গত এক সপ্তাহ সীমানা ব্যবহার করা নিয়ে বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহার ও নওগাঁর অটোরিকশা শ্রমিকদের দ্বন্দ্বে এক জেলার গাড়ি আরেক জেলায় যেতে পারছে না। ফলে যাত্রীদের মাঝপথে নেমে কিছুক্ষণ হাঁটার পর আরেক গাড়িতে চড়তে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, দ্বন্দ্বের জেরে একাধিকবার মারামারি এবং প্রায় ১৮-২০টি গাড়ির গ্লাস ভাঙচুরও করা হয়েছে। ফলে যাত্রীরা এখন দুর্ভোগ আর আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নওগাঁ জেলার সিএনজি চালিত কিছু অটোরিকশা বগুড়ার সান্তাহার পৌর শহরের হবীর মোড় হয়ে জয়পুরহাটের তিলকপুর যেতে চায়। বিষয়টি জানার পর সান্তাহারের অটোরিকশা শ্রমিকরা বাঁধা দেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের শ্রমিকদের মধ্যে মারামারি হয়। একপর্যায়ে এক জেলার চালক আরেক জেলায় গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করলেই ভাঙচুর শুরু হয়। এতে দু’পক্ষের প্রায় ২০টির মতো অটোরিকশা ভাঙচুর করা হয়েছে।
বিষয়টি সমাধান না হওয়ায় নওগাঁর অটোরিকশাগুলো পশ্চিম ঢাকারোড এলাকার তিনমাথা মোড় এবং বগুড়ার সান্তাহার পৌর শহরের অটোরিকশাগুলো সান্তাহার ক্লিনিক সংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত চলাচল করছে।
রোববার (১৩ নভেম্বর) সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এক গাড়ি থেকে নেমে আরেক গাড়িতে উঠার জন্য দল বেঁধে হেঁটে যাচ্ছেন।
অটোরিকশা যাত্রী রেজাউল ইসলাম জানান, নওগাঁ যাওয়ার জন্য সান্তাহার রেলগেটের বটতলী থেকে একটি অটোরিকশায় উঠি। অটোচালক আমাকে সান্তাহার ক্লিনিকের সামনে নামিয়ে দেন। এরপর নিরুপায় হয়ে বস্তাভর্তি মালামাল মাথায় নিয়ে ঢাকা রোড পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে সেখান থেকে নওগাঁ এলাকার একটি গাড়িতে উঠে রওনা করি। এমন অবস্থায় ভাড়া না বাড়লেও সাধারণ যাত্রীদের বেড়েছে চরম দুর্ভোগ। এ সমস্যার শেষ কবে হবে জানেন না তিনি।
রুবেল হোসেন নামের এক এইচএসসি পরিক্ষার্থী বলেন, পরীক্ষার জন্য এই সড়ক দিয়ে যেতে হয়। গাড়ি থেকে মাঝপথে নেমে দেওয়ার কারণে সময় নষ্ট হচ্ছে। দ্রুত এর সমাধান হওয়া প্রয়োজন।
সান্তাহারের অটোরিকশা চালক আতিক আশরাফ জানান, তাদের সিএনজি ও চার্জার চালিত অটোরিকশাগুলো চলছে সান্তাহার পৌর শহরের মধ্যে এবং নওগাঁরগুলো চলছে তাঁদের শেষ সীমানা পর্যন্ত। পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়ে যাত্রীদের মাঝপথে নামিয়ে দিতে হচ্ছে।
বগুড়া জেলা অটোটেম্পু, সিএনজি ও চার্জার মালিক সমিতির সভাপতি নুর ইসলাম জানান, আর যেন কোনো গাড়ি ভাঙচুর না হয়; সমিতির পক্ষ থেকে সেদিকে নজর রাখা হয়েছে। সমাধানের জন্য তাঁরা (নওগাঁ মালিক সমিতি) বসতে চাইলে আমরা রাজি আছি।
নওগাঁ জেলা সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি শহীদুল ইসলাম জানান, নওগাঁ থেকে তিলকপুর রুটে চলাচলের রাস্তাটির ফতেপুর অংশ খারাপ হওয়ায় বিকল্প পথ হিসেবে সান্তাহার হবীর মোড় হয়ে চলাচল করতে চাওয়া হয়। সেই সঙ্গে এসব গাড়িগুলো সান্তাহারের কোনো যাত্রীও তুলবে না। কিন্তু তারা সেটা করতে দেবে না। এরপর থেকে দ্বন্দ্ব শুরু। বর্তমানে নিজ নিজ সীমানায় গাড়ি চলছে। সমাধানের জন্য আমরাও বসতে রাজি আছি। সান্তাহার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুল কাদের জিলানী ও নওগাঁ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফায়সাল বিন আহসান জানান, নওগাঁ ও সান্তাহার মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে বসে বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
নয়াশতাব্দী/এফআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ