ভাষ্কর্যের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন কিশোরগঞ্জ- ৩ (তাড়াইল-করিমগঞ্জ) আসনের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু। ২০১৯ সালের ৯ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ভাষ্কর্যটি উদ্ভোধন করেন।
৫১ ফুট উচু বেদীতে প্রতীকী হিসেবে একজন নারী ও দুইজন পুরুষ মুক্তিযোদ্ধা বন্দুক এবং গ্র্যানেড হাতে দন্ডায়মান। ভাষ্কর্যটির মাঝখানে ৮ ফুট বাই ৬ ফুট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং ৭ বীরশ্রেষ্ঠের ম্যুরাল স্থাপণ করা হয়। নিচে গোলাকৃতি বেদী স্থাপণ করে সাজানো হয় বিভিন্ন ফুলের চারাগাছ দিয়ে। বিভিন্ন রঙ-বেরঙের লাইটিং দিয়ে সাজানো হয় ভাষ্কর্য ‘স্বাধীনতা ৭১।’ প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকে দৃশ্যমান এই ভাষ্কর্যটি ছিল উপজেলার গৌরব।
ভাষ্কর্যটি দরপত্রের মাধ্যমে কার্যাদেশ পায় জেলার শম্পা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ভাষ্কর্য শিল্পী শ্যামল-সুষেণের হাতের পরশে বাস্তব রূপ পাওয়া এই দৃষ্টিনন্দন ভাষ্কর্যটি ক্রমেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রতীকী মুক্তিযোদ্ধাদের খসে পড়ছে পলেস্তরা। শ্যওলা ও ধূলোবালিতে আধুনিকতার অস্থিত্ব হারিয়ে যাচ্ছে। নিচের বেদীতে নেই কোনও ফুলের গাছ। আগে যেখানে সন্ধ্যা হলেই লাল-নীলসহ বিভিন্ন রঙের লাইট জ্বলতো এখন এটি শুধুই কল্পনা। কোনও কোনও লাইট ভেঙে ঝুলে আছে আবার কোনটার অস্থিত্বও নাই। লোকমুখে শুনা যায় রাতের বেলায় এখন ওখানে বখাটে ছেলেদের আড্ডা জমে।
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যন জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া শাহীন জানান, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত এই স্থাপনাটি জেলা পরিষদের। আমি ব্যাক্তিগতভাবে ভাষ্কর্যটি আগের রূপে ফিরিয়ে আনার জন্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেছি।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই জানান, বঙ্গবন্ধুর ডাকে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীর নিকট থেকে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে ছিনিয়ে এনেছি স্বাধীনতা। এরই প্রতীক হিসেবে ‘স্বাধীনতা ৭১’ ভাষ্কর্যটি প্রশাসনের উদাসীনতায় দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অচিরেই এই স্থাপণাটি সংস্কার করার জোর দাবি জানান তিনি।
ভাষ্কর্য শিল্পী শ্যামল-সুষেণ জানান, দুই বছর পরপর এসকল স্থাপণা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সংস্কার করা প্রয়োজন। উপজেলার এই স্থাপনাটির ৪ বছর পেরুলেও অর্থ বরাদ্ধ দেয়নি জেলা পরিষদ।
ভাষ্কর্যটির বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যন জিল্লুর রহমান জানান, ৪৬ লক্ষ আটান্ন হাজার ৪৪২ টাকা ব্যায়ে নির্মিত তাড়াইলে ‘স্বাধীনতা ৭১’ ভাষ্কর্যটি কিছুদিন আগেই আমি পরিদর্শন করেছি। জেলায় মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার স্মরণে এরকম আরও কয়েকটি ভাষ্কর্য আছে। প্রতিটি ভাষ্কর্যই সংস্কার করা প্রয়োজন। এই মুহূর্তে প্রয়োজনীয় অর্থের সংকটের কারণে একটু বিলম্ব হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব এই সকল স্থাপনা আগের রূপে ফিরিয়ে আনবো।
নয়াশতাব্দী/জেডএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ