পটুয়াখালী শহরের থানাপাড়া এলাকার ফরহাদ হোসাইন খানের স্ত্রী অহিদা পাপড়ি। চর জৈনকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা তিনি। শিক্ষকতার পাশাপাশি নিজে স্কুটি চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন অন্য নারীদের স্কুটি চালানো শেখান।
অহিদা পাপড়ির স্বামী ফরহাদ হোসাইন খান বলেন, আমার স্ত্রী স্কুটি চালানোর ফলে তার প্রতিদিনের যে যাতায়াত খরচ সেটা সাশ্রয় হচ্ছে। এছাড়াও বাচ্চাদেরকে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে যে খরচটা হত সেটাও কমে গেছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করার পরে আমাদের আলাদা একটি আয়ের ব্যবস্থা হয়েছে। যেটা সঞ্চয় করতে সহযোগিতা করেছে।
জানা যায়, স্বামী ও স্ত্রী দুজনেই শিক্ষকতা পেশায় থাকায় সন্তানদেরকে বিদ্যালয়ে পৌঁছে দিতে সমস্যায় পড়তেন তারা। এছাড়াও বাসা থেকে নিজের কর্মস্থানের দূরত্ব বেশি থাকায় রিকশা ভাড়াও বেশি খরচ হতো। তাই দুর্ভোগ কমানোর জন্য তিন বছর আগে স্বামীর কাছ থেকে স্কুটি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন অহিদা পাপড়ি। এখন নিজের স্কুলে যাওয়ার পথে সন্তানদেরকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে যান। আবার স্কুল থেকে ফেরার পথে সন্তানদেরকে নিজেই নিয়ে আসেন বাসায়। বিভিন্ন ছুটিতে ঘুরতে যাওয়া ও কেনাকাটা করতে সন্তানদের নিয়ে একাই স্কুটি চালিয়ে মার্কেটে চলে যান। নিজে সুবিধা উপভোগ করার পরে শহরের অন্যান্য নারীদের অনুপ্রাণিত করতে লেডি বাইকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলে বসেন। এখন পর্যন্ত তার কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ৫০ জনের মতো নারী।
দিনে শিক্ষকতা শেষ করে সন্ধ্যা ৭টা থেকে পটুয়াখালী শহরের ঝাউবন এলাকায় স্কুটি নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন অহিদা পাপড়ি। শুক্র ও শনিবার বিদ্যালয় বন্ধ থাকলে পটুয়াখালী খেলার মাঠ ও এয়ারপোর্ট এলাকায় নারীদের স্কুটি প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। প্রশিক্ষণের জন্য দুটি স্কুটি রয়েছে তার।
অহিদা পাপড়ি বলেন, আমি পেশায় একজন শিক্ষক। আমার স্কুলটা বাসা থেকে অনেক দূর সেখানে যেতে হলে আমাকে রিজার্ভ রিকশা নিয়ে যেতে হতো। তাছাড়া মাঝে মাঝে আমার সন্তানদেরকে স্কুলে নামিয়ে দিতে হয়। এই কথা চিন্তা করে আমি নিজে স্কুটি চালানোর উদ্যোগ নেই। আমার স্বামীও এই শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। দুজনেই ব্যস্ত থাকায় দুজনের সুবিধার্থে এই স্কুটি প্রশিক্ষণ নিয়ে আমি সহজে চলাচল করছি। এরপরে দেখলাম আমি যে সুবিধা পেয়েছি অন্য নারীদেরকেও এই সুবিধা দেয়া যায় কিনা। কারণ অনেক মেয়েরাই চান মোটরসাইকেল বা স্কুটি চালাতে। ভালো নারী প্রশিক্ষকের চাহিদা রয়েছে আমাদের এই পটুয়াখালীতে।
প্রশিক্ষণার্থী সোনিয়া আফরোজ তন্নী বলেন, আমি মেডিকেল কলেজে চাকরি করি। আমার বাসা থেকে কর্মস্থল অনেক দূর। প্রতিদিন আমার আসা-যাওয়া করতে প্রায় একশ টাকার মতো খরচ হয়ে যায়। আবার রিকশায় চলাফেরা করলে অনেক সময় লেগে যায়। এই অসুবিধার কথা চিন্তা করেই আমি স্কুটি চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়েছি। আমি এখন মোটামুটি স্কুটি নিয়ে চলাচল করতে পারি। স্কুটি চালানো আমার অনেক বড় একটি অর্জন।
নয়াশতাব্দী/এমএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ