পাবনায় নতুন সংগঠনের নামে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চরমপন্থিরা। তাদের হাতে ইতোমধ্যে ৪জন হত্যার শিকার হয়েছেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এসব চরমপন্থিরা পাবনা জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে সালিশ-দরবারের নামে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম করছে। এসব চরমপন্থিরা পূর্ব বাংলা, সর্বহারা-মাওবাদী বলশেভিক পুনর্গঠন আন্দোলনের (পিবিএসপি-এমবিআরএম) সশস্ত্র ও প্রশিক্ষিত সদস্য। আত্মসমর্পণকৃত সর্বহারা নেতা মুসা হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত চরমপন্থি দলের ৫ সদস্য পুলিশকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
সোমবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে পাবনার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুনসী। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. মাসুদ আলম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. রোকনুজ্জামান সরকারসহ পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে রবিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে আতাইকুলা থানার ফারাদপুর নতুন পাড়ায় সর্বহারাদের আস্তানা থেকে ৫টি অত্যাধুনিক অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদসহ ৫জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি যে, আতাইকুলা থানার ফারাদপুর নতুন পাড়ার মো. নাহিদের বাড়িতে সর্বহারাদের আস্তানায় অত্যাধুনিক অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদসহ প্রশিক্ষিত চরমপন্থি দলের সদস্যরা অবস্থান করছেন। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে রবিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে পুলিশের দুটি চৌকশ দল সেখানে অভিযান চালায়। দুঃসাহসিক ও ঝুঁকিপূর্ণ এই অভিযানের সময় চরমপন্থিরা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন। পুলিশের উপর গুলি করারও চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ঘটনাস্থলে উপস্থিত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম এবং তার টিমের সদস্যদের উপস্থিত বুদ্ধি, সাহসিকতা ও কৌশলের কারণে কোন অঘটন ছাড়াই ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানটি সম্পূর্ণ হয়।
তিনি আরও জানান, অভিযানে ৫ চরমপন্থি সদস্যকে কোনো ধরনের রক্তপাত ছাড়াই গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, চাটমোহর থানার কদমতলীর আব্দুল হাই সামাদের ছেলে সাইফুর ইসলাম ওরফে শুটার সিরাজ (২৫), আটঘরিয়া থানার নগরচাচকিয়া উত্তরপাড়ার মো. নায়েব আলীর ছেলে মো. একরাম হোসেন (২৫), আমিনপুর থানার চর দূর্গাপুরের কোরবান ব্যাপারীর ছেলে মো. শরিফুল ইসলাম (২৫), আতাইকুলা থানার সাদুল্লাহপুরের ফারাদপুর নতুনপাড়ার গফুর প্রামাণিকের ছেলে নাহিদুল ইসলাম শাকিল (১৯) ও রাজবাড়ী জেলার চরভরাট গ্রামের মো. আজিজুল আয়নাল প্রামানিকের ছেলে জালাল প্রামানিক (২৮)। এসময় তাদের কাছ থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল, ১টি ম্যাগজিন, ১ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, ১টি ওয়ান শুটার গান, ১টি বিদেশি এসএমসি, এসএমসির ম্যাগজিন, এসএমসির ১৫ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, একটি শর্টগান, ৩২ রাউন্ড বারো বোরের তাজা কার্তুজ ও ৬টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
অভিযানে নেতৃত্বদানকারী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. মাসুদ আলম জানান, আসামিরা পূর্ব বাংলা-সর্বহারা-মাওবাদী বলশেভিক পুনর্গঠন আন্দোলনের (পিবিএসপি-এমবিআরএম) সশস্ত্র ও প্রশিক্ষিত সদস্য। এই গ্রুপটি রাজবাড়ি জেলা ও পাবনার ঢালারচর, সাগরকান্দি, আতাইকুলা, সাদুল্লাপুর, ভাড়ারা ও একদন্তের প্রত্যন্ত এলাকায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। ইতোপূর্বে এই গ্রুপের সদস্যদের হাতে সাবেক সর্বহারা সদস্য ভাড়ারার আমিরুল, সাদুল্লাপুরের বিল্লাল মিশৌরী, ঢালারচরের আক্কাস এবং একদন্ত অলির মোড়ে সর্বহারা (আত্মসমর্পনকৃত) নেতা মুসা খাঁ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। তাদের সবার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৬ অক্টোবর বিকালে পৌনে ৫টার দিকে আটঘরিয়া থানার একদন্ত ইউনিয়নের অলির মোড়ে নজিবুলের চায়ের দোকানের পেছনে (২০১৯ সালে আত্মসমর্পনকৃত ১৬নং সিরিয়াল) সর্বহারা নেতা মুসা খাঁকে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে খুন করে। এসময় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সর্বহারা জিন্দাবাদ, মাওবাদি বলশেভিক জিন্দাবাদ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে পালিয়ে যায়।
নয়াশতাব্দী/এমএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ