ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাঞ্ছারামপুরে টাঙানো হলো ৪ কি.মি দ. কোরিয়ার পতাকা

প্রকাশনার সময়: ১২ নভেম্বর ২০২২, ১৯:০৯

আগামী ২০ নভেম্বর শুরু হচ্ছে ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর। আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। এর মধ্যেই ফুটবল উম্মাদনায় মেতে উঠেছেন ফুটবল ভক্তরা। প্রিয়দল ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার পতাকা উড়ানোর হিড়িক পড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম খোকন তার ছেলের শখ পূরণে শহরের মধ্যপাড়ার তালতলায় অবস্থিত তার বহুতল (পাঁচতলা) বিশিষ্ট ভবনের রঙ করেছেন আর্জেন্টিনা পতাকার আদলে।

এই উম্মাদনায় যুক্ত হয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দড়িকান্দি ইউনিয়নের খাল্লা গ্রামের পশ্চিম পাড়ার আবু কাউছার মিন্টু। তিনি তার নিজ বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার লম্বা দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকা টানিয়েছেন।

পৈত্রিকভাবে পাওয়া একটি আম বাগান ও স্ত্রীর জমানো টাকা দিয়ে মিন্টু এই পতাকা বানিয়েছেন। প্রতিদিন তার এই পতাকা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন ভিড় করছেন। তার এই পতাকা টানানো এলাকায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

খাল্লা গ্রামের পশ্চিম পাড়ার হাজি আবুল হাশেমের ছেলে আবু কাউছার মিন্টু ১৯৯৮ সালে জীবন জীবিকার তাগিদে দক্ষিণ কোরিয়া যান। ২০০২ সালে ফুটবল বিশ্বকাপের আসর দক্ষিণ কোরিয়ায় হয়। সে সময় মাঠে বসে মিন্টু দক্ষিণ কোরিয়ার খেলা উপভোগ করেন।

সে সময় থেকেই সে দক্ষিণ কোরিয়া ফুটবল দলকে সাপোর্ট করতে থাকেন। সেই থেকেই সে দক্ষিণ কোরিয়া ফুটবল টিমের ভক্ত হয়ে যায়। ২০০৬ সালে মিন্টু ছুটিতে দেশে এসে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তেজখালী ইউনিয়নের তেজখালী গ্রামের পশ্চিম পাড়ার সাবিনা বেগমকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর মিন্টুর দক্ষিণ কোরিয়া দলের প্রতি ভালোবাসা দেখে সাবিনাও দক্ষিণ কোরিয়া দলের ভক্ত হয়ে যায়। ২০১৩ সালে মিন্টু প্রবাস জীবন শেষ করে দেশে ফিরে গাজীপুরে ব্যবসা শুরু করেন।

২০১৮ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের সময় মিন্টু ঢাকার বিমানবন্দর এলাকার ওভার ব্রিজে প্রায় ১ হাজার ফুট লম্বা দক্ষিণ কোরিয়া ফুটবল দলের পতাকা টানিয়েছিলেন।

চলতি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে মিন্টু ও তার স্ত্রী সাবিনা প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ করে মিন্টুর গ্রামের বাড়ি থেকে তার শ্বশুর বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার লম্বা দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকা টানান।

শুধু তাই নয়, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি ভালোবাসা স্বরূপ তারা প্রতিদিন ভাত খান দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকাযুক্ত প্লেটে, পানি পান করেন দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকাযুক্ত মগে। গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত স্থানীয়দের সহায়তায় মিন্টু পতাকাটি টানান।

এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা অনিক মিয়া বলেন, আবু কাউছার মিন্টু ভাই ১৯৯৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় যান। সেখান থেকে দেশে ফিরে আসেন ২০১৩ সালে। দেশে ফিরে আসলেও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি তার ভালোবাসা কমেনি। সে ভালোবাসা থেকেই সে এবছর বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়াকে সমর্থন করে ৪ কিলোমিটার পতাকা লাগায়। আমরা জানতে পেরেছি পতাকা বানাতে গিয়ে সে তার আম বাগান বিক্রি করেছে। আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাই।

আবু কাউছারের স্ত্রী সাবিনা বেগম বলেন, আমাদের বিয়ে হয়েছিল ২০০৬ সালে। এরপর থেকেই আমার স্বামী দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্কে অনেক কথা জানিয়েছেন। তার কাছ থেকে শুনে আমিও দক্ষিণ কোরিয়া ফুটবল দলকে সমর্থন করি। আমাকেও দক্ষিণ কোরিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি ভালবাসা থেকে চার বছর ধরে মাটির ব্যাংকে জমানো টাকা ও আম বাগান বিক্রি করে এই পতাকা বানিয়েছি।

এ ব্যাপারে আবু কাউছার মিন্টু বলেন, প্রথম যখন বিশ্বকাপ দেখেছিলাম, তখন দক্ষিণ কোরিয়া দলের আঞ্জুয়ান নামের একজন খেলোয়ার দুর্দান্ত খেলতেন। তার খেলা দেখেই আমি দলটির ভক্ত হই। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে দেশে ফিরলেও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি আমার ভালোবাসা কমেনি।

গত বিশ্বকাপেও আমি রাজধানীর বিমান বন্দর এলাকার ওভার ব্রীজে ১ হাজার ফুট লম্বাদক্ষিণ কোরিয়ার পতাকা ঝুলিয়েছিলাম। এবারের বিশ্বকাপে স্ত্রীর জমানো টাকা ও আমার আম বাগান বিক্রি করে ৫ লাখ টাকা খরচ করে ৪ কিলোমিটার লম্বা পতাকাটা বানিয়েছি। আমি চাই এই পতাকার মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ বাংলাদেশকে ভালোভাবে চিনুক ও জানুক।

নয়াশতাব্দী/এফআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ