কক্সবাজার সদর উপজেলা আ’লীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল আগামী শনিবার। ইতোমধ্যে দলের হাইকমান্ড থেকে এমন বার্তা এসেছে যে, সৎ, যোগ্য, সমাজে সমাদৃত, পারিবারিকভাবে আওয়ামী পরিবারের সন্তান হবেন এমন ব্যক্তিকে সম্মেলনের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত করা হবে। বিভিন্ন সময়ে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত থেকে দলের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার সঙ্গে জড়িত কাউকে এতে মূল্যায়ন করা হবে না বলে জানিয়েছেন দলের হাইকমান্ড।
কিন্তু সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই নেতা হওয়ার লক্ষ্যে জনপ্রিয়, গ্রহণযোগ্য নেতাদের পাশাপাশি বেশকিছু বিতর্কিত নেতারাও শীর্ষ পদের আশায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন। যাদের অনেকের বিরুদ্ধে পতিতা ব্যবসা, মানবপাচার, অস্ত্রধারী, তালিকাভুক্ত রাজাকারের মেয়ে বিয়ে, পরিবেশ ধ্বংস ও চাঁদাবাজির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।
এ কারণে সম্মেলনে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কোনো কোনো প্রার্থী অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের জড়ো করে দফায় দফায় সশস্ত্র মহাড়া দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ উঠেছে, মাদহমুদুল করিম সরকারি গেজেট ভুক্ত রাজাকার জাকারিয়ার মেয়ে জামাই। সম্প্রতি পাহাড়কাটার দায়ে পরিবেশ মামালার আসামিও হয়েছেন।
অপর সভাপতি প্রার্থী সদর আ’লীগের যুগ্ম আহবায়ক, ঝিলংজা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান আত্মমুখী হয়ে চলেন বলে তার প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না অনেকেই।
অপরদিকে, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জসিম উদ্দিনও হত্যাসহ অর্ধডজন মামলার আসামি। অপর সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী বদিউল আলম আমীর পতিতা ব্যবসা-মানবপাচারসহ অর্ধডজন মামলায় চার্জশিটভুক্ত। অপর প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউর রহমান রেজা রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হলেও ছাত্র রাজনীতি করেননি। কিন্তু তার দুলাভাই অবিভক্ত সদর আ’লীগের সভাপতির দায়িত্ব থাকাকালীন ওই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বপান। এরপর সদর ও ঈদগাঁও বিভক্ত হলে তিনি সদর কমিটির যুগ্ম আহবায়ক হন। বয়সে তরুণ হওয়ায় তাকে অনভিজ্ঞ বলে মনে করেন অনেকেই।
অভিযোগ আছে, কাউন্সিলে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের অনেককে বাদ দিয়ে হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাই মামলার আসামি ছাড়াও 'মাইম্যান' তৈরি করতে বিএনপি-জামায়াত ঘরানার লোকদের কাউন্সিলর করায় উপজেলা আওয়ামী লীগে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
সদর আওয়ামী লীগের আহবায়ক ও সভাপতি প্রার্থী মাদু সন্ত্রাসী জড়ো করে দফায় দফায় অস্ত্রের মহাড়া দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আলোচিত মোর্শেদ বলি হত্যা মামলার ৬ জন আসামিকে আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি তাকে ভোট দেওয়ার শর্তে শপথ করিয়ে জামায়াত বিএনপি ঘরনার নেতাকর্মী ও বিতর্কিতদের কাউন্সিলর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। বাদ দেওয়া হয়েছে ত্যাগীদের।
তবে, অভিযোগ অস্বীকার করে মাদু বলেন, আমি কোনো সন্ত্রাসী বা অস্ত্রধারী নিয়ে মহড়া দিইনি। বরং অন্যরা অস্ত্র দেখিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে, অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে।
হত্যা মামলার আসামিদের কাউন্সিলর তালিকায় রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জেলা আওয়ামী লীগ তাদেরকে স্থায়ী বহিষ্কার করেনি। তাই মোর্শেদ বলি হত্যা মামলায় আসামি যারা জামিনে বের হয়েছেন, তাদের কাউন্সিলর তালিকায় রাখা হয়েছে।
সদর কমিটির যুগ্ন আহ্বায়ক ও সভাপতি প্রার্থী টিপু সুলতান বলেন, কাউন্সিলর তালিকায় অপরাধীদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাদেরকে দিয়ে কাউন্সিলে অপরাধ সংঘঠনের সম্ভাবনা রয়ে যায়। যা মোটেও কাম্য নয়। এসব বিষয় উল্লেখ করে সাংগঠনিক টিম ও জেলা আ’লীগকে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
সদর আ’লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বলেন, সাংগঠনিক দক্ষতাসম্পন্ন, সৎচরিত্র, দল এবং সমাজের মাঝে গ্রহণযোগ্য ও পারিবারিকভাবে আওয়ামী ব্যাকগ্রাউন্ডের হবে এমন ব্যক্তিকেই সম্মেলনের মাধ্যমে বাছাই করা হবে।
অভিযোগ উল্লেখ করে জানতে চাইলে সাংগঠনিক টিমের প্রধান মাহবুবুল হক মুকুল বলেন, সদর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর তালিকা অসম্পন্ন নানা ত্রুটি থাকলেও জেলা আওয়ামী লীগ স্বপ্রণোদিত হয়ে সম্মেলন ও কাউন্সিল করতে চাইলে সাংগঠনিক টিমের করণীয় কিছু নেই।
এসব বিষয়ে কথা বলতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিক বার কল করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা যায়নি।
কিন্তু গত ১২ নভেম্বর সদরের ঝিলংজা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলনে নিজের সমন্ধীকে সভাপতি করতে ব্যর্থ হয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান ব্যালট নিয়ে কাউন্সিল ত্যাগ করেন। এরপর থেকেই তিনি সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলছেন। মূলত এরপর হতেই সদর আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল নিয়ে শঙ্কা বাঁধতে শুরু করে।
এদিকে, ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে সামনে রেখে এসব বিশৃঙ্খলা মেনে নিতে পারছে না দলের ত্যাগীরা। তাদের মতে, সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সদর আ’লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব দলের জন্য দুর্নামই বয়ে আনতে পারে।
নয়াশতাব্দী/এফআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ