ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

খুলনা উপকূলে বছরজুড়েই ভাঙছে বাধ

প্রকাশনার সময়: ১২ নভেম্বর ২০২২, ১৭:১৭

খুলনা উপকূলের চারটি উপজেলা নদী ভাঙ্গনের কবলে রয়েছে। একের পর এক ভাঙছে বেড়িবাধ। আর লবণ পানিতে প্লাবিত হচ্ছে গ্রামীণ জনপদ। ডুবছে ফসল, ভেসে যাচ্ছে মাছ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় অধিবাসীরা।

সূত্রমতে, খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটা সামান্য ঝড় কিংবা জলোচ্ছ্বাসে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাঁধ ভেঙে বারবার নোনা পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। প্রায় প্রতি বছর কোথাও না কোথাও বাধ ভেঙে নোনা পানিতে ভেসে যাচ্ছে বসতবাড়ি ও সম্পদ।

এদিকে, নাগরিক নেতারা বলছেন, নদী শাসন ছাড়া শুধু বাধ মেরামত করে ভাঙনের প্রতিকার মিলবে না। অপরদিকে, সরকারের বরাদ্দে বিভিন্ন স্থানে বাঁধ মেরামতের কাজও হচ্ছে।

সম্প্রতি উপকূলে দেখা দিয়েছে ভিন্ন আতঙ্ক। ঝড়-বৃষ্টি ছাড়াই ভাটির টানে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বাধ। বেশ কয়েকটি স্থানে সবল বাধ এমনকি বড় বাজেটের টেকসই বাধও ভাটির টানে ধ্বসে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। তবে এসব বাধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে।

জানা গেছে, গেল ১০ নভেম্বর কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আংটিহারা গ্রামে শাকবাড়িয়া নদীতে ভাটির টানে ওয়াপদার বেড়িবাধে আকস্মিক ভাঙনে প্রায় ২০০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়। ভোর রাতে ভাটির সময় বেড়িবাধে ভাঙন দেখে তাৎক্ষণিক স্থানীয়রা নিজেদের ঘরবাড়ি সোনালী ফসল রক্ষা করতে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে রিংবাধের কাজ শুরু করেন। সহস্রাধিক মানুষ সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দিনভর কাজ করে রিংবাধ সম্পন্ন করেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড আনুষঙ্গিক জিনিস দিয়ে সহযোগিতা করে। তবে মূল বাধ নির্মাণ না করা পর্যন্ত যে কোন মুহুর্তে জোয়ারের পানিতে সেখানকার বসতবাড়ি-সম্পদ ভেসে যাওয়ার চরম শঙ্কা বিরাজ করছে।

দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম খান বলেন, বাধটি ব্লক দিয়ে নির্মাণ করা ছিল। গত বছর বাধটিতে ফাটল দেখা দেয়। তিন মাস আগে জিও ব্যাগ ফেলে ফের সংস্কার করে পাউবো। তবে নদী শাসনের মাধ্যমে টেকসই না হওয়ায় ধ্বসে গেছে।

এর আগে ৭ নভেম্বর ভোর ৫ টার দিকে দাকোপের খরস্রোতা ঝপঝপিয়া ও পশুর নদীর ভাটার সময় পাউবো’র ৩১নং পোল্ডারের পানখালী ফেরীঘাটের পূর্ব পাশে দিকে প্রায় ১০০ মিটার বাধ মুহুর্তের মধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়।

এরআগে গত ২৪ অক্টোবর ভোরে কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়নের হরিণখোলা এলাকায় কপোতাক্ষ নদের প্রায় ৫০ মিটার বাধ ধ্বসে যায়। ধ্বসে যাওয়া বাধ এক বছর পূর্বে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। বছর না ঘুরতেই ধ্বসে যাওয়ায় কাজের মান নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছি।

সেখানকার ইউপি সদস্য আবুল কালাম শেখ বলেন, গেল বছর কপোতাক্ষ নদ থেকে বালি উত্তোলন করে বাধ নির্মাণ করা হয়েছিল। নদীর ঢেউ লেগে বাধের তলার মাটি সরে যাওয়ায় ধ্বসে গেছে। তিনি আরও বলেন, বাধটি পরিকল্পিতভাবে না করায় টেকসই হয়নি। নদী শাসনের মাধ্যমে ড্যাম্পিং ও ব্লক ব্যবহার করলে বাধ নষ্ট হত না।

পাউবো সূত্র জানায়, হরিণখোলা এলাকায় জাইকার অর্থায়নে ঠিকাদারের মাধ্যমে ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর ৬০ মিটার ক্লোজার ও ১ হাজার ৬৪০ মিটার বেড়িবাধ নির্মাণকাজ শুরু করে। পাউবো’র অর্থায়নে ওমরর্স ট্রেডিং এ্যান্ড কনস্ট্রাকশন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওই বাধ নির্মাণের দায়িত্বে ছিলেন। নির্মাণ কাজ সম্পন্নের পর ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বরে হস্তান্তর করে তারা।

অপরদিকে, খুলনার দাকোপ উপকূলের দুটি বাধ (৩২ ও ৩৩নং পোল্ডার) পুনঃনির্মাণ হয়। অথচ কাজ শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যেই আগস্ট মাসে দাকোপ উপজেলার ৩২ নম্বর পোল্ডারের একাধিক জায়গায় বাধ ধ্বসে যায়। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে আরও ৫টি এলাকা। সর্বশেষ গত ১৫ সেপ্টেম্বর বাজুয়া ইউনিয়নের চুনকুড়ি খেয়াঘাটের পাশে ১০০ মিটার বাধ (৩৩নং পোল্ডার) নদীতে ধ্বসে যায়। ২০১৭ সালে শুরু হওয়া এই কাজ শেষ হয় গত ৩০ জুন। খুলনার অংশে প্রকল্প ব্যয় হয় ৩৫০ কোটি টাকা।

গত ১৭ জুলাই ভোরে কয়রার দক্ষিণ বেদকাশীর চরামুখা কপোতাক্ষ নদের বাধের প্রায় ৩০০ মিটারের মতো ধ্বসে যায়।

পাউবো সূত্রে জানা যায়, ১৪/১ নম্বর পোল্ডারে ওই এলাকার বাধ মেরামতে ৩ কোটি ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়। কাজটিতে অর্থায়ন করে জাপান আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা (জাইকা)। দরপত্রের মাধ্যমে ‘অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওই কাজটির দায়িত্ব পায়।

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, নদীশাসন ছাড়া শুধু বাঁধ নির্মাণ করায় টেকসই হচ্ছে না। কয়েক বছরের মধ্যে সেটি আবারও নদীতে চলে যাচ্ছে। আগে নদীশাসন জরুরী।

কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর তলদেশ থেকে বেশ কয়েকটি স্থানে চরের মাটি ভেঙে নদী গর্ভে চলে গেছে। যেকোন মূহুর্তেই সেসব এলাকার বাধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। নিচের দিকে পানির চাপ বেশি পড়ায় মাটি সরে যাচ্ছে। নদী শাসন ছাড়া এগুলো ঠেকানো যাবে না।

খুলনার কয়রা, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর আওতায়। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহনেওয়াজ তালুকদার বলেন, বাধের নিচের মাটি সরে যাওয়ায় ধ্বসে নামছে। এটা যেকোন স্থানে হতে পারে। বাধের পাশ্ববর্তী নদী বেশি গভীর হলে এবং পানি কম থাকলে বাধ ধ্বসে যেতে পারে। এজন্য সমস্যা চিহ্নিত করে নদী শাসন করতে হবে।

নয়াশতাব্দী/এমএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ